সাগরদিঘি, 14 ফেব্রুয়ারি : বাহালনগর, চাঁদপাড়া, কাবিলপুর ৷ সাগরদিঘি ব্লকের এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে কাশ্মীরে আপেল চাষ করতে যেত শ্রমিকরা । পেট যে বড় বালাই৷ আর এই আপেল চাষ করতে গিয়ে প্রাণ খুইয়েছিলেন বাহালনগরের পাঁচ শ্রমিক । 29 অক্টোবর, 2019 ৷ সেদিন কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় বাহালনগরের শেখ নইমুদ্দিন, শেখ মুরশলিম, শেখ রফিকুল, শেখ রফিক ও শেখ কামারুদ্দিনের শরীর । আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকদের মধ্যে । কাশ্মীরে আপেল চাষের কাজ ছেড়ে নিজেদের গ্রামে ফিরতে শুরু করে বাহালনগর, চাঁদপাড়ার শ্রমিকরা । এবার সেই সাগরদিঘিতেই হতে চলেছে আপেলের চাষ ।
সাথী শ্রমিকদের প্রাণ যাওয়ার পর সেদিন আতঙ্ক নিয়ে কাশ্মীর থেকে গ্রামে ফিরেছিল শ্রমিকরা ৷ পুঁজি বলতে ছিল শুধু আপেল চাষের অভিজ্ঞতা ৷ সেই অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করেই আপেল চাষ শুরু হয়েছে সাগরদিঘিতে ৷ উদ্যোক্তা ব্লক প্রশাসন । প্রশাসনের আশা, এই আপেল চাষ সাফল্যের মুখ দেখলে পরিযায়ী তকমা ঘুচবে এলাকার শ্রমিকদের । উপার্জনের তাগিদে তাদের আর ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হবে না । বাড়িতে থেকেই তারা ফলাতে পারবে উপত্যকার ফসল ।
ঘটনার কিছুদিন পর মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর্থিক সাহায্য ৷ সেই অর্থ তো পেল নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো ৷ আর যারা আতঙ্কে ফিরে এসেছিল তাদের কীভাবে চলবে ? পেট চালানোর জন্য যে দরকার উপার্জনের ৷ যা দিয়ে বছরভর সংসার চলবে ৷ ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যাবে, পেটপুরে খেতে পারবে দু'বেলা ৷ শ্রমিকদের দুর্দশার কথা সেদিন শুনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এখানেই কিছু করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক ৷ মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আর্জি জানিয়েছিল শ্রমিকদের পরিবারগুলো ৷ অভাব-অভিযোগ শুনে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । সাগরদিঘি প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেই এখানে আপেল চাষের প্রস্তাব দেন ৷ সেই মতো আসে নির্দেশ ৷ শুরু হয় কাজ ৷
ঠিক হয় আপেল চাষের জন্য সাগরদিঘি ব্লকের তিন হেক্টর জমি বেছে নেওয়া হবে । পরিকল্পনা মতো নির্বাচন করা হয় জমি ৷ ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় জমি তৈরির কাজ ৷ সরকারি দুই আধিকারিককে মিরাটে আপেল চাষের প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয় । সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইতালিয়ান আন্না প্রজাতির আপেল চাষ করা হবে ।