মালদা, 28 এপ্রিল : হলটা কী? উত্তর খুঁজছে মালদা মেডিকেল ৷ এই হাসপাতালের আউটডোরে যেখানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগীর ভিড় থাকত, এখন সেখানে দিনে 500 জন রোগীও চিকিৎসা করাতে আসছেন না ৷ এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মেডিকেলে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী, এমন কী চত্বরের বাইরে থাকা দোকানদারদের মধ্যেও ৷ শুধুই কি লকডাউন, না কি কোরোনার আবহে সাধারণ রোগ বিদায় নিয়েছে? যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার জন্যই হাসপাতালে রোগীর ভিড় অনেক কমে গেছে ৷
মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন বিশ্বদীপ রায় ৷ স্বাস্থ্যকর্মী বিশ্বদীপবাবু মনে করতে পারছেন না, এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেছেন কি না ৷ তিনি বলেন, "আউটডোর প্রতিদিন সকাল 9টায় খোলে ৷ টিকিট দেওয়া হয় দুপুর 1টা পর্যন্ত ৷ সকাল 6টা থেকেই রোগীদের পরিবারের লোকজনের ভিড় শুরু হয়ে যায় ৷ বিকেল পর্যন্ত গমগম করে হাসপাতাল চত্বর ৷ লকডাউন শুরুর প্রথমদিকেও রোগীদের ভালো ভিড় ছিল ৷ কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, ভিড় ততই কমতে শুরু করেছে ৷ আগে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে আসতেন ৷ এখন মেরেকেটে সারাদিনে 500 জনের বেশি রোগী হয় না ৷" একই বক্তব্য হাসপাতাল চত্বরের বাইরে থাকা ফলের দোকানি দেবব্রত সিংহেরও ৷ তিনি বলেন, "এখন শুধুমাত্র ফল আর ওষুধের দোকানগুলি খোলা থাকছে ৷ কিন্তু আমাদের ব্যবসা অনেক কমে গেছে ৷ রোগীই আসছেন না ৷ ব্যবসা হবে কীভাবে? আগে আমার ছোট্টো দোকানেও দিনে প্রায় তিন হাজার টাকার ব্যবসা হত ৷ এখন 500 টাকার ব্যবসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ৷ কতদিন এই পরিস্থিতি চলবে জানি না ৷"
তবে এই পরিস্থিতিতে খানিকটা যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন চিকিৎসক, নার্সসহ রোগীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা ৷ কোরোনা নিয়ে ঘুম উড়েছে তাঁদের ৷ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেডিকেল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড ৷ এতেও তাঁদের খানিকটা সুবিধা হয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত জেলায় মাত্র একজন রোগীর শরীরে কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে ৷ তাঁকে জেলায় না রেখে শিলিগুড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের ৷ কারণ, জেলায় তৈরি দু'টি কোরোনা হাসপাতালে ভরতি থাকা রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে ৷
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার এই জেলাকে অরেঞ্জ জ়োনের আওতায় নিয়ে এসেছে ৷ তার জন্য মেডিকেলের চিকিৎসক ও নার্সদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে ৷ আউটডোরে রোগীদের চাপ কমে যাওয়ায় মানসিক প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হচ্ছে হচ্ছে তাঁদের ৷
যদিও মেডিকেলের আউটডোরে রোগীদের সংখ্যা হ্রাসের জন্য লকডাউনকেই সামনে নিয়ে এসেছেন সহকারী অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল সুপার অমিত দাঁ ৷ তিনি বলেন, "লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ৷ পার্শ্ববর্তী জেলা, রাজ্য কিংবা এই জেলার দূরবর্তী জায়গাগুলি থেকে রোগীরা মেডিকেলে আসতে পারছেন না ৷ তাঁরা স্থানীয় হাসপাতালেই পরিষেবা নিচ্ছেন ৷ এখন শুধুমাত্র আশেপাশের এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন ৷ দিনে 500 থেকে 600জনের বেশি রোগী আউটডোরে আসছেন না ৷ শুধু আউটডোর নয়, এখন এই হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডগুলিতেও ভরতি থাকা রোগীর সংখ্যা অনেক কম ৷ তবে আমরা সবাইকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি ৷"