মালদা, 3 জুন : কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ খানিক স্তিমিত হলেও এখনও সংক্রমণের সংখ্যা কম নয় ৷ উপসর্গহীন ও কম উপসর্গযুক্তরা বাড়িতেই নিভৃতবাসে থাকছেন ৷ পরিস্থিতি একটু জটিল হলেই জেলার রোগীদের নিয়ে যেতে হচ্ছে মালদা মেডিকেলের কোভিড ইউনিটে ৷ তখনই সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ ৷ জেলায় অ্যাম্বুলেন্সের যে অভাব, তা নয় ৷ আসলে সুযোগ বুঝে মওকা হাতছাড়া করছে না চালকরা ৷ হাজারের ভাড়া উঠছে পনেরো হাজারে ৷ যখন এমন পরিস্থিতি, তখন উত্তর মালদার সাংসদের তহবিলের টাকায় কেনা অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে চাঁচলের এক আমবাগানে ৷ কেন এই ঘটনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চাঁচলে ৷ রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে ৷
চাঁচল মহকুমার বাসিন্দাদের জন্য কয়েক মাস আগে নিজের সাংসদ কোটার টাকায় রোটারি ক্লাব অফ চাঁচলকে একটি অ্যাম্বুলেন্স দান করেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ কথা ছিল, অ্যাম্বুলেন্সটি আইসিইউ পরিষেবাযুক্ত হবে ৷ ঘটা করে সেটির উদ্বোধনও করেন সাংসদ ৷ কিন্তু উদ্বোধনের দিন দেখা যায়, তাতে আইসিইউ পরিষেবা নেই ৷ তারপর থেকেই স্থানীয় একটি আমবাগানে ত্রিপল ঢাকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি ৷ আজ অবধি তার চাকা ঘোরেনি ৷
চাঁচলের বাসিন্দা দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ৷ সাংসদ উদ্বোধন করলেও এখনও মানুষ সেই অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধে নিতে পারেননি ৷ শোনা যাচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সটিতে নাকি আইসিইউ পরিষেবা নেই ৷ যে সংস্থাকে এই অ্যাম্বুলেন্স দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারাও নিজেদের ভূমিকা ঠিকমতো পালন করেনি ৷ কয়েক লাখ টাকায় কেনা গাড়িটি খোলা জায়গায় পড়ে রয়েছে ৷ ”
রোটারি ক্লাব অফ চাঁচলের সদস্য জয়ন্ত প্রামাণিক বলেন, “আমরা সাংসদের কাছে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের দাবি করেছিলাম ৷ তিনি আমাদের 24 লাখ টাকা দিয়েছিলেন ৷ আমরা সেই টাকায় গাড়ি কিনে উদ্বোধন করেছিলাম ৷ কিন্তু তখনই বলে দিয়েছিলাম, আইসিইউ না হলে এই অ্যাম্বুলেন্স চালাব না ৷ আমাদের কোনও স্বার্থ নেই ৷ মানুষের স্বার্থেই এই দাবি করেছিলাম ৷ পরবর্তীতে সাংসদ 13 লাখ টাকা অনুমোদন করেছেন ৷ জেলাশাসকের কাছেও তিনি চিঠি পাঠান ৷ গত ফেব্রুয়ারিতে আমাদের জানানো হয়, এর জন্য আমাদের দরপত্র জমা দিতে হবে ৷ আমরা সেটা জমা দিই ৷ কিন্তু তার মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় সব আটকে যায় ৷ গত 17 মে জেলা প্রকল্প আধিকারিক আবার আমাদের জানান, নতুন করে তিনটি কোটেশন জমা দিতে হবে ৷ সেসব জমা দেওয়া হয়েছে ৷ আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সাংসদের অনুমোদিত অর্থ পেয়ে যাব ৷ আমরা আইসিইউ সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ আগামী 10-15 দিনের মধ্যেই এই অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়ে যেতে পারে ৷”
সাংসদের অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে আমবাগানে আরও পড়ুন: যশের ফলে ব্যাপক বৃষ্টিতে জলমগ্ন মালদা শহর
এই ঘটনায় বিজেপি সাংসদকে কটাক্ষ করেছেন চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ তিনি বলেন, “যতদূর শুনেছি, এই অ্যাম্বুলেন্সের বিল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ৷ এই গাড়িতে যেসব জিনিস থাকার কথা, তা না বসিয়েই পারচেজ বিলে সে সব দেখানো হয়েছে ৷ এনিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল ৷ এখন দেখা যাচ্ছে, সে সব প্রশ্ন সঠিক ৷ হয়তো পুরোনো গাড়িই নতুন করে দেখানো হয়েছে ৷ আসলে সাংসদ যে দলের সদস্য, সেই দলের এটাই কালচার ৷ সাংসদেরই যদি এমন আচরণ হয়, তবে ভবিষ্যতে এই দল দেশটাকেই বিক্রি করে দিতে পারে ৷ যে ক্লাবকে এই অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল, তারাই বা কীভাবে সিসিইউ ছাড়া সেটা চালু করবে !”
এদিকে সাংসদ খগেন মুর্মুর বক্তব্য, “আমি দুটো অ্যাম্বুলেন্স একসঙ্গে দিয়েছিলাম ৷ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সকে যেটা দিয়েছিলাম, সেটা কাজ করছে ৷ চাঁচল রোটারি ক্লাবকে যেটা দিয়েছিলাম সেটাতে আইসিইউ পরিষেবা ছিল না ৷ আমি জেলাশাসককে টাকা দিতে বলে দিয়েছিলাম ৷ কারণ, সাংসদ কোটার অর্থ জেলাশাসকের কাছেই জমা থাকে ৷ উদ্বোধনের দিন জানতে পারি, আইসিইউ পরিষেবার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে ৷ আমি তখনই জেলাশাসককে সেই অর্থ দেওয়ার জন্য জানাই ৷ তার মধ্যে নির্বাচনবিধি লাগু হয়ে যায় ৷ সেই বিধি উঠে যাওয়ার পরেও জেলাশাসক অর্থ দেননি ৷ এনিয়ে আমি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ শেষ পর্যন্ত গত 1 জুন সেই অর্থ মঞ্জুর হয়েছে ৷ অ্যাম্বুলেন্সটি কেন চালানো হচ্ছে না সেটা রোটারি ক্লাব বলতে পারবে ৷ আমি নিজের কাজ করে দিয়েছি ৷ আর যিনি আমার দিকে আঙুল তুলছেন, তিনি ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন কী কাজ করেছেন ? ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি হলেও মালদা শহর জলে ভাসছে ৷ আগে তিনি নিজের কাজ নিয়ে চিন্তা করুন ৷”