মালদা, 13 জানুয়ারি : এগিয়ে আসছে পৌর নির্বাচন ৷ চলতি বছরই রাজ্যের আরও অনেক পৌরসভার সঙ্গে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভায় ৷ ইতিমধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ এবার মালদা জেলার দুই পৌরসভায় তৃতীয় রোস্টার অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার কথা ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার 29টি ওয়ার্ডে নতুন করে সংরক্ষণ বিন্যাসও হওয়ার কথা ৷ এই নিয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো না হলেও জানা যাচ্ছে, এই সংরক্ষণ বিন্যাসে অনেক কাউন্সিলর এবার আর নিজেদের পুরোনো ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না ৷ তা নিয়ে পৌরসভার অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ৷ গত 11 ডিসেম্বর পৌরসভার প্রাক্তন এগজ়িকিউটিভ অফিসার অতিরিক্ত জেলাশাসককে (উন্নয়ন) একটি চিঠি দিয়ে পৌর এলাকায় তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা জানান ৷ কিন্তু সেই চিঠিটি বেআইনি বলে জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানান পৌরসভার চার কাউন্সিলর ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে আজ জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে না চাইলেও উপ পৌরপ্রধান বিষয়টি স্বীকার করেছেন ৷
পৌর নির্বাচনের সংরক্ষণ সংক্রান্ত রোস্টার জেলাশাসকই করেন থাকেন
উল্লেখ্য, 2011 সালের জনশুমারি মেনে এলাকা পুনর্বিন্যাসের পর 2015 সালে মালদা জেলার দুই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷ ডিলিমিটিশনের পর ইংরেজবাজার পৌরসভার 25টি ওয়ার্ড বেড়ে হয় 29টি ৷ 2015 সালে এই পৌরসভার 12, 14 ও 20 নম্বর ওয়ার্ড তফশিলি জাতি সংরক্ষণের আওতায় পড়ে ৷ এর মধ্যে 14 নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা তফশিলি জাতি সংরক্ষিত ছিল ৷ মহিলা সংরক্ষিত ছিল 2, 5, 8, 11, 16, 19, 23, 26 ও 29 নম্বর ওয়ার্ড ৷ এবারও 2011 সালের জনশুমারি অনুযায়ীই পৌর নির্বাচন হওয়ার কথা ৷ প্রশাসন সূত্রে খবর, জনসংখ্যা, তপশিলি জাতি ও উপজাতি সহ অন্য বিষয়ের প্রেক্ষিতে এবার 22, 26 ও 27 নম্বর ওয়ার্ড তপশিলি জাতি সংরক্ষিত হতে চলেছে ৷ এর মধ্যে 27 নম্বর ওয়ার্ডটি তপশিলি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার কথা ৷ এর সঙ্গে 1, 3, 6, 9, 12, 15, 18, 21, 25 ও 28 নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হতে যাচ্ছে ৷ এতেই সমস্যায় পড়েছেন অনেক কাউন্সিলর ৷ এদের মধ্যে রয়েছেন খোদ পৌরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ রয়েছেন অনেক বাঘা কাউন্সিলররাও৷
গোটা বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার অন্দরে এখন ফিসফাস চলছে ৷ চলছে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি চালাচালির পালা ৷ গত 28 ডিসেম্বর রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়, এবার এই জেলার দুটি পৌরসভার নির্বাচনই তৃতীয় রোস্টার মেনে হবে ৷ তার আগে গত 11 ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলাশাসককে (উন্নয়ন) দেওয়া এক চিঠিতে (memo no. 1654/IV-2/19-20) ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রাক্তন এগজিকিউটিভ অফিসার চন্দন দে 29টি ওয়ার্ডের সংরক্ষণ অবস্থা লিখিতভাবে জানান৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, পৌরসভার দুই লাখ পাঁচ হাজার 521 জন ভোটারের মধ্যে তপশিলি জাতিভূক্ত রয়েছে 19 হাজার 753 জন ভোটার (9.61 শতাংশ)৷ তফশিলি উপজাতিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা দুই হাজার 521 (1.23 শতাংশ) ৷ কিন্তু অবসর নেওয়ার পর চন্দনবাবু জেলাশাসককে এই চিঠি দিতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ অনেক কাউন্সিলরই এর পিছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন ৷ কারণ, অতিরিক্ত জেলাশাসককে পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে ওই মেমো নম্বরে পৌরসভায় গ্রন্থভুক্ত নথিতে লেখা রয়েছে, নির্মাণ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে এই চিঠি করা হয়েছে ৷ এর বিরুদ্ধেই গত 10 জানুয়ারি জেলাশাসককে চিঠি দেন 4 কাউন্সিলর ৷ তাঁরা হলেন উপ পৌরপ্রধান দুলাল সরকার, দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ও নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি এবং 12 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাস ৷ চিঠির প্রতিলিপি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন), সদর মহকুমাশাসক তথা পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার এবং পৌর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত OC-র কাছেও পাঠানো হয়েছে৷ গোটা বিষয়টি তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছেন এক নাগরিকও ৷
অন্যদিকে গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে পৌর প্রশাসন ৷ এনিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে রাজি হননি জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্রও ৷ তবে পৌরসভার উপ পৌরপ্রধান দুলাল সরকার বলেন, "পৌর নির্বাচনের সংরক্ষণ সংক্রান্ত রোস্টার জেলাশাসকই করেন থাকেন ৷ পৌর এলাকার মোট ভোটারের সঙ্গে তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা দেখে সেই রোস্টার তৈরি করা হয়৷ তার জন্য পৌরসভা থেকে প্রশাসনকে কিছু তথ্য সরবরাহ করতে হয়৷ তার মধ্যে রয়েছে জনশুমারির তথ্যও৷ এই তথ্য নিয়েই খানিকটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ এনিয়ে পৌরসভার প্রাক্তন এগজ়িকিউটিভ অফিসার প্রশাসনকে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন৷ কিন্তু অবসরগ্রহণের পর সেই রিপোর্ট তিনি দিতে পারেন না৷ এনিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়৷ তিনি নিজের ভুল স্বীকারও করেছেন৷ সেই বিষয় নিয়ে দুই প্রাক্তন পৌরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ও নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিসহ আরও কয়েকজন আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন৷ এনিয়ে জেলাশাসককে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ তাঁকে বলা হয়েছে, এই চিঠির রেকর্ড পৌরসভায় খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ এই চিঠি পাঠানোর আগে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি৷ জেলাশাসক যেন সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে রোস্টার তৈরি করেন৷"