মালদা, 13 এপ্রিল : "নির্বাচন কমিশন BJP-কে ভয় পাচ্ছে। ভুয়ো এফিডেভিট পেশ করার জন্য স্মৃতি ইরানিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত। সেটা করা হচ্ছে না। রামনবমীতে অস্ত্র হাতে মিছিল করছে BJP। তাদের আটকানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কোনও নির্দেশ দিচ্ছে না। মোদি সেনা নিয়ে রাজনীতি করছে। নির্বাচন কমিশন কিছু করছে না। নির্বাচন কমিশনের এত পক্ষপাতিত্ব আগে আমরা দেখিনি।" দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে এসে আজ একথা বললেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম।
মালদার দুই লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে মালদায় আসেন ফিরহাদ হাকিম ও শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুবাবু হরিশ্চন্দ্রপুর ও মোথাবাড়ির বাঙ্গীটোলায় জনসভা করেন। অন্যদিকে, ফিরহাদ হাকিম চাঁচল, কালিয়াচকের নওয়াদা যদুপুর ও ইংরেজবাজারের মিলকিতে জনসভা করেন। এছাড়া আজ মালদায় প্রচারে আসেন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেন। তিনি পুরাতন মালদা ও গাজোলে নির্বাচনী সভা করেন।
ভিডিয়োয় শুনুন ফিরহাদের হাকিমের বক্তব্য যদুপুরের জনসভায় ফিরহাদ প্রয়াত বরকত সাহেবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, "এখন আমরা যারা তৃণমূল করি, তারা সবাই আগে কংগ্রেস করতাম। আমি নিজেও বরকত সাহেবের সঙ্গে কাজ করতাম। তখন ডালুদাকে কখনও বরকতদার সঙ্গে কথা বলতে, ঘুরতে কিংবা কংগ্রেস করতে দেখিনি। বরকতদা মারা যাওয়ার পর ডালুবাবু কংগ্রেস করতে শুরু করলেন। মালদার মানুষ দু'হাত তুলে বরকতদার ভাই ডালুসাহেবকে আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু, মালদার মানুষ কী পেলেন? তিনি একদিনও সংসদে দাঁড়িয়ে মালদার মানুষের জন্য কোনও বক্তব্য রাখেননি। কিন্তু, মমতা ব্যানার্জি বরকতদার স্বপ্ন সফল করেছেন। তিনি CPI(M)-কে উৎখাত করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বরকতদার নাম নিয়ে যারা ভোট চায়, তারা আজ CPI(M)-এর হাত ধরেছে। সেকারণেই এই কেন্দ্রে CPI(M) নিজেদের প্রার্থী দেয়নি। বরকতদা বেঁচে থাকলে আজ আত্মহত্যা করতেন।"
মোদিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন, "নরেন্দ্র মোদি প্রচারে এখন সেনাকে টেনে আনছেন। সেনার সঙ্গে তোমার কী ? প্রধানমন্ত্রী আসবে যাবে, কিন্তু ভারতবর্ষের সেনা থাকবে। উনি এখন মিজ়াইল দিয়ে স্যাটেলাইট ভাঙছেন। আরে আপনি সেই স্যাটেলাইট দিয়ে দেখতে পেলেন না, সন্ত্রাসবাদীরা ৪২ জন জওয়ানকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিল। শুধু সার্জিকাল স্ট্রাইকের কথা বললেন যারা আপনার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য মারা গেছে, তাঁদের দায়িত্ব তো আপনি নিলেন না। আপনি সার্জিকাল স্ট্রাইক করছেন, আর আরও বেশি করে আমাদের জওয়ান মারা যাচ্ছেন। আমি মনে করি, এটা গট আপ গট আপ খেলা। তা না হলে ইমরান খান কেন বলবেন, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমাদের সমস্যা মিটে যাবে। উনি নওয়াজ শরিফের বাড়ি বিরিয়ানি খেতে যাচ্ছেন, ইমরান খানকে লাভ লেটার পাঠাচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদি আসলে আপনি দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদী। ভারতবর্ষের মা-বোনেরা আপনাকে ক্ষমা করবে না। দাঙ্গায় হিন্দু-মুসলমান দুই মায়ের সন্তানরাই মারা যায়। তাই দাঙ্গাবাজকে আমরা বাংলায় ঢুকতে দেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের তোয়াজ করে ভেবে যারা রেগে গিয়ে BJP করছেন তারা এই সর্বনাশ করবেন না। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থা খারাপ ছিল তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের সাহায্য করেছেন। তেমনি জঙ্গলমহলের মানুষদের জন্যও তিনি করেছেন। কিন্তু BJP কখনই বলবে না মমতা মুসলমানের মতো আদিবাসীদের জন্যও করেছে। তাহলে তারা ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিতে পারবে না।"
অন্যদিকে, মোথাবাড়ির বাঙ্গীটোলায় নির্বাচনী সভায় আজ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আপনারা দু'হাত ভরে আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। সেই কৃতজ্ঞতা উন্নয়ন দিয়ে আমরা পরিশোধ করব। আজ এখানে একটা ব্লক থেকে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এসেছেন। সবাই ভোট দিলে মোয়াজ্জেম হোসেন মোথাবাড়ি থেকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটে লিড পাবেন। ১৪ বছর সাংসদ থাকাকালীন ডালুসাহেব কোনও কাজ করেননি। আফরাজুলের পরিবারের পাশে ডালুসাহেব দাঁড়াননি। ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে নিহত এনায়েতপুরের শ্রমিকদের পাশে আমরাই দাঁড়িয়েছিলাম। ডালুসাহেবকে আপনারা কেন ভোট দেবেন? আর BJP দিল্লি থেকে এক দিদিকে এনে এখানে ভোটে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু, মোথাবাড়ির মানুষ সার্টিফিকেট আনতে কখনও দিল্লি যাবে না। আর দিল্লির BJP সরকারকে একমাত্র মমতা ব্যানার্জিই হটাতে পারে। আর যদি ৪২টি আসন আপনারা দেন তবে বাংলা দিল্লিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এখানকার বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন দিদিকে বলেছিলেন, মোথাবাড়িতে কলেজের প্রয়োজন রয়েছে। দিদি রাজ্যে এত কলেজ করতে পেরেছেন, মোথাবাড়িতে কি পারবেন না ? স্টেডিয়ামের দাবি উঠেছে৷ এসব কাজ অবশ্যই করা হবে।"