এ-যেন 2011-এর ফ্ল্যাশব্যাক । ফের একবার বাংলাকে কেন্দ্র করে শিল্প-বিপ্লবের ঝড় । সে-বার লড়াইটা ছিল বুদ্ধ বনাম মমতা । এবার নিঃসন্দেহে মোদি বনাম মমতা । আর শিল্পকে হাতিয়ার করার করার জন্য সেই হুগলিকেই পাখির চোখ করলেন মোদি-শাহরা ।
ন্যানো বিদায়ের 10-11 বছর কেটে গেলেও শিল্প-বিরোধী তকমা এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ । বিশেষত উৎপাদন শিল্পের প্রসঙ্গে বঙ্গের ওই প্রতিকূল ভাবমূর্তি যে আদৌ মোছেনি, রাজ্য সরকার আয়োজিত একাধিক শিল্প সম্মেলনের আলোচনা সভায় তার প্রমাণ মিলেছে বারবার । তৃণমূল সরকারের গালভরা ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর সভাতেও উঠে এসেছে বাংলায় উৎপাদন শিল্পের মলিন ছবি । যে মালিন্য ঢাকতে রাজ্য সরকার বহু তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করেছে । কিন্তু, এর বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা খোদ মন্ত্রী-আমলারাই ।
আর এবার ভোটের কয়েক মাসে আগে সেই শিল্পকেই হাতিয়ার করে পরিবর্তনের পরিবর্তন করার ডাক দিলেন নরেন্দ্র মোদি । দাবি করলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে রাজ্যে শিল্পের বাতাবরণ তৈরি হবে । বেকারের চাকরি হবে । গ্রাম-বাংলা থেকে শহর - সর্বত্র এক নতুন বাংলার জন্ম হবে ।
বাংলায় দ্বিতীয়বার বাম-মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একই ভাবে শিল্প-স্থাপনের ডাক দিয়েছিলেন । রাজ্যের নানা প্রান্তে একের পর এক শিল্প কারখানা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন-দেখিয়েছিলেন । শিল্পপতিদের বাংলায় আনার জন্য একাধিক রাজ্য, এমনকি দেশের বাইরেও ছুটে গিয়েছিলেন । তৎকালীন বাম-সরকারের চালনক্ষেত্র মহাকরণে একাধিক শিল্পপতির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করতে দেখা গিয়েছিল বুদ্ধবাবুকে ।
যদিও বাস্তব ছবিটা অন্য রকম । বুদ্ধবাবুর সেই ইচ্ছা-স্বপ্ন-চিন্তা কিছুই সফল হয়নি । বাংলায় সে ভাবে শিল্প কারখানা স্থাপন হয়নি । উল্টে, সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের ক্ষত নিয়ে কার্যত বনবাসে চলে যেতে হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে । ক্রমে গুরুত্ব হারিয়ে কার্যত সাইন বোর্ডে পরিণত হয়েছে বামফ্রন্ট ।
বামেরা শিল্প বিরোধী - এই তকমা ঘোচাতে চেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু । বোঝাতে চেয়েছিলেন ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত’ । পারেননি । বরং, এই স্লোগানই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তাঁর কাছে । হারিয়ে ছিলেন ক্ষমতা ।
পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্ষমতায় তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডাক দিয়েছিলেন শিল্প স্থাপনের । বছর বছর শিল্প সম্মেলন, ভিন রাজ্য-ভিন দেশ সফর, শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক - গত দশ বছরে সব কিছুই দেখেছেন বাংলার মানুষ । কিন্তু কাজের কাজ অথবা বাস্তব চিত্র ?
গত দশ বছরে বাংলায় কটা শিল্প-কারখানা স্থাপন হয়েছে, কত মানুষ কাজ পেয়েছেন, এমন কোনও তথ্য-নির্ভর পরিসংখ্যান শিল্পমন্ত্রীও তুলে ধরতে পারেননি ।
সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির বিদায়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন সেখানকার কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবেন । একাধিক আইনি জটিলতার পর জমি হয়তো কৃষকরা পেয়েছেন । কিন্তু সেই জমি কী কাজে লাগবে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন সেখানকার কৃষকরা ।