বর্ধমান, 1 নভেম্বর: সাড়ে তিনশো-চারশো বছর আগেকার কথা । বর্ধমানের লাকুরডি এলাকা তখন ছিল ঘন বন-জঙ্গলে ভরা । সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী সেখানে তপস্যা করতেন । বর্ধমানের মহারাজা একদিন খবর পেয়ে পারিষদদের নিয়ে সেই সাধকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন । সাধকের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে বলতে রাজা তাঁকে কালীর প্রাণের অস্বিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তখন হঠাৎ সাধক বলে বসেন, "আজ তো অমাবস্যা । কিন্তু আজ রাতে আপনাকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখাব ।"
এদিকে, সাধক রাজাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে খুব ভয় পেয়ে গেলেন । তিনি দেবীকে ডাকতে শুরু করেন । সেইদিন রাতের দিকে রাজা যখন ফের সাধকের কাছে যান, তখন সাধক রাজাকে আকাশের দিকে তাকাতে বলেন । রাজা অমাবস্যার রাতের আকাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যান । দেখেন পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে । এরপরেই বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের সহযোগিতায় কালীমন্দির গড়ে তোলা হয় । পাশে তৈরি করা হয় একাধিক শিবমন্দির ।
কথিত আছে, সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী ঘুরতে ঘুরতে এই নির্জন স্থানকে তপস্যার জন্য বেছে নেন । একদিন পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতে করতে তিনি কালীর আদেশ পেয়েছিলেন । দেবী তাঁকে নাকি বলেন, তিনি পাশের ডোবায় আছেন ৷ তাঁকে ওই ডোবা থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার আদেশ দেন তিনি । সেই আদেশ মতো সাধক নাকি দেবীকে ডোবা থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন । অনেকদিন ধরে সাধনা করে ওই সাধক দেবীকে পেয়েছিলেন বলেই তার নাম দেওয়া হয় দুর্লভা মা । তবে দেবীর প্রকৃত মূর্তি শিলা পাথরের । একটা ছোট্ট পিতলের সিংহাসনে দেবীর মাথার পিছনে রাখা আছে । প্রতিদিন পুজোর সময় মূর্তি নামিয়ে পুজো করা হয় ।
আরও পড়ুন:Medinipur Kali Puja : জমি বিবাদে জায়গা বদল মানিকপুরের মোটা কালীর পুজোয়
মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে পঞ্চমুণ্ডির আসন আছে । পাশে সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীর সমাধি । তার উপর একটি বেলগাছ আছে । পাশেই ভোগ দেওয়ার জন্য একটা জায়গা বাঁধিয়ে রাখা আছে । প্রতিদিন পুজো শেষে আগে সেই বেদীতে ভোগ প্রসাদ রাখা হত । এলাকার শেয়ালরা সেই ভোগ প্রসাদ খেয়ে যেত । আজও পুজোর শেষে সেই ভোগ দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে ।