পদ্ম সংরক্ষণে স্কুলেই চাষ কর্তৃপক্ষের মালদা, 7 জুন: নীলাম্ব নুসিফেরা নাম বললে কতজন চিনতে পারবেন, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে ৷ আসলে এটাই হল ভারতের জাতীয় ফুল অর্থাৎ পদ্মের বিজ্ঞানসম্মত নাম ৷ বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির পদ্ম চলে এলেও ভারতবর্ষের আদি ও অকৃত্রিম পদ্মই জাতীয় ফুলের শিরোপার অধিকারী ৷ একটা সময় মালদা জেলাতেও এই প্রজাতির প্রচুর পদ্ম চাষ হত ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সময়ের সঙ্গে জেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ভারতীয় বুনো পদ্ম ৷ চাষিরা অন্য পেশায় পা বাড়িয়ে দিয়েছেন ৷ সেই চাষিদের সঙ্গে ফের পদ্মচাষে উৎসাহ দিতে এগিয়ে এসেছে পুরাতন মালদার কালাচাঁদ হাইস্কুল ৷ স্কুলের আঙিনাতেই পদ্ম ফোটাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷ তারা চাইছে, মালদায় ফের পুরোনো পদ্মের চাষ হোক ৷
জানা যাচ্ছে, স্কুল প্রাঙ্গণে এই প্রজাতির পদ্ম চাষের ভাবনা মাথায় এসেছিল স্কুলের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক ডঃ কমলকৃষ্ণ দাসের ৷ কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? কমলবাবুর উত্তর, "একসময় আমাদের মালদা জেলায় নীলাম্ব নুসিফেরা প্রজাতির পদ্মের ভালো চাষ হত ৷ এখন আর হয় না ৷ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই জেলার অধিকাংশ পদ্মচাষি সময়ের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে পদ্মচাষে আকর্ষণ হারিয়েছেন ৷ সংসার চালাতে তাঁদের অনেকে নিজেদের পেশা বদল করে ফেলেছেন ৷"
আরও পড়ুন:বাড়ির ছাদে জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ ইলেকট্রনিক্স টেকনিশিয়ানের
তাঁর কথায়, "পদ্মের চাষ করলে সেই দিঘি কিংবা জলাশয়ে মাছ চাষ করা যায় না ৷ কিন্তু পদ্মের তুলনায় মাছের চাষ করা বেশি লাভদায়ক ৷ এসব কারণে মালদা জেলায় পদ্মের চাষ অনেক কমে গিয়েছে ৷ এতে পদ্মের এই প্রজাতিটি বিপন্ন হতে চলেছে ৷ তাই এই প্রজাতির পদ্মকে সংরক্ষণ করার জন্য আমরা স্কুলের তরফে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি ৷ স্কুলে পদ্মচাষের বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকই প্রথম উদ্যোগ নেন ৷ সাড়ে সাত মাস আগে এই কাজে আমরা হাত দিয়েছিলাম ৷"
কমলবাবু আরও বলেন, "প্রথমে ট্যাংক তৈরি করা, তারপর পাঁকের জন্য নদীর মাটি আর গোবর সার মিশিয়ে রাখতে হয়েছে ৷ তারপর পদ্মের কন্দ বসানো হয়েছে ৷ প্রথমে আমরা এই ট্যাংকে থাকা জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম ৷ একাধিক দফতরের আধিকারিকরা স্কুলে এসে বলে গিয়েছিলেন, এখানে ডেঙ্গির আঁতুরঘর হচ্ছে ৷ আমরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও খুব একটা সফল হইনি ৷ পদ্মের কন্দ বসানোর সঙ্গে আমরা 10টি গাপ্পি মাছ ছেড়েছিলাম ৷ এখন সেই সংখ্যাটা প্রায় 300 ৷ আরেকটি বিষয় আমাদের নজরে এসেছে, এই ট্যাংকে গাপ্পি ছাড়ার পর থেকে স্কুলে আর মশা নেই ৷"
আরও পড়ুন:লেবু-মুসাম্বির বিকল্প, মুর্শিদাবাদে ফলছে বাংলাদেশের মাল্টা ফল
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাহুলরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, প্রায় বিপন্ন একটি প্রজাতির পদ্ম ফুলের সংস্করণ করতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে ৷ এতে ছাত্রছাত্রীরাও উপকৃত হবে ৷ তারা পাঠ্যক্রমে থাকা জলজ উদ্ভিদের অভিযোজন এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিচিতি পাবে ৷ এতে স্কুলের সৌন্দর্যায়নও বাড়বে ৷"