মালদা, 27 সেপ্টেম্বর : গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল বাকিরা ৷ রাজ্যের শাসকদলও পাহাড় থেকে গঙ্গাপাড় পর্যন্ত কলকে পায়নি ৷ কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই গেরুয়া রথ উত্তরের পথে হোঁচট খাবে না তো ? সাম্প্রতিক কৃষি বিলের পরিপ্রেক্ষিতে সেই প্রশ্নই উঠেছে মালদা সহ গোটা উত্তরবঙ্গে ৷ এই বিলের জন্য বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইটা যে কঠিন, তা বুঝেছে খোদ BJPও ৷ বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই NDA সঙ্গ ছেড়েছে BJPএর সবচেয়ে পুরোনো বন্ধু শিরোমণি অকালি দল । বাকি বন্ধুদের অবস্থানও খুব ভালো ঠেকছে না গেরুয়া শিবিরের ৷ তার উপর এই বিলের প্রতিবাদে গোটা দেশ জুড়েই শুরু হয়েছে কৃষক বিক্ষোভ ৷ তাতে শামিল হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও ৷ বিরোধীদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাই এ রাজ্যের দলীয় নেতানেত্রীদের গেরুয়া শিবিরের উপরমহলের নির্দেশ, পশ্চিম বাংলায় এই বিলের সমর্থনে নামতে হবে সবাইকে ৷ বিলের সপক্ষে নিয়ে আসতে হবে রাজ্যের কৃষকদের ৷ তারই অঙ্গ হিসাবে আজ মালদা জেলায় কৃষি বিল নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে BJP ৷ জোনাল এই সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন BJP কিষানমোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকার, সাংসদ খগেন মুর্মু, নেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরি, দলের জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল সহ অন্যান্যরা ৷
এদিন বিলের সপক্ষে বেশি বক্তব্য রাখেন শ্রীরূপাদেবী । একাধিক যুক্তি দিয়ে তিনি এই বিলকে কৃষকবান্ধব বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন ৷ সেই যুক্তিতে তিনি কৃষকদের একবার অশিক্ষিত বলেও মন্তব্য করেন ৷ তিনি বলেন, “আমরা কৃষি বিল নিয়ে আগামীতে কৃষকদের বোঝাবো ৷ তার জন্য আমরা হাটে-বাজারে, এমনকি বাড়িতে গিয়েও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলব ৷ BJP ও কিষানমোর্চার পক্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় আগামী 28 সেপ্টেম্বর থেকে 4 অক্টোবর পর্যন্ত এই বিলের সমর্থনে মিছিল করা হবে ৷ তারপর আমরা গোটা রাজ্যে ‘শুনুন চাষিভাই’ নামে একটি কর্মসূচির আয়োজন করা হবে । এই কর্মসূচিতে চাষিদের হাতে বিলের সমর্থনে পত্রক তুলে দেওয়া হবে । এই বিল তিনটি অধ্যায়ে সংসদে পাস হয়েছে ৷ বিলের মূল বিষয়, চাষিরা যে সামগ্রী উৎপাদন করছে, তা তাঁরা কীভাবে দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে পারবে ৷ বিলের প্রথম অধ্যায়ে অংশটি রয়েছে ৷ এখন যে পদ্ধতিতে দেশে ফসলের ক্রয়-বিক্রয় চলে, তা পুরোপুরি এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় ৷ ফলে নিজেদের উৎপাদিত ফসল চাষিদের নিজেদের বিক্রি করার ক্ষমতা নেই ৷ ফসলের দাম নির্ধারণেরও ক্ষমতা নেই তাঁদের । প্রধানমন্ত্রী দেশের উৎপাদিত সামগ্রী বিদেশে রপ্তানিতে জোর দিয়েছেন ৷ এই বিলের মাধ্যমে চাষিদের সামনে সেই দরজা খুলে গেল ৷ এই বিল কৃষক সশক্তিকরণের পথ দেখিয়েছে ৷ বিলের দ্বিতীয় অংশে কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং-এর কথা বলা হয়েছে ৷ এখন দেশের ছোট কৃষকরা নিজেদের জমি লিজে দিয়ে দেয় ৷ অন্তত তিন বছরের জন্য তাঁরা নিজেদের জমি অন্যের হাতে তুলে দেয় ৷ নয়া বিলেও কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং-এর কথা বলা হয়েছে । কিন্তু এখন থেকে যারা জমি কন্ট্র্যাক্ট নেবে, তাঁদের হাতে জমির অধিকার থাকবে না ৷ শুধুমাত্র ফসলের অধিকার থাকবে ৷ একজন চাষির সঙ্গে আগাম চুক্তির ভিত্তিতেই এই কন্ট্র্যাক্ট হবে । অর্থাৎ চাষির হাতে জমি, চাষ ও উৎপাদিত ফসলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা চলে আসবে ৷ কোথাও কোনও সমস্যা দেখা দিলে আইনি অধিকারও থাকবে চাষিদের ৷ এই বিলে দালাল ও ফড়েদের দাপট একেবারে কমে যাবে ৷ বিলের তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের কথা ৷ 1955 সালে এই আইন তৈরি হয়েছিল ৷ সেই সময় আমাদের বাইরের দেশ খাদ্য আমদানি করতে হত । কিন্তু এখন দেশে খাদ্যের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ৷ এখন আমরাই খাদ্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করতে পারি ৷ তাই আলু-পেঁয়াজের মতো ফসলকে এই তালিকার বাইরে করা হয়েছে । এতে চাষিরা সরাসরি ফসল রপ্তানি করতে পারবে ৷ কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হবে । তাঁরা এই ব্যবসার সব বন্ধনমুক্ত হবে ৷ দেশের বেশিরভাগ চাষিই অশিক্ষিত ৷ স্বাধীনতার এতদিন পরেও আমরা তাঁদের আর্থ সামাজিক কিংবা শিক্ষার মান উন্নত করার চেষ্টা করিনি ৷ একে হাতিয়ার করে বিরোধীরা চাষিদের এই বিল নিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে ৷ বিরোধীরা এর আগে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য চিৎকার করতো ৷ আজ যখন সেই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়িত করলেন, তখন বিরোধীরা এই বিলের প্রতিবাদ করে দ্বিচারিতা করছে ৷ আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷”