পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

বুদ্ধর দেখানো পথে বাংলায় চলতে চাইছেন মোদি? সাফল্য আসবে কি...

By

Published : Feb 22, 2021, 9:52 PM IST

শিল্পকে পাখির চোখ করে 2011 সালে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে চেয়েছিল বামেরা । দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার সময়ই তৃণমূলের স্লোগান ছিল শিল্পের পক্ষেই । আর এবার সেই শিল্পকেই হাতিয়ার করে বাংলায় পথ চলা শুরু করতে চায় বিজেপি । বাংলায় কি শিল্পের জোয়ার আসবে ? সাফল্য আসবে মোদির ঘরে ? না সবই শেষ পর্যন্ত সোনার পাথর বাটি ? আলোচনায় শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী ।

বুদ্ধর দেখানো পথে বাংলায় চলতে চাইছেন মোদি
বুদ্ধর দেখানো পথে বাংলায় চলতে চাইছেন মোদি

এ-যেন 2011-এর ফ্ল্যাশব্যাক । ফের একবার বাংলাকে কেন্দ্র করে শিল্প-বিপ্লবের ঝড় । সে-বার লড়াইটা ছিল বুদ্ধ বনাম মমতা । এবার নিঃসন্দেহে মোদি বনাম মমতা । আর শিল্পকে হাতিয়ার করার করার জন্য সেই হুগলিকেই পাখির চোখ করলেন মোদি-শাহরা ।

ন্যানো বিদায়ের 10-11 বছর কেটে গেলেও শিল্প-বিরোধী তকমা এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ । বিশেষত উৎপাদন শিল্পের প্রসঙ্গে বঙ্গের ওই প্রতিকূল ভাবমূর্তি যে আদৌ মোছেনি, রাজ্য সরকার আয়োজিত একাধিক শিল্প সম্মেলনের আলোচনা সভায় তার প্রমাণ মিলেছে বারবার । তৃণমূল সরকারের গালভরা ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর সভাতেও উঠে এসেছে বাংলায় উৎপাদন শিল্পের মলিন ছবি । যে মালিন্য ঢাকতে রাজ্য সরকার বহু তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করেছে । কিন্তু, এর বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা খোদ মন্ত্রী-আমলারাই ।

আর এবার ভোটের কয়েক মাসে আগে সেই শিল্পকেই হাতিয়ার করে পরিবর্তনের পরিবর্তন করার ডাক দিলেন নরেন্দ্র মোদি । দাবি করলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে রাজ্যে শিল্পের বাতাবরণ তৈরি হবে । বেকারের চাকরি হবে । গ্রাম-বাংলা থেকে শহর - সর্বত্র এক নতুন বাংলার জন্ম হবে ।

বাংলায় দ্বিতীয়বার বাম-মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একই ভাবে শিল্প-স্থাপনের ডাক দিয়েছিলেন । রাজ্যের নানা প্রান্তে একের পর এক শিল্প কারখানা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন-দেখিয়েছিলেন । শিল্পপতিদের বাংলায় আনার জন্য একাধিক রাজ্য, এমনকি দেশের বাইরেও ছুটে গিয়েছিলেন । তৎকালীন বাম-সরকারের চালনক্ষেত্র মহাকরণে একাধিক শিল্পপতির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করতে দেখা গিয়েছিল বুদ্ধবাবুকে ।

যদিও বাস্তব ছবিটা অন্য রকম । বুদ্ধবাবুর সেই ইচ্ছা-স্বপ্ন-চিন্তা কিছুই সফল হয়নি । বাংলায় সে ভাবে শিল্প কারখানা স্থাপন হয়নি । উল্টে, সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের ক্ষত নিয়ে কার্যত বনবাসে চলে যেতে হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে । ক্রমে গুরুত্ব হারিয়ে কার্যত সাইন বোর্ডে পরিণত হয়েছে বামফ্রন্ট ।

বামেরা শিল্প বিরোধী - এই তকমা ঘোচাতে চেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু । বোঝাতে চেয়েছিলেন ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত’ । পারেননি । বরং, এই স্লোগানই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তাঁর কাছে । হারিয়ে ছিলেন ক্ষমতা ।

পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্ষমতায় তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডাক দিয়েছিলেন শিল্প স্থাপনের । বছর বছর শিল্প সম্মেলন, ভিন রাজ্য-ভিন দেশ সফর, শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক - গত দশ বছরে সব কিছুই দেখেছেন বাংলার মানুষ । কিন্তু কাজের কাজ অথবা বাস্তব চিত্র ?

গত দশ বছরে বাংলায় কটা শিল্প-কারখানা স্থাপন হয়েছে, কত মানুষ কাজ পেয়েছেন, এমন কোনও তথ্য-নির্ভর পরিসংখ্যান শিল্পমন্ত্রীও তুলে ধরতে পারেননি ।

সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির বিদায়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন সেখানকার কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবেন । একাধিক আইনি জটিলতার পর জমি হয়তো কৃষকরা পেয়েছেন । কিন্তু সেই জমি কী কাজে লাগবে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন সেখানকার কৃষকরা ।

ফের একবার বাংলার মাটিতে শিল্প গড়ার ডাক । আর এবার তৃতীয় পক্ষ । বিজেপি ।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে এবার কি সাফল্য আসবে ? বাংলার মাটিতে শিল্প-কারখানা হবে ? গেরুয়া-সমর্থকরা বলছেন-দাবি করছেন হবেই । তাঁরা উদাহরণ দিচ্ছেন গুজরাতের । যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী । যে রাজ্য শিল্পপতিদের দিক থেকে কোনও দিনই মুখ ফেরায়নি । সেই গুজরাত মডেলকে হাতিয়ার করেই বাংলায় শিল্প স্থাপনের স্বপ্ন ফেরি করলেন নরেন্দ্র মোদি । আগে হলদিয়ায় আজ হুগলি । শিল্প স্থাপনের ফেরিওয়ালার ভূমিকায় বঙ্গে অবতীর্ন । কথা দিলেন শুধু হুগলি নয়, গোটা রাজ্যে শিল্প বিপ্লবের ।

সত্যিই কাজটা কি এতটা সহজ হবে? উৎপাদন শিল্পে এ রাজ্যের এমন দুর্দশার ব্যাখ্যা কী ?

শিল্পমহলের দাবি, জমি প্রশ্নে রাজ্যের অবস্থানই উৎপাদন শিল্পে লগ্নি-খরার অন্যতম কারণ । রাজ্যে বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে জমি পাওয়া কঠিন । রাজ্যের শিল্পতালুকেও তেমন সম্ভাবনা বিশেষ নেই ।

উৎপাদন শিল্পে লগ্নির বড় সুযোগ হাতছাড়া করে যার খেসারত দিতে হয়েছে । ন্যানো তো গিয়েইছে, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো-র মতো সংস্থাও বড় জমি না পেয়ে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প করতে পারেনি । এ দিকে রাজ্য সরকার (তৃণমূল কংগ্রেস) আগেই জানিয়ে দিয়েছে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না । অথচ, একাধিক মালিকানার জট কাটিয়ে শিল্প সংস্থার পক্ষে সরাসরি জমি কেনা বিপুল সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । এমতাবস্থায় শিল্পমহলের প্রশ্ন, জমি-নীতি না পাল্টালে পশ্চিমবঙ্গ বড় শিল্পে বিনিয়োগ কী ভাবে টানবে ?

আরও পড়ুন: তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদির মুখেও ‘বাংলার মেয়ে’-র প্রসঙ্গ

অর্থাৎ, ফের একবার দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা । যদি তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে, তাহলে সেই জমি জট কাটার সম্ভাবনা কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে । আবার, যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তারা কি রাতারাতি সব কিছু পরিবর্তন করতে পারবে ? না সেই পথে হাঁটার সাহস দেখাবে ?

দ্রুত পরিবর্তন-দ্রুত শিল্প, এই পরিকল্পনাই বুদ্ধবাবুর বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ । বিপুল ভোটে ক্ষমতায় ফিরে বিরোধীদের ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখানোর খেসারত তাঁকে দিতে হয়েছিল । হাত শক্ত হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতার ।

বামেদের সেই পথে নিশ্চয় হাঁটবে না বিজেপি । তবে জমি অধিগ্রহণ, জমি ব্যাঙ্ক - সব কিছুই কেমন যেন ধোঁয়াশার মধ্যে । মোদির আশ্বাস ফের একবার সোনার পাথরবাটি হয়ে বাংলার মানুষের সামনে ধরা দেবে না তো ? উত্তর পেতে কিছু দিন আরও অপেক্ষা করতে হবে ।

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details