কলকাতা, 13 জুলাই : লকডাউনের কারণে প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালিত বিভিন্ন সরকারি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ৷ শুধুমাত্র কয়েকটি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ছাড়া 21 মার্চ থেকে হয়নি কোনও লিখিত পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ । এই পরিস্থিতিতেই ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পথ অনুসরণ করে অগাস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করেছে WBPSC । এর আগে মার্চ থেকে অগাস্ট পর্যন্ত মোট 23টি পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে ৷ সম্প্রতি 36টি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে কমিশনের তরফে । তবে, সম্ভাব্য ওই দিনগুলিতে পরীক্ষা হবে কি না তা পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন WBPSC-র চেয়ারম্যান ।
22 মার্চ জনতা কারফিউয়ের আগের দিন থেকেই সব লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়েছিল WBPSC । এরপর লকডাউনের মেয়াদ যত বৃদ্ধি হয়েছে তত স্থগিত হয়েছে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ । WBPSC চেয়ারম্যান দেবাশিস বোস জানিয়েছেন, চলতি বছররের 21 মার্চ থেকে অগাস্ট পর্যন্ত মোট 23টি পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে ৷ ওই পরীক্ষাগুলির মধ্যে ESI হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার গ্রেড থ্রি, সরকারি কলেজের লাইব্রেরিয়ান, সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের লাইব্রেরিয়ান, ICDS সুপারভাইজ়ার, ICDS সুপারভাইজ়ার অন প্রমোশন, ক্লার্কশিপ এগজ়ামিনেশন 2019 পার্ট-টু, WBCS 2020 মেন পরীক্ষা, উদ্যান পালন প্রযুক্তি সহায়ক, সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপকের মতো বহু পদের পরীক্ষা ছিল । সবমিলিয়ে প্রায় 9 হাজার শূন্যপদের জন্য প্রায় আড়াই লাখ প্রার্থী ছিলেন । কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দিতে পারেননি কেউই । অন্যদিকে, WBCS 2018-র গ্রুপ-C-র 9টি পদের ইন্টারভিউ মাঝপথেই থমকে গেছিল । এরপর,WBPSC-র চেয়ারম্যান লকডাউন চলাকালীন সময়েই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, যতদিন না পর্যন্ত গণপরিবহন স্বাভাবিক ব্যবস্থা সচল হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাকরির কোনও লিখিত পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্ভব নয় । রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, 20 এপ্রিল থেকে খুব কম সংখ্যক কর্মচারী নিয়ে ও আনলক-1 গত 8 জুন থেকে 70 শতাংশ কর্মচারী নিয়ে কাজ করে চলেছে কমিশন । 20 এপ্রিলের পর থেকে একে একে একাধিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে ।
এই বিষয়ে WBPSC-র চেয়ারম্যান দেবাশিস বোস বলেন, "আমরা পিছিয়ে গেলাম অনেকটা । পিছিয়ে গেলাম অর্থে, যেখানে পরীক্ষা হয়ে গেছে ইন্টারভিউ নেওয়া বাকি ছিল, এই সবক্ষেত্রেই আমরা তিনমাস কিছু করতে পারলাম না । ফলে গোটা প্রক্রিয়া অনেকটা পিছিয়ে গেল । লকডাউনের সময় 23টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল । সেগুলো হতে পারল না । স্বভাবতই তাঁরা একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাঁরা অনেকটাই হতাশ হয়েছেন পরীক্ষা দিতে পারলেন না বলে । আমরাও হতাশ।" শুধু পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া নয়, লকডাউনের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনের তৈরি করা সিডিউলেও । যেমন, WBCS 2018-র গ্রুপ-C পদের জন্য চলছিল ইন্টারভিউ । এই বছরে গ্রুপ-D পদের জন্যও ইন্টারভিউয়ের যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের কথা ছিল । WBCS 2019-এর মেন পরীক্ষার ফলাফল এবং WBCS 2020-র প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল চলতি বছর মে মাসে প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানিয়েছিল কমিশন । মিসলেনিয়াস সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট 2019-র প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল জুন-জুলাই মাসে, ওয়েস্ট বেঙ্গল লিগ্যাল সার্ভিস এগজ়ামিনেশন 2018-র মেন পরীক্ষার ফলাফল মে মাসে, ওয়েস্ট বেঙ্গল অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সার্ভিস 2019-র প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল জুন মাসে, সাব-ইন্সপেক্টর অফ স্কুল 2018-র চূড়ান্ত মেধাতালিকা মার্চ মাসে প্রকাশ করার কথা ছিল । এভাবেই বহু গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্ট্যাটাসের তালিকা গত 8 মার্চ প্রকাশ করেছিল WBPSC । সেই সম্ভাব্য নির্ঘণ্টের তালিকা অনুযায়ী, মিসলেনিয়াস সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট এগজ়ামিনেশন 2018-র মেন পরীক্ষার ফলাফল চলতি বছর মার্চে প্রকাশ করার কথা থাকলেও লকডাউনের কারণে জুন মাসে তা প্রকাশ করে কমিশন ।
দীর্ঘ তিনমাস পর অবশেষে স্থগিত থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে সক্রিয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন । ইতিমধ্যেই 36টি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফ থেকে । লকডাউন চলাকালীন সময়ে স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলি সহ মোট 36টি পরীক্ষার সম্ভাব্য দিনের তালিকা জুলাই মাসের প্রথমেই কমিশনের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হয়েছে । পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলি কোন অবস্থায় রয়েছে তার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখের নতুন তালিকা অনুযায়ী, 13 অগাস্ট থেকে ফের পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে WBPSC । এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান দেবাশিস বোস বলেন, " আমরা চেষ্টা করব লকডাউন উঠে যাওয়ার পর যখন পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, সবাই যখন আসতে পারবেন, সরকার যখন নির্দেশ দেবে তখনই আমরা দ্রুত কাজগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব । যেখানে আগে হয়ত দিনে একটা পরীক্ষা হত, সেখানে আমরা একটা দিনের দু'টো অর্ধকে ব্যবহার করে এক একটি অর্ধে একটি করে পরীক্ষা রেখেছি । আবার যেখানে ছোটো ছোটো পরীক্ষা, যেখানে অল্প সংখ্যক প্রার্থী আছেন সেগুলি আমরা ছুটির দিন বাদ দিয়েও ফেলেছি । অনেক সময় একটি দিনকে দু'টো-তিনটে হাফে ভাগ করে দ্রুত পরীক্ষাগুলি নেওয়ার চেষ্টা করছি । যাতে এই বছরের শেষে না হোক, 2021 সালের মার্চ মাসের মধ্যে আমরা আপডেটেড হয়ে যেতে পারি । অর্থাৎ, আমরা আশা করি, যদি অগাস্ট মাস থেকে লকডাউন উঠে যায় তাহলে আমরা যে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিলাম, আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যে যে গতিতে কাজ করতে চেয়েছিলাম, সেই গতিতে কাজ করলে যা ফল হত অর্থাৎ, যতগুলি পরীক্ষার ফল বের হত, যতগুলো পরীক্ষা হত, যতগুলি ইন্টারভিউ হত ততগুলি করে দিতে পারব ।"