মালদা, 5 অগস্ট : জাল নোট পাচারের করিডর হিসাবে অনেকদিন ধরেই কুখ্যাত মালদা। এবার কি এই জেলা বন্যপ্রাণী পাচারেরও করিডর হয়ে উঠছে। মালদা থেকে পরপর বিরল প্রজাতির পাখি উদ্ধার হওয়ায় সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে যাওয়া মানুষজন। যদিও মালদাকে বন্যপ্রাণী পাচারের করিডর হিসাবে মানতে নারাজ বন দফতর।
গত 27 জুলাই, বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে যোগবানী-কলকাতা এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরা থেকে উদ্ধার হয়েছিল 512টি বিরল প্রজাতির পাখি। তার মধ্যে ছিল আলেকজান্দ্রিয়া প্যারাকিট, সানকোর্স প্যারাকিট, প্লাম হেডেড প্যারাকিট ও হিল ময়না।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেই পাখিগুলি উদ্ধার করেছিল আরপিএফ। সেদিন ধরা পড়েছিল শেখ সাহিদ নামে এক পাচারকারী। মুখ ঢেকে পাখিগুলিকে পাচার করা হচ্ছিল। কারণ, মুখ ঢাকা অবস্থায় পাখি কোনও আওয়াজ করে না। শেখ সাহিদকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারে বন দফতর।
আরও পড়ুন : বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে 512টি টিয়া পাখি উদ্ধার
সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই এদিন রাতে ফের একই ট্রেনের সংরক্ষিত এস-4 কামরা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও 124টি বিপন্ন প্যারাকিট। তার মধ্যে রয়েছে একটি আলেকজান্দ্রিয়া, কয়েকটি রেড ব্রেস্টেড আর বেশিরভাগ প্লাম হেডেড। এবার মালদা স্টেশনের জিআরপি পাখিগুলিকে উদ্ধার করেছে। তবে এবার কোনও পাচারকারী ধরা পড়েনি। জিআরপির তরফে পাখিগুলিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন প্রবীর কুণ্ডু। একের পর এক এই ধরনের ঘটনায় তিনি কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূত দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, "মালদা যে বন্যপ্রাণী পাচারের করিডর হয়ে উঠছে তা কিন্তু বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। বারবার একই জিনিস কীভাবে ঘটছে? প্রশাসন সজাগ থাকলে মনে হয় এমনটা হত না। তাই আমার ধারণা, কোথাও সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে। গত সপ্তাহেই 500-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির টিয়া উদ্ধার হয়েছে। এদিন ফের 100-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার হয়েছে।’’
তাঁর কথায়, বারবার একই জায়গা দিয়ে এসব পাচারের চেষ্টা চলছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, কোথাও সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে শুধুমাত্র প্রশাসনের উপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করি, তবে প্রকৃতিও কিন্তু আমাদের ভারসাম্য নষ্ট করবে। পাখি চাষের জমি থেকে পোকা খেয়ে শষ্য রক্ষা করে, সাপও জমি থেকে ব্যাঙ কিংবা পোকামাকড় খেয়ে শষ্য বাঁচায়। কিন্তু সেসব এভাবে পাচার হয়ে গেলে তার প্রভাব শষ্যক্ষেত্রে নিশ্চতভাবে পড়বে।"