কলকাতা, 20 মে : এবার দেওয়াল লিখনকে হাতিয়ার করে দ্রুত নিয়োগের দাবি তুলে ধরলেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার প্রতি ব্লকে এই দেওয়াল লিখন কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে, জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চপ্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ। এর পাশপাাশি ঘরে বসেও প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা । 27 মে প্রত্যেক আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীকে সোশাল মিডিয়ায় লাইভ ভিডিয়োর মাধ্যমে নিজেদের দাবি তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ।
2014 সালে প্রকাশিত হয়েছিল আপার প্রাইমারি স্তরের টিচার এলিজিবিলিটি টেস্টের (TET) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি। 2015 সালের অগাস্ট মাসে হয় TET পরীক্ষা। ফলাফল প্রকাশ হয় 2016 সালে ৷ সেবছরই আপার প্রাইমারি স্তরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া হয়। কিন্তু, তারপর বেশ কয়েক বছর থমকে থাকে নিয়োগ প্রক্রিয়া। অবশেষে 2019 সালে শুরু হয় নথি যাচাই প্রক্রিয়া। তারপরই তৈরি হয় একাধিক আইনি জটিলতা। সেইসব কাটিয়ে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আপার প্রাইমারির চূড়ান্ত শূন্যপদ মোট 14 হাজার ৮৮টি। কিন্তু, ইন্টারভিউ চলাকালীন আবার অনিয়মের অভিযোগ তুলে মামলা হয় হাইকোর্টে। সেই মামলা চলাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশে একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করেছিল SSC। কিন্তু, সেই মেধাতালিকাতেও দেখা যায় অসঙ্গতি। ফের হাইকোর্টে হয় মামলা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট। এখনও বহাল রয়েছে সেই স্থগিতাদেশ। এর মধ্যেই কোরোনার জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণা হয় রাজ্যজুড়ে। বন্ধ হয়ে যায় হাইকোর্ট। একদিকে মামলা ও অন্যদিকে কোরোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে চলা লকডাউনে অনিশ্চিত হয়ে যায় আপার প্রাইমারি স্তরের শিক্ষক নিয়োগের ভাগ্য।
আপার প্রাইমারি নিয়োগের অনিশ্চিয়তা কাটাতে আগের মতোই আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা। লকডাউনের মধ্যে আন্দোলনের চরিত্র বদলে সোশাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেছে তাঁরা । নিজেদের দাবি শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সহ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাড়িতে বসেই প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা। 29 এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চপ্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের বাড়িতে বসে আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী নিজেদের বাড়িতে, মুখে মাস্ক পরে, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই প্রতিবাদের ছবি সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইলে, চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে, শিক্ষামন্ত্রীর ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করছিলেন তাঁরা। আবার বাড়িতে বসে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে উচ্চপ্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ ।
27 মে সকাল 10টা থেকে দুপুর 3টে পর্যন্ত বাড়িতে বসে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ। তবে, এবার ছবি নয়, নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে গিয়ে 'প্রোটেস্ট ফ্রম হোম' হ্যাশট্যাগ ব্যবহার 2-3 মিনিটের লাইভ ভিডিয়ো করতে হবে । দাবি, জরুরি ভিত্তিতে মামলার নিষ্পত্তি করে আপার প্রাইমারি স্তরে শিক্ষক নিয়োগ করা হোক । এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চপ্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের তরফ থেকে মৌমিতা ঘোষ বলেন, "কোরোনা ভাইরাসের কারণে গোটা দেশজুড়ে লকডাউন চলছে । হাইকোর্ট বন্ধ রয়েছে । সেজন্য আপার প্রাইমারি সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি হচ্ছে না । এর জেরে বহুদিন ধরে নিয়োগ আটকে রয়েছে। আমরা আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরতে আগামী ২৭ মে প্রোটেস্ট ফ্রম হোম ট্যাগলাইনে আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে হাইকোর্টে চলা মামলার নিষ্পত্তি করে, 1: 1: 4 রেশিও মেইনটেইন করে, টেটের সঠিক ওয়েটেজ় দিয়ে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।"
লাইভ ভিডিয়োর পাশাপাশি দেওয়াল লিখনের কর্মসূচির মাধ্যমেও নিজেদের দাবি তুলে ধরছেন উচ্চপ্রাথমিক শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। একজন প্রার্থী দ্রুত নিয়োগের দাবিতে নিজের এলাকার একটি দেওয়ালে লিখেছেন। এরপর রাজ্যের প্রতিটি জেলার ব্লকে ব্লকে দেওয়ার লিখন কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
