পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Mayapur Style Temple in Malda: মায়াপুরের ধাঁচে রামকেলি ধামে রাধামাধবের মন্দির নির্মাণ করছে ইসকন

মালদার রামকেলি ধামে মায়াপুরের ধাঁচে রাধামাধবের মন্দির নির্মাণ করছে ইসকন ৷ বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত মন্দিরের জায়গায় ভজন কুটিরের উদ্বোধন হতে চলেছে ৷

Mayapur Style Temple in Malda
মায়াপুরের ধাঁচে রামকেলি ধামে রাধামাধবের মন্দির

By

Published : Jun 14, 2023, 6:19 PM IST

মায়াপুরের ধাঁচে রামকেলি ধামে রাধামাধবের মন্দির নির্মাণ করছে ইসকন

মালদা, 14 জুন: মিলন হবে কত দিনে...৷ মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন করাতে ঘর ছেড়েছিলেন নিমাই ৷ কৃষ্ণপ্রেমের মহিমা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন মানুষের মনে ৷ তিনি চেয়েছিলেন, মানুষের মনে প্রেমের বিকাশ হোক ৷ প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে পড়ুক মানবজাতি ৷ ধর্মজাগরণের অন্যতম প্রতিভূ শ্রীচৈতন্যদেব ষোড়শ শতাব্দীতে কৃষ্ণপ্রেমের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের কাজ শুরু করেন ৷ সমাজ সংস্কারের জন্য তিনি এ দেশের বিস্তীর্ণ অংশ পদব্রজে যাত্রা করেছিলেন ৷

নবদ্বীপ থেকে বৃন্দাবন যাওয়ার পথে 1514 সালের জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির আগের দিন তিনি পৌঁছন গৌড়ভূমে ৷ গৌড়ের রামকেলি গ্রামে তিনদিন অবস্থান করেন ৷ সেই সময় গৌড়ের শাসক ছিলেন হুসেন শাহ ৷ তাঁরই মন্ত্রী পরিষদের দুই সদস্য সাকর মল্লিক ও দবির খাস শ্রীচৈতন্যের প্রেমের বাণীর জোয়ারে ভেসে যান ৷ মহাপ্রভুর কাছে মুসলমান থেকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়ে তাঁরাও কৃষ্ণপ্রেমের বাণী প্রচার করতে শুরু করেন ৷ এই দু’জনই বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণের পর রূপ ও সনাতন গোস্বামী নামে পরিচিত হন ৷ যে তমাল গাছের নীচে তাঁরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন, সেখানে তাঁরা এক মন্দির নির্মাণ করেছিলেন ৷ কালের স্রোতে হারিয়ে যায় সেই মন্দির ৷ পরবর্তীতে ঠিক সেই জায়গায় আরেকটি মন্দির তৈরি করা হয়েছে ৷

রামকেলি ধাম বৈষ্ণবদের অন্যতম পূণ্যভূমি ৷ এই ভূমিতে বিশাল আকারের মহাপ্রভুর মন্দির নির্মাণ করতে চলেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন ৷ এই ধর্মীয় সংস্থার প্রধান দফতর নদিয়ার নবদ্বীপে ৷ সেখানে নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃষ্ণমন্দির ৷ এ বার রামকেলি ধামের পূণ্যভূমিতেও মায়াপুরের ধাঁচে মন্দির নির্মাণ করতে চলেছে তারা ৷ আগামিকাল থেকে শুরু হচ্ছে রামকেলি মেলা ৷ এ বার সেই মেলা 509 বছরে পা দিচ্ছে ৷ সে দিনই ইসকনের প্রস্তাবিত মন্দিরের জায়গায় সূচনা হচ্ছে ভজন কুটিরের ৷ সেখানে মহাপ্রভুর নিত্যপূজা করা হবে ৷ ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত মন্দিরের জায়গায় সন্ন্যাসীদের থাকার জায়গা তৈরির কাজ চলছে ৷

মায়াপুরের ধাঁচে রাধামাধবের মন্দির

বিষয়টি নিয়ে ইসকনের মালদা দফতরের সভাপতি ব্রজরাজ কানাই দাস ব্রহ্মচারী জানান, গৌড়ের রামকেলি গ্রাম বৈষ্ণবদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ মায়াপুর যেমন মহাপ্রভুর আবির্ভাবের জন্য খ্যাত, তেমনই রামকেলি ধাম রূপ ও সনাতনের জন্য বিখ্যাত ৷ এই দু’জন ছিলেন মহাপ্রভুর প্রিয় ভক্ত ৷ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধারায় যে সাহিত্যগুলি রয়েছে, তা এই দুই ভক্তকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে মহাপ্রভুই প্রকাশিত করেছেন ৷ ফলে মায়াপুরের মতো রামকেলিও বৈষ্ণবদের একটি পীঠস্থান ৷

আরও পড়ুন:মায়াপুর ইসকনের পুরুষ নিরাপত্তা রক্ষীকে যৌন হেনস্থা ! পলাতক অভিযুক্ত মহারাজ

তাঁর কথায়, “এই পীঠস্থানের কথা মানুষকে জানাতে আমরা ঠিক মায়াপুরের আদলে এখানেও একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছি ৷ এই প্রকল্পের মধ্যে রাধাগোবিন্দদেব গৌড় নিতাইয়ের মন্দির, ভক্তদের থাকার জন্য একাধিক গেস্ট হাউস ও ধর্মশালা, প্রসাদ বিতরণের হলঘরের সঙ্গে মানুষ যাতে রূপ-সনাতনের সাহিত্যচর্চা করতে পারে, তারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ আমরা এখানে রূপ-সনাতন বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করতে চলেছি ৷ এর কার্যক্রম ইতিমধ্যেই আমরা চালু করে দিয়েছি ৷ আপাতত চার একর জমির উপর এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে ৷ ভবিষ্যতে আরও জমি নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে ৷ আশা করছি, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ আমরা শেষ করতে পারব ৷ বৃহস্পতিবার থেকে আমরা ওই জমিতে গৌড়-নিতাইয়ের সেবা, নিত্যপূজা শুরু করছি ৷ পরবর্তীতে আমরা রাধাগোবিন্দদেবের পুজোও শুরু করব ৷ সেখানে রূপ-সনাতনের সেবিত মদনমোহনের বিগ্রহও সবাই দেখতে পাবেন ৷”

রামকেলি ধামে রাধামাধবের মন্দির

ব্রজরাজ কানাই দাস ব্রহ্মচারী আরও জানান যে, তাঁরা মিনি মায়াপুর তৈরি করার চেষ্টা করছেন ৷ রামকেলি ধামকে গুপ্ত বৃন্দাবন বলা হয় ৷ এই জায়গা মাতৃগয়া নামেও খ্যাত ৷ দেশ ও বিদেশ থেকে যে সব কৃষ্ণভক্ত মালদায় আসেন, তাঁদের সেই জায়গাগুলি দেখানো হয় ৷ রামকেলি-সহ রূপ-সনাতনকে জানানোর জন্য একটি বইও প্রকাশ করা হয়েছে ৷ ভক্তরা যাতে এই বই পড়ে সারা বছর রামকেলির সঙ্গে থাকতে পারবেন ৷ রামকেলিতে গোবর্ধনের প্রতিরূপও নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ৷

রামকেলিতে ইসকনের মন্দির-সহ বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা যদু ঘোষ বলেন, “এই জমিটি বছর তিনেক আগে ইসকন কর্তৃপক্ষ কিনেছে ৷ তবে কত টাকার প্রকল্প, তা আমি বলতে পারব না ৷ আপাতত জোরকদমে কাজ চলছে ৷ কর্তৃপক্ষের লোকজন এবং ভক্তদের থাকার ভবন নির্মাণ করা হবে ৷ তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ 50-60 হাজার ভক্তের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হবে ৷ আপাতত একটি ভজন কুটির তৈরি করা হয়েছে ৷ বৃহস্পতিবার তার উদ্বোধন হবে ৷ সে দিনই ভগবান এখানে আসবেন ৷ ভবিষ্যতে আরও জমি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ মন্দিরের শিলান্যাস ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে ৷ মন্দির তৈরি হয়ে গেলে এই এলাকারও অনেক উন্নতি হবে ৷”

মায়াপুরের মন্দির এখন গোটা বিশ্বের কৃষ্ণভক্তদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র ৷ রামকেলি ধাম কবে তেমনই আরেক তীর্থক্ষেত্রের বাহ্যিক রূপ পায়, তা দেখার অপেক্ষাতেই এখন জেলাবাসী ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details