মালদা, 11 এপ্রিল: স্বাধীনতার পর পেরিয়ে গিয়েছে 75টা বছর ৷ এই সময়কালে বহুবার ভোট এসেছে, গিয়েছে ৷ প্রতি ভোটের আগেই গ্রামের রাস্তার আশ্বাস মিলেছে ৷ কিন্তু রাস্তাটা এখনও হয়নি ৷ রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি থেকে সরকারি দফতরগুলিতেও হত্যে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ নিস্ফলা আবেদন ৷ শেষ পর্যন্ত গত বছর চলার মতো একটা রাস্তা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন তাঁরা ৷ আবারও একটা ভোট আসছে ৷ এ বার আবার গ্রামীণ ভোট ৷ এ বার ভোটপাখিদের অভ্যর্থনা জানাতে ঝাঁটা-জুতো হাতে প্রস্তুত শান্তিপুর গ্রামের প্রমিলা বাহিনী ৷ পুরুষদের বক্তব্য আরও তীক্ষ্ণ ৷ ভোট দেওয়া তো দূরের কথা, ভোটকর্মীদেরও আর তাঁরা গ্রামে ঢুকতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ৷
পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শান্তিপুর গ্রাম ৷ গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে রেলের ট্র্যাক ৷ 1200 জন ভোটার ৷ লোকসংখ্যা প্রায় 2500 ৷ বাম আমল থেকে তৃণমূলের পথশ্রী, রাস্তাশ্রীর জমানা ৷ সময় বদলালেও কোনওদিন এই গ্রামে রাস্তা তৈরি হয়নি ৷ রাস্তা না থাকায় রাতবিরেতে প্রসূতি কিংবা অন্য রোগীদের খাটিয়ায় চাপিয়ে মূল রাস্তায় নিয়ে যেতে হচ্ছে ৷ হাসপাতালে যেতে দেরি হয়ে যাওয়া অনেক রোগী সেই খাটিয়াতেই শ্মশানমুখী হচ্ছেন ৷
অনেক সময় আবার প্রসূতির জায়গায় সদ্য মা আর নাড়ি জুড়ে থাকা সদ্যোজাত হাসপাতাল পৌঁছচ্ছে ৷ গ্রামে রাস্তা না থাকায় ছেলেরা নাকি আইবুড়ো হয়েই থেকে যায় ৷ কেউ তাঁদের হাতে মেয়ে দিতে চান না ৷ একই কথা খাটে গ্রামের মেয়েদের ক্ষেত্রেও ৷
গ্রামের বাসিন্দা রীতা মণ্ডল সাফ জানাচ্ছেন, “হাতে ঝাঁটা আর জুতো তৈরি রেখেছি ৷ রাস্তা না করে কেউ ভোট চাইতে এলে তাঁকে এ সব দিয়েই পেটাব ৷ রাস্তা না থাকায় প্রসূতিদের সময়মতো হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া যায় না ৷ ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুল যেতে পারে না ৷ 75 বছর ধরে কেউ আমাদের রাস্তা করে দিচ্ছে না ৷ সবাইকে রাস্তার জন্য বলেছি ৷ শুধু শুনেছি, ভোট দিলেই নাকি রাস্তা হবে ৷ বর্ষার সময় পরিস্থিতি তো মুখেও বলা যায় না ৷ শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই চাঁদা তুলে চলাচলের মতো ছোট একটা রাস্তা করেছি ৷ রাস্তা না থাকায় শান্তিপুর গ্রামে কেউ মেয়ে দিতে চায় না ৷ আমরা শুধু এই রাস্তাটা চাই ৷”