মালদা, ২৬ মার্চ : ছিলেন কমরেড, হলেন "চৌকিদার"। ৩০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন লাল শিবিরের কঠোর অনুশাসনে। লালঝান্ডা এখন ফিকে হয়ে তাঁর কাছে গেরুয়া। তবু অনুশাসনের আবর্তেই থাকতে চেয়েছেন তিনি। CPI(M) ছেড়ে যোগ দিয়েছেন BJP শিবিরে। তাঁর কথায়, অনুশাসন সব মানুষকে শৃঙ্খলার পাঠ শেখায়। তিনি খগেন মুর্মু। আদ্যোপান্ত বামপন্থী খগেনবাবু এখন পুরোদস্তুর মোদি ভাবনার প্রচারক। এই মুহূর্তে তাঁকেই মালদার মতো জেলায় দলের আদিবাসী মুখ করার চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। দলের থিঙ্ক ট্যাংকের ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বাছাইতে। আনকোরা খগেনবাবুকেই এই আসনে দলীয় প্রার্থী করেছে BJP। নিজের এই যাত্রা নিয়ে ETV ভারতের সামনে অকপট খগেনবাবু। আলাপচারিতায় উঠে এল অনেক তথ্য।
১৯৫০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্ম খগেন মুর্মুর। ছাত্রজীবনে জড়িয়ে পড়েন বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে। পরবর্তীকালে CPI(M)-এর যুব সংগঠনকে নেতৃত্ব দেন। ততদিনে তিনি নজরে পড়ে যান জেলার অবিসংবাদী CPI(M) নেতা শৈলেন সরকারের। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জেলা পরিষদ আসনে জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষর দায়িত্ব সামলান। ২০০৬, ২০১১ ও ২০১৬ সালে হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তিনি। ২০১৪ সালে তিনি উত্তর মালদা কেন্দ্রে CPI(M)-এর টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও মৌসম নুরের কাছে হেরে দ্বিতীয় স্থান পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। এহেন খগেনবাবু আরও একবার লোকসভা ভোটের ময়দানে।
নতুন দল প্রার্থী ঘোষণা করতে বেশ কিছুটা সময় নিয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর তিনি কলকাতা থেকে মালদায় ফিরেছেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে যে অসন্তোষের ধোঁয়া উঠেছিল, তা ভোটের আকাশে মিলিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে তিনি চূড়ান্ত ব্যস্ত। তার মধ্যেও নিজের বাড়িতে ETV ভারতের মুখোমুখি খগেন মুর্মু।
ETV ভারত : নতুন দলে এসে কেমন লাগছে?
খগেন মুর্মু (প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমে যেন খানিকটা থমকে যান) : মানুষের সঙ্গে লড়াই করেছি। তাঁদের সৈনিক হিসাবে এতদিন পাশে থেকেছি। ছাত্রজীবন থেকে এই লড়াই চলছে। মানুষের সঙ্গে আমার সেই লড়াইয়ের মাধ্যমেই সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সারা দেশে উন্নয়নের যে প্রচেষ্টা চলছে, বিশেষত কৃষকদের উন্নয়নের স্বার্থে যে প্রচেষ্টা তাতে মানুষ দলে দলে শামিল হচ্ছেন। এই দলে যুবসমাজের অংশগ্রহণ আমাকে আপ্লুত করেছে। সেই কারণেই আমি এই দলে যোগ দিয়েছি।
ETV ভারত : কিন্তু নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেই তো ১১১ জন কৃষক ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছেন!
খগেন মুর্মু : বর্তমানে এই রাজ্যের সরকার বলছে, কৃষকদের আয় নাকি অতীতের থেকে ৩ গুন বেড়ে গেছে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা এত আত্মহত্যা করছেন কেন? এই রাজ্যে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য উন্নয়নের যে কথা বলছে, তা আসলে লুট করার জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন খাতের অর্থ তৃণমূলের লোকজনকে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমার বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বামনগোলা, হবিবপুর ও গাজোলেও কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। সেই কৃষকদের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এবিষয় নিয়ে বিধানসভায় সরব হয়েছি। আত্মঘাতী কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আমি আবেদন করেছি। আত্মঘাতী কৃষকদের পরিবারগুলিকে ১০ লাখ টাকা সাহায্য দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে দাবি জানিয়েছি। এক্ষেত্রে তৃণমূলের বিধায়করাও বিধানসভার বাইরে আমাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু রাজ্য সরকার আমার আবেদনে কোনও সাড়া দেয়নি। এখানে সরকারি টাকা বিভিন্ন আমোদপ্রমোদে খরচ করা হচ্ছে। স্কুল পড়ুয়াদের সাইকেল কেনার ক্ষেত্রেও পাইয়ে দেওয়ার খেলা চলছে। সরকারি অর্থ তছরুপ করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না।
ETV ভারত : এবারের ভোট প্রচারে কোন কোন বিষয় তুলে ধরছেন?
খগেন মুর্মু : গণিখান চৌধুরি ও শৈলেন সরকার মন্ত্রী থাকাকালীন উত্তর মালদায় কিছু উন্নয়ন অবশ্যই হয়েছে। এখনও তার সুফল আমরা ভোগ করছি। বর্তমান রাজ্য সরকার উন্নয়নের নামে যা করছে তাতে ছাত্র, যুব, শিক্ষক, কৃষক, পিছিয়েপড়া মানুষদের কোনও উন্নয়ন হয়নি। উলটে এই মানুষরা আক্রান্ত হয়েছেন, হচ্ছেন। এখন এমনিতেই কোনও চাকরি নেই। তার মধ্যেও কোনও চাকরি থাকলে তা পেতে লাখ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সব উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করছেন। কিন্তু এখানে স্থায়ী কোনও পরিকাঠামো গড়ে উঠছে না। গত ৮ বছরে এখানে কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি।