বহরমপুর, 14 জুন : তিন মাস টাঙ্গার চাকা ঘোরেনি । ঘোড়ার খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন টাঙ্গা চালকরা । ইতিমধ্যে খাবারের অভাবে মারা গেছে বেশ কয়েকটি ঘোড়া।
তিন মাস বন্ধ টাঙ্গা, ঘোড়ার খাবার জোগাড় করতে সমস্যায় চালকরা
প্রথমে CAA-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ । তারপর কোরোনা সংক্রমণ ও লকডাউন । এর জেরে আসেনি পর্যটক । ফলে সমস্যায় পড়েছেন মুর্শিদাবাদের টাঙ্গাচালকরা ।
এক সময় ঘোড়ার খুরের আওয়াজ নবাব নগরীর ঐতিহ্য বহন করত । বহরমপুরের আনাচে কানাচে কান পাতলে শোনা যেত সেই শব্দ । আর পাওয়া যেত ঘোড়ার গলায় ঝোলানো ঘণ্টার আওয়াজ । সাজানো-গোছানো টাঙ্গা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরত শহরের রাস্তায় । কিন্তু কয়েক মাসে ছবিটা বদলে গেছে । পর্যটক না আসায় টাঙ্গা চালকরা চরম মমস্যায় পড়েছেন। রোজগার না থাকায় একদিকে যেমন সংসার চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন পাশাপাশি ঘোড়ার খাবার জোগাড় করতেও হাত পাততে হচ্ছে অন্যের কাছে । ইতিমধ্যে খাবারের অভাবে বেশ কয়েকটি ঘোড়া মারা গেছে বলেও জানা গেছে । এদিকে মুর্শিদাবাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলি না খোলায় টাঙ্গা চালকদের সমস্যা আরও বেড়েছে । তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন রাজ্য, কেন্দ্র ও স্থানীয় প্রসাসনের দিকে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দিন গুজরান অসম্ভব হয়ে পড়েছে টাঙ্গা চালকদের। বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন অনেকেই। কিন্তু বহু দিনের সঙ্গী তাঁদের রুজি-রুটির সহায়ক ঘোড়াগুলির কী হবে? এই চিন্তাই এখন ভাবাচ্ছে তাঁদের।
ইতিহাসের টানে পর্যটকরা মুর্শিদাবাদে এসে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ান । পর্যটকদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকত 250 থেকেই 300 টাঙ্গা । দুটি ইউনিয়ন এই গাড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রায় 300 পরিবার রোজ তাকিয়ে থাকে পর্যটকের দিকে।
ডিসেম্বরে CAA-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় থেকেই সমস্যায় পড়েছেন টাঙ্গা চালকরা । তারপর কোরোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে তা আরও দ্বিগুন হয় । গত তিন মাস আসেনি কোনও পর্যটক । টাঙ্গা চালকদের দাবি, মোটরগাড়ি বসে থাকলে তাঁদের খাবার লাগে না। কিন্তু টাঙ্গা বসে থাকলেও ঘোড়ার খাবার জোগাতে হয় । টাঙ্গাচালক নওশাদ শেখ জানিয়েছেন , তাঁদের দু'টো পেট। এক নিজের সংসার আর দুই ঘোড়া। টাঙ্গা চলুক বা না চলুক রোজ ঘোড়ার খাবারের জন্য ছোলা ,গুড়, ধানের তুষ ইত্যাদি নিয়ে 200 টাকা খরচ । রোজগার বন্ধ। সংসার চালানো দূরের কথা ঘোড়ার খাবার জোগাড় করতেই এখন তাঁরা নাজেহাল ।
শহরের রাস্তায়, আমবাগানে, টাঙ্গাস্ট্যান্ড এখন বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে টাঙ্গাগুলি। CITU প্রভাবিত টাঙ্গা ইউনিয়নের সভাপতি মনু শেখ বলেন, “হাজারদুয়ারি খুললেও আতঙ্কে মানুষ আসবে না । রাজ্য, কেন্দ্র ও স্থানীয় প্রশাসন না দেখলে টাঙ্গা চালকদের ভেসে যেতে হবে । ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অবশ্য টাঙ্গা চালকদের এখন কিছু কিছু সাহায্য করা হচ্ছে। ইউনিয়নের ভাঁড়ার তলানিতে এসে ঠেকেছে । তাই আগামী দিনে টাঙ্গা চালক এবং ঘোড়ার পেট কীভাবে ভরবে তা ভাবাচ্ছে তাদের। কারও জানা নেই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে। হতাশা ও আশঙ্কা এখন বর্ষার মেঘের মতো ঘন হয়েছে নবাব নগরীতে।"