মালদা, 17 এপ্রিল: কলকাতা থেকে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শিলিগুড়ি যাচ্ছেন ৷ কালিয়াচক পেরোতেই চোখে পড়বে, রাস্তার দু’ধারে ইয়া বড় বড় প্লাস্টিকের বস্তা ডাঁই করে রাখা ৷ বস্তাগুলির আয়তন বিশাল ৷ তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যে নাকে দুর্গন্ধও ঢোকে ৷ আসলে সেই বস্তায় রয়েছে আমার-আপনার বাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বর্জ্য ৷ এ বার সেই বর্জ্যের দুর্গন্ধেই ঈদের খুশবু খুঁজছেন কালিয়াচকের হাজার পঁয়ত্রিশ মানুষ ৷
এই মুহূর্তে শুধু এই রাজ্য কেন, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বর্জ্য প্লাস্টিকের হাবে পরিণত হয়েছে মালদার কালিয়াচক ৷ রাস্তায় ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে এখানে বছরে অন্তত আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে ৷ মূলত সুজাপুর এলাকায় দু’দশক ধরে এই ব্যবসা ধীরে ধীরে বেড়েছে ৷ এখনও বাড়ছে ৷ এই ব্যবসার উপর নির্ভর করে রয়েছেন অন্তত 35 হাজার মানুষ ৷ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক ভাত জোগাচ্ছে তাঁদের ৷ দিচ্ছে ভবিষ্যতের ভরসাও ৷
কী করে হচ্ছে এই ব্যবসা ? মালদা-সহ বিভিন্ন জেলা, রাজ্য, এমনকী উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য প্লাস্টিক সুজাপুরে নিয়ে আসা হচ্ছে ৷ প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ মূলত করেন কাগজ কুড়ুনি এবং বাড়ির পুরনো জিনিসের ক্রেতারা ৷ তাঁরা মানুষের বাড়ি অথবা রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক নিজেদের এলাকার ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে দেন ৷ ঠিকাদাররা তা পাঠিয়ে দেন মালদায় ৷ সুজাপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা ৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বর্জ্য প্লাস্টিক সেখানে প্রথমে বাছাই করা হয় ৷ তারপর ধুয়ে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে কিছু প্লাস্টিক রাজ্যের বিভিন্ন কারখানায় পাঠানো হয় ৷ বাকি প্লাস্টিকের টুকরো শোধন করে, শুকিয়ে, গলিয়ে এলাকার কারখানাগুলিতেই বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয় ৷
আম, লিচু, রেশমের পর প্লাস্টিক শিল্প এই মুহূর্তে মালদা জেলার অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে ৷ অথচ করোনা হানা দেওয়ার পর প্রায় তিন বছর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই শিল্প ৷ কারখানাগুলিতে তালা পড়ে গিয়েছিল ৷ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পেট চালাতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ করোনার হামলা প্রতিহত করে দেশের অর্থনীতির চাকা গড়াতে শুরু করলেও তার অভিঘাতে আরও একটা বছর এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছিল ৷ অবশেষে চলতি বছর থেকে ফের এই শিল্পের চাকা স্বাভাবিকভাবে গড়াতে শুরু করেছে ৷ হাসি ফুটেছে শ্রমিকদের মুখে ৷ খুশি মালিকপক্ষও ৷ সবারই বক্তব্য, এ বার তাঁরা সত্যিকারের খুশির ঈদ পালন করবেন ৷