ফল প্রকাশের ছ'দিন পর উদ্ধার তিনটি ব্যালট বাক্স মালদা, 18 জুলাই: পঞ্চায়েতের ভোট গণনা হয়েছে 11 জুলাই ৷ গণনা শেষে জয়ী প্রার্থীদের শংসাপত্রও দিয়ে ফেলেছে প্রশাসন ৷ যদিও আদালতের নির্দেশের পরেই সেসব শংসাপত্রের বৈধতা সুনিশ্চিত হবে ৷ কিন্তু গণনার ছ’দিন পর গাজোলের ডিসিআরসি থেকে তিনটি সিল করা ব্যালট বাক্স উদ্ধার করল প্রশাসন ৷ এ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি ৷ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দলীয় সাংসদের নেতৃত্বে গাজোলে জাতীয় সড়কও অবরোধ করেন গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মীরা ৷ বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা ৷ এ দিকে এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল ৷ তবে তাদের দাবি, যে তিনটি ব্যালট বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে বাতিল ব্যালট পেপার রাখা আছে ৷
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি শুভময় বসু জানান, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি মালদার বরিন্দ এলাকা অর্থাৎ গাজোল, বামনগোলা, হবিবপুর ও পুরাতন মালদায় পর্যদুস্ত হয়েছে ৷ সমর্থকরাও বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে হারের ভয়ে খগেন মুর্মু কখনও বামনগোলা, কখনও গাজোলে নাটক সংগঠিত করছেন ৷ তাঁদের কাছে খবর আছে, গাজোল ডিসিআরসি থেকে যে তিনটি বাক্স উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি বাতিল ভোটের বাক্স ৷ খগেন মুর্মু এখন সেই বাক্সগুলিকে নিয়ে হইহই করার চেষ্টা করছেন ৷ এতে কিছু লাভ হবে না ৷ তবে প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল ৷
8 জুলাই ভোটের পর সেই রাতেই স্থানীয় সাংসদ খগেন মুর্মু দাবি তুলেছিলেন, গাজোলের সালাইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের 83 নম্বর বুথের গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ব্যালট বাক্স উধাও ৷ ভোটকর্মীরা তিনটি বাক্স ডিসিআরসিতে জমা দিলেও সেখান থেকে স্ট্রং রুমে আসার পথে তিনটি বাক্সই গায়েব হয়ে গিয়েছে ৷ তিনি দাবি করেছিলেন, প্রশাসনের মদতে তিনটি বাক্সই তৃণমূলের ঘরে চলে গিয়েছে ৷ ছাপ্পা ব্যালট ভরার পর বাক্সগুলিকে কৌশলে স্ট্রং রুমে নিয়ে আসা হবে ৷ সেই বাক্সগুলি যাতে কিছুতেই স্ট্রং রুমে না আসে তার জন্য সেই রাত থেকেই স্থানীয় বিধায়ক সহ দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে তিনি স্ট্রং রুমের সামনে পাহারায় বসেন ৷ পাহারাদারি চলে পরদিন বিকেল পর্যন্ত ৷ শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্তারা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলে তিনি অবস্থান প্রত্যাহার করেন ৷ অবশ্য এই ঘটনার জেরে 83 নম্বরের জীবনপুর বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷
আরও পড়ুন:গণনার তিন দিন পরেও আধপোড়া ব্যালট পেপার উদ্ধারে চাঞ্চল্য
ভোটপর্ব মিটলেও গাজোলের হাজি নাকু মহম্মদ হাইস্কুলের বেশ কয়েকটি ঘর গতকাল পর্যন্ত তালাবন্ধ করে রেখেছিল প্রশাসন ৷ স্কুলে এসেও ঠিকমতো বসতে না পেরে গতকাল গাজোলের বিডিওকে বিষয়টি জানায় স্কুলের পড়ুয়ারা ৷ রাতে বিডিও এবং গাজোল থানার আইসির উপস্থিতিতে বন্ধ ঘরগুলির তালা খোলা হয় ৷ তখনই ধরা পড়ে, 207 নম্বর রুমে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা আছে তিনটি সিল করা ব্যালট বাক্স ৷ হইচই পড়ে যায় গোটা এলাকায়৷ গোটা রাত স্কুল ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷ আজ ওই তিনটি বাক্স উদ্ধার করে প্রশাসন ৷ দেখা যায়, সাংসদ যে অভিযোগ করেছিলেন, সেটাই ঠিক ৷ ওই তিনটি বাক্সই 83 নম্বর বুথের ৷ বাক্সগুলিকে প্রশাসন নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ৷
এই ঘটনার পরেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয় বিজেপি ৷ স্কুলের সামনে 512 নম্বর জাতীয় সড়ক রুদ্ধ করে দেন দলের নেতা-কর্মীরা ৷ ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন, জেলা নেতা মিলন দাস-সহ আরও অনেকে ৷ কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে চলে আসেন সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনিও পথ অবরোধে শামিল হন ৷ পরে তাঁরা স্কুলের গেটে অবস্থান শুরু করেন ৷ ইটিভি ভারতকে বিজেপি সাংসদ জানান, গতকাল হাজি নাকু মহম্মদ হাইস্কুলের একটি ঘর থেকে তিনটি ব্যালট বাক্স পাওয়া গিয়েছে ৷ বিডিও এবং থানার আইসি তার সাক্ষী ছিলেন ৷ এই ব্যালট বাক্সগুলি এল কোথায় থেকে? এভাবে যে কত ব্যালট বাক্স এরা স্ট্রং রুম কিংবা ডিসিআরসি থেকে সরিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই ৷ এরা সব জায়গায় ছাপ্পা মারা ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়েছে ৷ গণতন্ত্রকে কীভাবে লুট করা হয়েছে, এটা তার প্রমাণ ৷
আরও পড়ুন:উধাও 400 ব্যালট, গণনা কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ তৃণমূল-বিজেপির
তিনি প্রশ্ন তোলেন, তিনটি ব্যালট বাক্স না থাকা সত্ত্বেও 83 নম্বর বুথের গণনা কীভাবে হয়েছিল? আসলে তৃণমূলের পার্টি অফিস থেকে ছাপ্পা ব্যালট ভরা বাক্স কোনওভাবে স্ট্রং রুমে ভরে দেওয়া হয়েছিল ৷ এই তিনটি বাক্স ওরা সরাতে পারেনি ৷ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, "পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনকে ব্যবহার করে গোটা রাজ্যেই তৃণমূল ভোটে জিতেছে ৷ ওরা মানুষকে বিশ্বাস করে না ৷ বিডিও এখন বলছেন, তাড়াতাড়ি তিনটি বাক্স সরাতে হবে ৷ আসলে তাঁর চুরি ধরা পড়ে গিয়েছে, তাই তিনি তাড়াহুড়ো করছেন ৷ ব্যালট বাক্স না মেলায় 83 নম্বর বুথে রিপোলিং হয়েছে ৷ কিন্তু কীভাবে ওরা ব্যালট বাক্স বদলেছে, এই ঘটনা তা প্রমাণ করেছে ৷" এনিয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছেন সাংসদ ৷