মালদা, 26 মে: গত দু’বছরে মালদায় 100 দিনের কাজ প্রকল্পে অন্তত 1500 কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে (Corruption in 100 days work)। এই ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন সরকারি আমলাদের একাংশও । এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলছে বিজেপি । ইতিমধ্যেই মানিকচক ও রতুয়া 1 নম্বর ব্লকে প্রশাসনিক তদন্তে এই প্রকল্পে দুর্নীতি ধরা পড়েছে । তা নিয়ে পদক্ষেপও করেছেন জেলাশাসক (Malda corruption news)।
সম্প্রতি ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে 100 দিনের কাজে দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে । সদর মহকুমাশাসকের স্বাক্ষর থাকা ভুয়ো মেমো নম্বরে তৈরি কাগজপত্রে এখানে আট কোটি টাকার কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিল । বিষয়টি জেলাশাসকের নজরে আসতেই ওই কাজ আটকে দেন তিনি । তাঁর নির্দেশে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় এফআইআর দায়ের করেন বিডিও । এ বার প্রায় একই দুর্নীতি ধরা পড়েছে পুরাতন মালদা ব্লকের মঙ্গলবাড়ি, মুচিয়া, ভাবুক ও মহিষবাথানি পঞ্চায়েতেও । কোনও অনুমতি ছাড়াই এই চারটি পঞ্চায়েত 100 দিনের কাজ প্রকল্পে 302টি প্রকল্প আপলোড করেছে বলে খবর । বিষয়টি নজরে আসতে কাজ বন্ধ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র ।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি জেলার প্রতিটি ব্লকের 100 দিনের কাজ প্রকল্পগুলি নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন । তখনই এই কাজের পোর্টালে তাঁর নজরে আসে, পুরাতন মালদা ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের 302টি এমন প্রকল্পের উল্লেখ রয়েছে, যে প্রকল্পের অনুমোদন তিনি দেননি । তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই প্রকল্পগুলির অধিকাংশেরই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে । কোনও কোনও কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে । সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই ব্লকের বিডিওকে সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন । গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে বিডিওকে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ।
মালদায় 100 দিনের কাজে দুর্নীতি বিডিও মহম্মদ ইরফান হাবিবের দাবি, যে প্রকল্পগুলির কথা বলা হচ্ছে, তার বেশিরভাগের কাজ শুরু হয়নি । তিনি বলেন, “এই প্রকল্পগুলি বন্ধ করার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । তবে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ কাজ শুরুই হয়নি । আসলে প্রকল্পের নামের পরিবর্তনের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে । জেলাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছি । কোথাও কোনও দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।”
আরও পড়ুন:Partha appears before CBI: এসএসসি কাণ্ডে দ্বিতীয়বার সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা পার্থর
এ নিয়ে শুধু তৃণমূল নয়, প্রশাসনিক আমলাদের একাংশের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন বিজেপির জেলা মুখপাত্র অম্লান ভাদুড়ি । তিনি বলেন, “গত দু’বছরে মালদা জেলায় 100 দিনের কাজ প্রকল্পে অন্তত 1500 কোটি টাকা লুঠপাট হয়েছে । এর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ অবশ্যই জড়িত রয়েছে । নইলে এত টাকা লুটপাট করা সম্ভব নয় । গোটা জেলা জুড়েই এই কাজ চলছে । যখন সেন্ট্রাল ভিজিলান্স টিম কিংবা অন্যান্য তদন্তকারী দল জেলায় তদন্ত করতে আসছে, তখন এই প্রশাসনিক কর্তারা ধরা পড়ার ভয়ে এই দুর্নীতি থেকে নিজেদের হাত তুলে নিচ্ছেন । তাঁরাই এ সব ভুয়ো বলে চালাতে চাইছেন । এখানে কোনও প্রকল্পের মোট টাকার 10 শতাংশও খরচ হয় না । সব টাকা সরকারি আমলা আর তৃণমূলের নেতৃত্বের পকেটে যায় । আমরা এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি । আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব ।”
বিষয়টি নিয়ে কার্যত অম্লানবাবুর সুরেই কথা বলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্যনেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, “এ নিয়ে একটা চক্রান্ত চলছে । কিছু লোক প্রকল্পের নথিপত্রে জালিয়াতি করে রাজ্য সরকারকে বদনাম করার চেষ্টা করছে । এ সব ক্ষেত্রে জেলাশাসক সঠিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন । অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । শুধু পুরাতন মালদা নয়, গোটা জেলাতেই এই কাজ চলছে। আমার প্রশ্ন, বিডিওরা কি ঘুমিয়ে রয়েছেন ? তাঁদেরই তো এ সব দুর্নীতি প্রথমে নজরে আসা উচিত । তাঁরা এমন উদাসীন কেন ? আমি একটা কথা সাফ জানিয়ে দিতে চাই, এ সব দুর্নীতির সঙ্গে কোনও প্রশাসনিক কর্তা কিংবা আমাদের দলের কেউ যুক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।”