ভালো রাস্তা ফের সংস্কারের অভিযোগ মালদায় মালদা, 20 ফেব্রুয়ারি: প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা দিব্যি বহাল ৷ অথচ ওই রাস্তারই তিন কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে আগে তৈরি দেড় কিলোমিটার রাস্তাও ৷ রাস্তার কাজের জন্য ভোট বাজারে প্রায় দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে জেলা পরিষদ ৷ রাস্তার কাজের সূচনা করেছেন স্বয়ং জেলা পরিষদের সভাধিপতি ৷ কিন্তু যে রাস্তার অর্ধেক কাজ আগেই হয়ে রয়েছে, সেই রাস্তারই সংস্কার হচ্ছে কীভাবে ? বিরোধীরা বলছে, তৃণমূলকে ভোটের খরচ জোটাতে হবে ৷ তাই এভাবেই চুরি চলবে৷ চুরির টাকা যাবে কালীঘাট পর্যন্ত ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Elections 2023) মুখে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপান উতোর শুরু হয়েছে মালদার রতুয়া-1 ব্লকে ৷ এই ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর সাহাপুর থেকে ধোবিমোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করতে শুরু করেছে মালদা জেলা পরিষদ (Malda Road Renovation) ৷ সম্প্রতি সভাধিপতি এই কাজের সূচনা করলেও রাস্তার কোথাও এই প্রকল্পের বোর্ড লাগানো নেই ৷ রাস্তায় মাটি ফেলার কাজও শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু আগে থেকে তৈরি রাস্তার কোথাও হাত পড়েনি ৷ রাস্তাটি সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গেলে বাহারাল থেকে রতুয়া পর্যন্ত যাতায়াতের বিকল্প রাস্তা পাবেন স্থানীয় মানুষজন ৷
মালদার রতুয়ায় রাস্তা সংস্কার রাস্তা নিয়ে এক গ্রামবাসী সমর মালির বক্তব্য, “রাস্তাটা তিন কিলোমিটার ধরা হয়েছে ৷ তার মধ্যে বেশ কিছুটা ঢালাই রাস্তা আগেই তৈরি হয়ে আছে ৷ এখন এক থেকে দেড় কিলোমিটার কাজ হতে পারে ৷ এই রাস্তাটা তৈরি হলে বাহারাল থেকে রতুয়া যাতায়াত করার জন্য মানুষ বিকল্প রাস্তা পাবে ৷ বলা হয়েছিল, পিচ আর ঢালাই, দু’ভাবেই রাস্তা তৈরি হবে ৷ কিন্তু দেখছি, শুধু পাথর মেশানো মাটিই পড়ছে ৷ পাথর পর্যন্ত ফেলা হয়নি ৷ রাজনীতি ওদেরই হাতে, কী করবে ওরাই জানে৷ ওরা শুধু বলছে, আমরা যেন রাস্তা তৈরিতে বাধা না দিই ৷”
মালদার রতুয়ায় রাস্তা সংস্কার সিপিএমের (CPIM) রতুয়া-1 এরিয়া কমিটির সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলছেন, “তৃণমূল দলটাই হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত, চোর আর লুটেরাদের দল ৷ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রতিটি জায়গায় এখন চুরি চলছে ৷ এই রাস্তাটি তৈরির দায়িত্বে রয়েছে জেলা পরিষদ ৷ বরাদ্দ দু’কোটি টাকারও বেশি ৷ কাগজ বলছে, রাস্তাটির দৈর্ঘ্য 2.8 কিলোমিটার ৷ কিন্তু তার বেশিরভাগটাই ঢালাই হয়ে রয়েছে ৷ অর্থাৎ সামান্য কাজ করে বরাদ্দের পুরো টাকা এরা চুরি করবে ৷ পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসার জন্য কাজের গতিও শ্লথ ৷ এরা মানুষকে দেখাতে চাইছে, তারা গ্রামের স্বার্থে কাজ করছে ৷ আর এই চুরির টাকার ভাগ একেবারে নিচুস্তর থেকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান, এমনকি কালীঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে ৷ তবে আমরা এত টাকা এভাবে লুট হতে দেব না ৷”
বিজেপির (BJP) উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুকান্ত সিংহ বলেন, “রাস্তাটার বয়স প্রায় 15 বছর ৷ এতদিন কোনও সংস্কার হয়নি ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে মানুষকে দেখাতে এই কাজ শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু কাজের কোনও ফলক লাগানো হয়নি ৷ মানুষ জানতে চাইলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ৷ আমরা শাসকদল সহ প্রশাসনিক কর্তাদের আবেদন জানাচ্ছি, রাস্তার কাজগুলি যেন ভালোভাবে করা হয় ৷ পঞ্চায়েত ভোট সামনে চলে আসায় এরা ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে কাজ করছে ৷ যাতে কাটমানির টাকায় ভোট করা যায় ৷”
মালদার রতুয়ায় রাস্তা সংস্কার যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি আবু তাইয়ুব মহম্মদ রফিকুল হোসেন ৷ তিনি বলেন, “ওই রাস্তাটি রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের টাকায় সংস্কার করা হচ্ছে ৷ নাবার্ড থেকে ধার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ফান্ডের টাকায় কাজ করাচ্ছেন ৷ একটা বড় রাস্তার স্কিম ধরা হলে তার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির তৈরি কিছুটা অংশ থাকতে পারে ৷ এস্টিমেট তৈরির সময় সেই কাজ বাদ দেওয়া হয় ৷ কোনও সমস্যা না দেখা দিলে দ্রুত ওই রাস্তাটির কাজ শেষ করা হবে ৷ এখানে কাটমানির কোনও বিষয় নেই ৷ বিরোধীদের বিরোধিতা ছাড়া কোনও কাজ নেই ৷ ওরা আমাদের সুপরামর্শও দিতে পারে না ৷ নিজেরা এতদিন যা করেছে, সেটাই এখন দেখে বেড়ায় ৷”
আরও পড়ুন:দোকান চালাতে সমস্যা, তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্নাঘর গুঁড়িয়ে দিলেন মালিক