দুর্গাপুর , 16 জুলাই : দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল অবস্থা রাস্তার । খানাখন্দে ভরা । কিন্তু রাস্তা সংস্কারের নামগন্ধ নেই । বেহাল দশার শুরু টাউনশিপের এস এন ব্যানার্জি রোড থেকে । নেতাজি সুভাষ বোস রোড হয়ে যে রাস্তাটি জে সি বোস রোডের দিকে গেছে তার চিত্রও একই । দুর্গাপুর নগরনিগম ও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের টালবাহানায় রাস্তা সংস্কারের কাজ তিমিরেই । কবে কাজ শুরু হবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউই । দুর্গাপুর নগরনিগমের পূর্ত দপ্তরের মেয়র পারিষদের অভিযোগ, "দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধিকারিকরা সরাসরি BJP-র হয়ে কাজ করেছেন ।"
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বহু কর্মী থাকেন টাউনশিপ এলাকার আবাসনে । এই এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কার থেকে শুরু করে নর্দমা পরিষ্কার সমস্ত পরিষেবাই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তরফে দেওয়া হয় । তবে টাউনশিপের আবর্জনা দুর্গাপুর নগরনিগমের পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্ন করা হয় । দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানাকে দুর্গাপুর নগরনিগমকে ট্যাক্স দিতে হয় । টাউনশিপের এস এন ব্যানার্জি রোড থেকে শুরু হয়ে জে সি বোস রোড পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দশ কিলোমিটার রাস্তা নতুন করে সংস্কার হওয়ার কথা । মাঝে পড়ছে নেতাজি সুভাষ বোস রোড । বিশেষ করে এস এন ব্যানার্জি থেকে নেতাজি সুভাষ রোড পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা একেবারে বেহাল । দীর্ঘ প্রায় 34 বছর এই রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত । প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে । প্রায় তিন বছর আগে থেকে শোনা যাচ্ছিল দুর্গাপুর নগরনিগমের পক্ষ থেকে প্রায় 10 কোটি টাকা ব্যয়ে এই রাস্তা নতুন করে সংস্কার হতে চলেছে । কিন্তু আজ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরুই হয়নি ।
গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করত এ-জ়োন রুটের মিনিবাস ,বীরভূমের রাজনগর থেকে বেনাচিতি রুটের বাস, এমনকী পাণ্ডবেশ্বর-বেনাচিতি রুটের বাসও । বেহাল অবস্থার জন্য প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে । গুটিকতক অটো-টোটো ছাড়া এই রাস্তা দিয়ে আর কোনও যানচলাচল করতে পারছে না । স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা খারাপ হওয়ার মূল কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভারী মালবোঝাই লরি চলাচল । এখনও এই লরিগুলি চলাচল করছে এই রাস্তা দিয়ে । আর তার জেরেই দিন দিন খারপ হচ্ছে রাস্তার হাল । প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় জানিয়েছেন , "দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পক্ষ থেকে এই রাস্তা দুর্গাপুর নগরনিগমকে দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য । অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই কারণে এই রাস্তা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পক্ষ থেকে সংস্কার করা হবে না । দুর্গাপুর নগরনিগমই এই রাস্তা সংস্কার করবে।" স্থানীয় 12 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হীরালাল সাহার অভিযোগ, "প্রতিদিন ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে । আমরা শুনেছি কর্পোরেশনের টেন্ডার হয়ে গেছে । কাউন্সিলররা মেয়রের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন । হয়তো লকডাউনের জেরেই আটকে আছে কাজ ।" দুর্গাপুর নগরনিগমের রাস্তার দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা যে পরিমাণ অর্থ আমাদের দেয় তাতে 10 কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তা মেরামত করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই । তাছাড়া ওই রাস্তার পাশের আবাসানে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্মীরা থাকেন । রাস্তায় এত ধুলো উড়ছে আবাসনের বাসিন্দারা দরজা-জানালা খুলতে পারছেন না । ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের এবং তাঁদের পরিবারকে ভালো রাখার দায়িত্ব দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের।" এছাড়াও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার এক শ্রেণির আধিকারিক লোকসভা নির্বাচনে BJP প্রার্থীকে জেতাতে সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অমিতাভবাবু।
দুই কর্তৃপক্ষের গা ঠেলাঠেলিতে থমকে রাস্তা সংস্কারের কাজ । মেয়র পারিষদ সদস্যের কথা অনুযায়ী DSP কর্তৃপক্ষ এই রাস্তা তৈরি করবে । আবার রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার কথায় দুর্গাপুর নগরনিগমকে বলা হয়েছে টাউনশিপের পেরিফেরিরাল রাস্তা তৈরির কথা । তাহলে এই রাস্তা সংস্কার করবে কারা ? প্রশ্ন উঠলেও উত্তর মিলছে না ।