শালবনি, 22 অক্টোবর : বিজলি মুর্মু ৷ শালবনি থানার চকতারিণীর বাসিন্দা ৷ একসময়ের দাপুটে খেলোয়াড় ৷ সাঁওতাল নাচেও পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ৷ কিন্তু আজ তিনি টোটোচালক ৷ সংসার চালাতে টোটোই এখন একমাত্র ভরসা বিজলির ৷
মাত্র 12 বছর বয়সে আদিবাসী সমাজের নিয়মে বিয়ে হয় বিজলির ৷ ছোটোবেলা থেকে খুব ভালো দৌড়াতেন ৷ বহু জায়গায় পেয়েছেন সংবর্ধনা ৷ রাজ্যের হয়ে বিজলি অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন জায়গায় ৷ বিয়ে যে কোনও বাধা তৈরি করতে পারে না, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি ৷ রাজ্যের হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে পাঁচবার অংশ নেওয়ার পর বিজলি প্রথমবারই দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেন ৷
ছেলের স্কুলে অভিভাবকদের দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে তাঁর এই দৌড়ের ফের শুরু হয় ৷ তারপর থেকে এগিয়ে গিয়েছেন ৷ দৌড়ের পাশাপাশি সাঁওতাল নাচেও অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন ৷ নাচের মধ্যে ব্যালেন্সের হাঁড়ি নিয়ে নাচ করে ফের প্রচারে চলে আসেন বিজলি ৷ শুধু রাজ্য বা জেলায় নয়, রাজ্যের বাইরেও নাচের জন্য বিজলির কাছে ফোন আসতে থাকে ৷ বিভিন্ন সংবাদপত্রেও উঠে আসে তাঁর নাম ৷
আদিবাসীদের হয়ে নাচের জন্য তিনি শালবনি থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলাদেশেও ৷ সব ঠিকই চলছিল ৷ সবকিছুই সুন্দর ছিল ৷ কিন্তু তারপরই ছন্দপতন ৷ এক দুর্ঘটনায় আহত হন তাঁর স্বামী ৷ তারপরই সংসারের ভার এসে পড়ে বিজলির উপর ৷ তারপর থেকে নাচ বা খেলা কোনওটাই চালিয়ে যেতে পারেননি ৷ ইতি টানতে হয় নিজের সমস্ত শখ-আহ্লাদে ৷ সংসার চালাতে শুরু করেন টোটো চালানো ৷ লোন নিয়ে কিনে ফেলেন একটি টোটো ৷ শুরু করেন টোটো চালানো৷
এলাকায় যাতায়াতের জন্য সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা বিজলির টোটো ৷ তাঁর দুই ছেলে ৷ একজন ওড়িশায় ফুটবল খেলে ৷ আর একজন মেদিনীপুরে পড়াশোনা করছে মাস্টার ডিগ্রিতে ৷ সকাল হলেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিজলি ৷ নিজের অবস্থা নিয়ে বলেন, "নাচ করেছি ৷ দৌড়ে সুনাম অর্জন করেছি ৷ কিন্তু, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর সব বদলে গেল ৷ সংসারের হাল ধরতে টোটো চালাতে শুরু করলাম ৷ এখন এটাই আমাদের পরিবারের উপার্জনের মাধ্যম ৷ সবাই আমাকে চেনে ৷ রাস্তাঘাটে সম্মান করে ৷ আমার কৃতিত্বের কথা আলোচনা করে ৷ কিন্তু, আমাকে কেউ সাহায্য করে না ৷"