মালদা, 17 মে : সামনে পড়ে গঙ্গার তাজা মৌরলা, ফ্যাঁসা, পিয়ালি ৷ রয়েছে রুই-কাতলা, কালবাউশ, বোয়ালও ৷ কিন্তু বিক্রি নেই ৷ কেন ? সবার আতঙ্ক, গঙ্গায় ভেসে আসছে কোভিড মৃতদেহ ৷ বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে পুণ্যতোয়ার জল ৷ বিষ মিশেছে ওই নদীর মাছেও ৷ তাই এই মুহূর্তে গঙ্গার মাছ কিছুতেই মুখে তোলা যাবে না ৷ এই মুহূর্তে সেই ছবিই ধরা পড়ছে মালদার বিভিন্ন বাজারে ৷ মাছ বিক্রেতারা মানুষের এহেন শঙ্কার কথা সোজাসাপটাই জানাচ্ছেন ৷ কিন্তু ক্যামেরায় বক্তব্য দিতে নারাজ কোনও ক্রেতা ৷
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর ও বিহারের বক্সারে গঙ্গায় বেশ কিছু মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায় ৷ তার মধ্যে কিছু মৃতদেহ আধপোড়া ছিল বলেও খবর ৷ এতেই রটে যায়, করোনায় মৃতদের দেহ পুরোপুরি সৎকার না করেই গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তোলপাড় পড়ে যায় গোটা দেশে ৷ মৃতদেহ যাতে এই রাজ্যে ভেসে না আসে, তার জন্য নবান্নের তরফে সতর্ক করা হয় মালদা জেলা প্রশাসনকে ৷ কারণ, ঝাড়খণ্ড হয়ে মালদা জেলা দিয়েই এরাজ্যে ঢুকেছে গঙ্গা ৷ গত তিনদিন ধরে মানিকচকের গদাইচর এলাকায় গঙ্গায় তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে পুলিশ ৷ তবে এখনও পর্যন্ত কোনও মৃতদেহ ভেসে আসতে দেখা যায়নি ৷
মৃতদেহ ভেসে আসুক কিংবা না আসুক, ইতিমধ্যে তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলা জুড়ে ৷ গঙ্গা থেকে জল তুলে তা পরিস্রুত করে এই জেলায় সরবরাহ করা হয় ৷ এই মুহূর্তে সেই জল পান করতেও অনীহা সবার ৷ সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে ৷ গঙ্গার তাজা মাছের এখন কোনও কদর নেই ৷ বিশেষ করে রুই-কাতলা, বোয়াল কিংবা বড় মাছ একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না ৷ ছোট মাছ অবশ্য কিছু বিক্রি হচ্ছে ৷ তবে শুধুই শহরে ৷ গ্রামে গঙ্গার মাছ ছুঁয়ে দেখছে না কেউ ৷ মানিকচকের বাজারে ক’দিন আগেও যে মাছ 800 টাকা কিলোর নিচে বিক্রি হত না, এখন 150 টাকা কিলো দরেও অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : মানবিক পুলিশ, ভবঘুরেদের পাশে আইনের রক্ষকরা
মালদা শহরের মাছ বিক্রেতা শেখ নিশান্ত বলছেন, “দু’দিন আগেও গঙ্গার মাছ আনলে মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যেত ৷ এখন ক্রেতারা আগেই জিজ্ঞেস করছেন, গঙ্গার মাছ নয় তো? বিশেষ করে বড় মাছ বিক্রি করতে খুব অসুবিধে হচ্ছে৷ ক্রেতাই নেই ৷ ছোট মাছ অবশ্য কিছুটা বিক্রি হচ্ছে ৷” আর এক বিক্রেতা সরস্বতী সিংহ বলেন, “গঙ্গার মাছ আজ নিয়ে এসেছি৷ কেউ ধরছে না ৷ গঙ্গার মাছ কেউ খেতে চাইছে না৷ করোনার মরা গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার পর থেকেই এই সমস্যা ৷”