পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Mrs Chatterjee Vs Norway: বাস্তবের 'মিসেস চ্যাটার্জি'কে মনে রাখতে চান না কুলটির বাসিন্দারা

বাস্তবের 'মিসেস চ্যাটার্জি' অর্থাৎ সাগরিকা চক্রবর্তী (ভট্টাচার্য)-কে মনে রাখতে চান না কুলটির বাসিন্দারা ৷ তাঁর রানি মুখোপাধ্যায়ের মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে (Mrs Chatterjee Vs Norway) দেখতেও আগ্রহী নন ৷ কিন্তু কেন ?

Mrs Chatterjee Vs Norway ETV Bharat
মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে

By

Published : Mar 17, 2023, 7:41 PM IST

Updated : Mar 17, 2023, 8:16 PM IST

আসানসোল, 17 মার্চ: শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত চলচ্চিত্র মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে (Mrs Chatterjee Vs Norway)। নরওয়েতে থাকাকালীন ভারতীয় দম্পতির কাছ থেকে নরওয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি কেড়ে নিয়েছিল তাঁদের দুই সন্তানকে । সেই কেড়ে নেওয়া সন্তান দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মায়ের কাছে ফিরে এসেছিল । সেই ঘটনার 12 বছর পর এই চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে ।

বাস্তবের যে চরিত্র নিয়ে এই চলচ্চিত্র, সেই মিসেস চ্যাটার্জি থুড়ি সাগরিকা চক্রবর্তী (ভট্টাচার্য) আসানসোলের কুলটির (Asansol News) বৃন্দাবন গলির ভট্টাচার্য পরিবারের গৃহবধু ছিলেন । কিন্তু কুলটির মানুষ মনে রাখতে চান না সাগরিকাকে (Real Mrs Chatterjee)। তাই তাঁরা রানির ফিল্মটি দেখবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে । তাঁদের কাছে অনেক বড় সাগরিকার চেয়েও, তাঁর স্বামী অনুরূপের ভাই অরুণাভাষের লড়াই । যেভাবে বাচ্চাদুটিকে অরুণাভাষ দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন, সেই লড়াইয়ের কতটা ফিল্মে ফুটে উঠবে, তা নিয়েই কুলটিবাসীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ।

ঠিক কী হয়েছিল ?

2007 সালে কুলটির যুবক অনুরূপ ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী সাগরিকা কর্মসূত্রে নরওয়ে পাড়ি দেন । নরওয়ের স্ট্যাভাঙ্গারে থাকতেন তাঁরা । 2008 সালে জন্ম হয় তাঁদের প্রথম সন্তান অভিজ্ঞানের । অভিজ্ঞান জন্ম থেকেই অটিজম আক্রান্ত । 2010 সালে জন্ম হয় অনুরূপ ও সাগরিকার দ্বিতীয় সন্তান ঐশ্বর্যের । অভিজ্ঞানের যখন 3 বছর বয়স আর ঐশ্বর্যের 1 বছর, তখন 2011 সালের মে মাসে নরওয়ের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বার্নভার্ন সন্তান দুটিকে অনুরূপ ও সাগরিকার কাছ থেকে কেড়ে নেয় ।

ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী সন্তানকে যদি সঠিক অর্থে লালিত করতে ব্যর্থ হন বাবা মা, কিমবা শিশু যদি অবহেলিত হয়, তাহলে সেই শিশুদের বলপূর্বক নিয়ে নেয় সরকার । এরপরেই শুরু হয় লড়াই । একদিকে অনুরূপ ও সাগরিকা । অন্যদিকে এ দেশ থেকে অনুরূপের ভাই অরুণাভাষ । শেষ পর্যন্ত দু দেশের মধ্যে কুটনৈতিক আলোচনা, আইন ও নিয়ম মেনে নরওয়ের উচ্চ আদালত রায় দেয়, বাবা-মায়ের কাছে ফেরত যাবে না অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্য । বরং কাকা অরুণাভাষ যদি পরীক্ষায় পাশ করেন, তবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে শিশু দুটিকে ।

আরও পড়ুন:দর্শকদের 'ভুল' তথ্য দিচ্ছে 'মিসেস চ্যার্টাজি ভার্সেস নরওয়ে', ক্ষুব্ধ রাষ্ট্রদূত হ্যান্স জ্যাকব

শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াইয়ে 2012 সালের এপ্রিল মাসে অরুণাভাষের হাতে তুলে দেওয়া হয় শিশু দুটিকে । তাঁদের নিয়ে অরুণাভাষ কুলটিতে ফিরে আসেন । 18 বছর পর্যন্ত শিশু দুটির তাঁর কাছেই থাকার কথা ছিল । ততদিনে অনুরূপ ও সাগরিকার দাম্পত্য জীবনে ছাড়াছাড়ি হয়েছে । সাগরিকাও দেশে ফিরে আসেন । এরপর মাতৃত্বের অধিকার ও চাইল্ড লাইনের শিশু আইন মেনে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যকে 2013 সালের জানুয়ারিতে কুলটির ভট্টাচার্য পরিবার থেকে নিয়ে যান সাগরিকা ।

অনুরূপ থেকে যান নরওয়েতেই । কয়েকবছর আগে অনুরূপের বাবা-মা ও অরুণাভাষ ভট্টাচার্য কুলটি ছেড়ে চলে গিয়েছেন । আর যোগাযোগ তেমন নেই । কিন্তু যে ভাবে বারবার অশান্তি করে সাগরিকা শিশু দুটিকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন, তা মনে রাখতে না চেয়েই অনেকে রানি মুখোপাধ্যায়ের ছবিটি দেখতে আগ্রহী নন । বরং কুলটির বৃন্দাবন গলির বাসিন্দাদের মতে, অরুণাভাষের লড়াই ছাড়া শিশুদুটিকে নরওয়ে থেকে ফিরিয়ে আনা যেত না ।

কেমন ছিল সেই লড়াই ?

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় জানা যায়, ভাইপো ও ভাইঝিকে আনতে নরওয়ের স্যাঁতসেঁতে স্ট্যাভেঞ্জার শহরে পৌঁছে অরুণাভাষ দেখেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ শহর সেটি । আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, দাদা বা বৌদি - কারও সঙ্গে থাকতে পারবেন না অরুণাভাষ । এমনকী দেখা করা, আলাপ আলোচনা করাও চলবে না । প্রথমে মাসখানেক একটি হোটেলে ছিলেন । কিন্তু সেখানে খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে ভারতীয় দূতাবাসের সাহায্যে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন । ছোট্ট কাঠের বাড়ি । সেই বাড়ির নিচের তলা শুধু নয়, সমতলের নিচে ঘর হওয়ায় আলো-বাতাস ঢুকত না । একটিই মাত্র বাথরুম ।

অত্যধিক বাস ভাড়া সেখানে । প্রতিদিনই তাই পায়ে হেঁটে কাজ সারতে হয়েছে । প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা করে হেঁটে কখনও আদালতে কখনও সেই শিশু সংস্থার কাছে যেতে হয়েছে । খাঁড়াই পথ দিয়ে হেঁটে উঠতে গিয়ে নাক দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়েছে । জানা গিয়েছে, অরুণাভাষ একটি মাত্র জ্যাকেট নিয়ে গিয়েছিলেন নরওয়েতে । একটি পাউরুটির দাম ছিল সেখানে 900 টাকা । তাই খেয়ে কোনও মতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছেন ।

অন্যদিকে, ওই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি জানিয়েছিল, বারে বারে পরীক্ষা দিতে হবে অরুণাভাষকে । তাঁর চোখে মুখে যেন কোনও ক্লান্তি না থাকে । তাঁকে হাসতে হবে বাচ্চাদের সামনে । ময়লা জামা কাপড় পড়ে আসা যাবে না । তাই একটি জ্যাকেট প্রতিদিন ধুয়ে পরে যেতেন অরুণাভাষ । একটি সম্পূর্ণ রাত অরুণাভাষকে দুটি শিশুর সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয় । পর্যবেক্ষণ চলে । তাতে পাশ করার পরেই অরুণাভাষের হাতে বাচ্চা দুটিকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরওয়ের ওই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সংস্থা ।

কিন্তু কুলটিবাসীদের মতে, অরুণাভাষ ভট্টাচার্যের এই লড়াই হয়তো বা ফিল্মে উঠে আসবে না । কারণ যেভাবে ট্রেলার দেখানো হয়েছে, তাতে সাগরিকাকেই সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে । অথচ অরুণাভাষের এই লড়াইয়ের পরেও সাগরিকা যে ভাবে ভট্টাচার্য পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বাচ্চা দুটিকে নিজের হস্তগত করেছিলেন, তা মনে রাখতে চাইছেন না কুলটিবাসী । সেই কারণেই তাঁরা অনেকেই এই ছবি দেখতে চান না ।

Last Updated : Mar 17, 2023, 8:16 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details