মালদা, 6 জুলাই : নৌকাটা তখন মাঝ নদীতে । ঝপাৎ শব্দে চমকে উঠেছিলেন মাঝিও । শুধু বুঝেছিলেন, তাঁর নৌকা থেকেই কিছু একটা ফেলা হয়েছে জলে । নৌকায় তখন শুধুই ওই দম্পতি । সন্দেহের বশেই দম্পত্তির দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রশ্নটা । কিছুটা ঝাঁঝালো সুরেই । প্রথমে আমতা আমতা করলেও বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারেননি । মাঝির বার বার প্রশ্নে ভেঙে পড়েন তাঁরা । স্বীকার করেন, বস্তায় ছিল তাঁদের মেয়ের দেহ । যাকে খুন করে জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন তাঁরাই ।
ঘটনাটি মালদার মানিকচকের মহেন্দ্রটোলা গ্রামের । এই গ্রামেরই বাসিন্দা ধীরেন মণ্ডলের পেশায় কৃষক । স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ছোট সংসার । বড় মেয়ে পার্বতী ও ছোটো মেয়ে প্রতিমা । বছর কয়েক আগে পার্বতীর বিয়ে হয় । এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল । কিন্তু, পার্বতীর দেওরের সঙ্গে সখ্যতা জমেছিল প্রতিমার । সখ্যতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে । কিন্তু, প্রতিমার এই সম্পর্ক মানতে চাননি ধীরেন বা তাঁর স্ত্রী সুমতি । সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মেয়েকে চাপ দিলেও মেয়ে তা শোনেনি ।
গঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছন মেয়ের দেহ আজ জেরায় ধীরেন স্বীকার করেন, গত রাতেও মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা । আলোচনা ক্রমেই মাত্রা ছাড়ায় । রাগের মাথায় মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন তাঁরা । খুনের পর মেয়ের দেহকে বস্তায় মুড়ে ফেলেন । তার পর আজ সকালে স্বামী-স্ত্রী দু'জনে মেয়ের বস্তা বন্দি দেহ সাইকেলে চাপিয়ে প্রথমে গঙ্গার ধারে নিয়ে আসেন তাঁরা । নৌকা ভাড়া করেন । মাঝিকে বলেছিলেন, গঙ্গা পার করে দেওয়ার জন্য । কিন্তু, মাঝ গঙ্গায় গিয়ে বস্তা ফেলে দেওয়ার পরই 'দুধ কা দুধ, পানি কা পানি' হয়ে যায় ।
প্রতিমার মৃতদেহের খোঁজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর দম্পতির কথা শোনার পর নৌকা ঘাটে ফিরিয়ে আনেন মাঝি ৷ খবর দেওয়া যায় স্থানীয়দের । খবর দেওয়া হয় ভূতনি থানার পুলিশ । গ্রেপ্তার করা হয় সুমতি ও ধীরেন । নিজের দোষ স্বীকার করেন তাঁরা । পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন মালদা জেলা আদালতের বিচারক ।
অন্যদিকে, প্রতিমার মৃতদেহের খোঁজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে (NDRF) খবর দেওয়া হয় । তল্লাশি শুরু করে NDRF বাহিনী।