মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : সকালটা কাটে কোনওরকম ৷ দুপুর হলেই দুই নদী থেকে আতঙ্কের স্রোত বয়ে আসে বসতি এলাকায় ৷ এখনই পাওয়া যাবে ঝুপঝাপ শব্দ ৷ একটু একটু করে নদীতে পড়তে শুরু করবে কৃষিজমি, আমবাগান কিংবা সবজির খেত৷ গত 3-4 বছর ধরে বর্ষা মরশুমে একই ছবি রতুয়া 1 ব্লকে ৷ এবার যেন একটু বেশিই ৷ সবাই জানে, নদীতে ভাঙন হয় দুইবার ৷ জল বাড়ার সময়, আর জল কমতে শুরু করলে৷ কিন্তু এবার ছবিটা অনেকটাই পালটে গিয়েছে ৷ এখন দুই নদীতেই ভরা জল ৷ তার সঙ্গে জলের ঘূর্ণন হয়৷ এই জল কিছু সময় নদীর পাড়ে ঘুরতে থাকে ৷ জলে ফ্যানা ওঠে ৷ তারপরই ঝুপঝুপ করে পাড় ভাঙে জলে নামতে শুরু করে ৷ গত তিন বছরে এভাবেই দুই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় 75টি বাড়ি ৷ প্রচুর কৃষিজমি, আমবাগান সহ অনেক কিছু ৷ নদীতে সর্বস্ব চলে যাওয়ার আগে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে অন্তত 500 পরিবার ৷ কারণ, পাড় ভাঙার তীব্রতা বাড়লে ঘরবাড়ি কিংবা জিনিসপত্র সরানোর সময় পাওয়া যাবে না ৷ কিন্তু ঘর সরিয়ে নিলেও মাথা কোথায় গোঁজা যাবে? অনেকে নিজেদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বটে, তবে কতদিন সেখানে থাকা যাবে তা তাদের জানা নেই৷ এই মানুষজনের অভিযোগ, প্রকৃতির রোষে তারা ভিটেহারা ৷ অথচ প্রশাসন তাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না৷ এখনও পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থাও হয়নি ৷
গত 3-4 বছর ধরেই রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত৷ এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে ফুলহর ৷ এক দশকের বেশি সময় থেকে দুই নদী পাড় ভেঙে চলেছে ৷ এখন দুই নদীর মধ্যে দূরত্ব মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 3-4 বছরে প্রায় 75টি বাড়ি দুই নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে ৷ তবে মূলত গঙ্গাই বেশি বাড়ি গিলেছে ৷ অন্যদিকে ফুলহর গ্রাস করেছে কৃষিজমি৷ গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও ৷ 500টিরও বেশি পরিবার সময় থাকতে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যস্থানে চলে গিয়েছে ৷ সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে ৷ এই এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি৷ মানুষগুলোর অনেকে সরকারি জমির উপর ঘর বেঁধেছিল৷ ফলে এই মুহূর্তে তারাই পড়েছে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ৷