কলাইকুন্ডা, 28 মে : প্রধানমন্ত্রীর ডাকা রিভিউ বৈঠকে যোগ দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং যাবতীয় কাগজপত্র দিয়েই চলে গেলেন কাজের তদারকিতে । কলাইকুন্ডা রিভিউ মিটিংয়ে এরকমই ছবি ফুটে উঠল শুক্রবার দুপুরে । তবে এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও মন্তব্য না পাওয়া গেলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিপর্যয়ের সময় কোনও মন্তব্য করব না । আমি বৈঠকের ঘরেই ছিলাম সেখানে দেখেছি মুখ্যমন্ত্রী এসে কাগজ জমা দিয়েছেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন এবং কাজের তদারকি করার জন্য চটজলদি বেরিয়ে গেছেন ৷ তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ।’’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার যশের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে রাজ্য সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তিনি ওড়িশার ক্ষয়ক্ষতি দেখে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে মিটিং সেরে কলাইকুন্ডায় উপস্থিত হন । সেখানে জরুরি বৈঠকে ডেকেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, দেবশ্রী চৌধুরী, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও কয়েকজন প্রশাসনিক আধিকারিকদের । সেই বৈঠকে প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দেওয়ার কথা বললেও রাত্রে সেই বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কথা জানান তিনি ।
এরপরে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ও যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে কাজের তদারকির জন্য বেরিয়ে যান । এরপরই বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার সময় শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে পেয়ে সাংবাদিকরা বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "আমি ঘরের ভেতর মিটিংয়ের বর্ণনা দেওয়ার জন্য মিডিয়ার কাছে বলছি না । মূল বিষয় এই সময় রাজ্যের পক্ষে থাকা উচিত । প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, কোনও বিতর্ক নয়, আমরা কৃতজ্ঞ পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসাবে । আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করেছিলাম ৷ আমায় বলা হয়েছিল এখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার এলাকার বক্তব্য জানাতে । আমার কাজ আমি করেছি ৷ আমার চোখে যতটুকু দেখা, মুখ্যমন্ত্রী দেখা করে সৌজন্য জ্ঞাপন করে তাঁর বিভিন্ন জেলার কর্মসূচি রয়েছে বলে চলে গেছেন ।"
বিপর্যয়ের সময় কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করব না , বললেন শুভেন্দু অধিকারী আরও পড়ুন :15 মিনিটের সাক্ষাতে ক্ষতির রিপোর্ট পেশ মমতার, বাংলা টুইটে সাহায্যের আশ্বাস মোদির
শুক্রবার খড়গপুরের কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর যশের ফলে ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এমনটাই জানান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বারেবারে একটাই কথা বলেন, ‘‘আমি কোনও বিতর্কে যাব না । এখানে কোনও বিতর্ক কোনওরকম রাজনৈতিক আক্রমণ বা তরজার মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী যাবে না । আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি যে, আমফানের মতো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিশেষ করে নদী এবং সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি হলদিয়া থেকে বারানসী পর্যন্ত দীর্ঘ 1500 কিলোমিটার যেভাবে সুন্দর জাতীয় জলপথ তৈরি করেছেন, আগামী দিনে সেইরকম স্কিম করে স্থায়ী সমাধান করুন । সুন্দরবনকে রক্ষা করার ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করার আবেদন জানিয়েছি ।’’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত্রে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠক না যাওয়ার কথা জানান তখন মূলত কারণ হিসেবে শোনা গিয়েছিল যে শুভেন্দু অধিকারী এই বৈঠকে আসার জন্যই তিনি বৈঠকে যাবেন না । কিন্তু আজকে প্রধানমন্ত্রী এসে যখন বৈঠক শুরু করেন তখন মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে বেরিয়ে পড়েন । একের পর এক জেলা সফরের পর মমতা দুপুর নাগাদ হঠাৎই বৈঠকে উপস্থিত হন এবং সৌজন্য সাক্ষাৎকার করে তিনি বেরিয়ে যান । তিনি বৈঠকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আখেরে রাজ্যের অর্থভাণ্ডার আদায়ের একপ্রকার চেষ্টা করে গেলেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের ।