মালদা, 25 মে : জেলার সুপ্রাচীন লোক সংস্কৃতি গম্ভীরাকে আরও আধুনিক করতে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এগিয়ে এল ইউনেস্কো এবং রাজ্য সরকার । তাঁদের উদ্যোগে পুরাতন মালদা পাবনাপাড়ায় শুরু হয়েছে গম্ভীরা শিল্পীদের নিয়ে বিশেষ কর্মশালা (Gambhira dance workshop in Malda district jointly organised by the state government and UNESCO)। 21 দিনের এই কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন জেলার 120 জন গম্ভীরা শিল্পী । আগামী 4 জুন এই কর্মশালা শেষ হবে ।
একসময় যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী, নির্মলচন্দ্র দাসের মতো শিল্পীরা মালদার গম্ভীরা শিল্পকে শুধু রাজ্য কিংবা দেশ নয়, নিয়ে গিয়েছিলেন বিদেশের দরবারে । অবশ্য এই নামে তাঁদের চেনেন না অনেকেই । তাঁরা গম্ভীরা জগতে মটরবাবু, নীরুবাবু নামেই পরিচিত । পরবর্তী সময়ে গম্ভীরা চালু রয়েছে বটে, কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে যেন এখনকার শিল্পীরা ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছেন না । মঞ্চে আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার কিংবা নতুন বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা, সব জায়গাতেই যেন তাঁরা আগের পুরনো জায়গাতেই আটকে রয়েছেন । ফলে কয়েকশো বছরের পুরনো এই লোকশিল্প থেকে মানুষ ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে । সেই বিষয়টি উপলব্ধি করেই ইউনেস্কো এবং রাজ্য সরকার এই শিল্পীদের আধুনিকতার সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে উদ্যোগ নেন । অবশ্য শুধু মালদার গম্ভীরাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকেই আধুনিকতার সঙ্গে পরিচিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ।
আরও পড়ুন :Gambhira Festival : পুরাতন মালদায় শুরু বার্ষিক গম্ভীরা উৎসব
গত 15 মে থেকে পুরাতন মালদার (Gambhira Dance in Malda) সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাবনাপাড়া কমিউনিটি হলে চলছে গম্ভীরা শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা । তিনটি পর্যায়ে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে । এই কর্মশালার কো-অর্ডিনেটর অয়ন জোয়ারদার বলেন, "2015 সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্রশিল্প দফতরের সঙ্গে ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আমরা বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে পারফর্মিং আর্টেরও কিছু ট্রেনিং দিচ্ছি । এর মূল লক্ষ্য, বিভিন্ন শিল্পে রুরাল হাব তৈরি করা । ইতিমধ্যে প্রায় 30টি এই ধরনের হাব তৈরি হয়েছে । বাউল, ঝুমুর, ছৌ প্রভৃতি পারফর্মিং আর্ট নিয়েও আমাদের কাজ চলছে । তেমনই পুরাতন মালদায় গম্ভীরা দলগুলিকে নিয়ে আমরা কাজ করছি । ইতিমধ্যে 12টি দলের প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে । আরও 10টি দলের প্রশিক্ষণ চলছে । গম্ভীরা গান বা পালার মধ্যে অভিনয়, সুর, তাল, লয়, নাচ, কমেডি, সবকিছুই জড়িয়ে রয়েছে । এই পালায় মাইক্রোফোন ব্যবহার হয় । কিন্তু শিল্পীদের অনেকেরই এসব নিয়ে খুব একটা ভাল ধারণা নেই । এই টেকনিক্যাল বিষয়গুলির উপরেই আমরা জোর দিচ্ছি । অর্থাৎ এই শিল্পীদের আধুনিকতার ধারণা দিতেই আমাদের এই কর্মশালা । কারণ, সময়ের সঙ্গে এই শিল্প এগোতে পারছে না । বর্তমান প্রজন্মকেও এই শিল্পের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে । তবেই এই শিল্প বেঁচে থাকবে । তবে আমরা দেখছি, নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই শিল্পে উৎসাহ দেখাচ্ছেন ।"