কলকাতা, 12 এপ্রিল: এবার মিড-ডে মিলেও 100 কোটির দুর্নীতির অভিযোগ উঠল রাজ্যের বিরুদ্ধে । জানা গিয়েছে, যৌথ রিভিউ মিশন মিড-ডে মিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে রিপোর্ট জমা করেছে তাতে বলা হচ্ছে, প্রায় 100 কোটির দুর্নীতি হয়েছে । যদিও কেন্দ্রের এই অভিযোগকে আমল দিচ্ছেন না রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু । প্রাথমিকভাবে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, "ইতিমধ্যেই একুশ বাইশের সিএজি রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে । তাতে এই ধরনের কোনও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি । পরবর্তী বছরের সিএজি অডিট চলছে ৷ সেখানে এমন কোনও দুর্নীতির অভিযোগ আসে কি না সেটাই দেখার ।"
তবে এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অভিযোগ, যৌথ রিভিউ মিশনের তরফ থেকে মিড ডে মিলের বিষয়টি পর্যালোচনা জন্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় টিম এসেছিল । সেখানে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে তাতে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধির সই ছিল না । এই অবস্থায় এই এক তরফা রিপোর্টের কী গুরুত্ব রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য ৷ প্রসঙ্গত, এই বিষয়টি নিয়েই ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল । তা নিয়ে এখনও জবাব আসেনি । কাজেই এই অভিযোগকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে চাইছে না রাজ্য সরকার ।
ঠিক কী অভিযোগ রয়েছে, তা একবার দেখে নেওয়া যাক । কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মিড-ডে মিলের যা খরচ, তা বাড়িয়ে দেখিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । বলা হয়েছে, 16 কোটি মিড-ডে মিল কম দিয়ে 100 কোটি টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে রাজ্য । কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 2022 সালে প্রথম দুই অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের তরফে 140 কোটি 25 লক্ষ মিড-ডে মিলের রিপোর্ট পেশ করা হয় । অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনের রিপোর্টে 124 কোটি 22 লক্ষ মিড-ডে মিলের উল্লেখ রয়েছে । এর মধ্যেই 100 কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ।
এদিকে এর জবাব দিতে গিয়ে এদিন ব্রাত্য বসু জানান, যৌথ রিভিউ মিশন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধির অনুমতি ছাড়াই এই রিপোর্টটি জমা দিয়েছে । সেই রিপোর্টটা যদি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে দেখানো পর্যন্ত না হয়, তাহলে যৌথ রিভিউ মিশন অর্থাৎ যৌথ পর্যালোচনা কমিটি-র 'যৌথ'তা টা কোথায় রইল ? কাজেই, এটা তো পরিষ্কার যে রাজ্য সরকারের বক্তব্য ওই রিপোর্টে যথাযথভাবে স্থান পায়নি । বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ সেই মৰ্মে প্ৰতিবাদ করে একটা চিঠি ওই কমিটির চেয়ারপার্সনকে দিয়েছে ৷ যার কোনও জবাব আমরা আজ পর্যন্ত পাইনি । এই 'লুকোচুরি খেলাটার কী উদ্দেশ্য, যদি না এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারে অন্য কোনও অভিসন্ধি থাকে ? এখন প্রেস রিপোর্ট থেকে যা দেখছি, সেখানে প্রচুর তথ্য এবং সংখ্যা আছে, যা যাচাই না করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া কার্যত অসম্ভব ।
দ্বিতীয়ত, এটাও দেখা প্রয়োজন যে যৌথ রিভিউ মিশনের রিপোর্টটিতে যা তথাকথিত 'অবৈধতা' বলা হচ্ছে তাতে রাজ্য সরকারের বক্তব্য কতটা প্রতিফলিত হয়েছে । তারপরেই আমরা যথাযথ প্রতিক্রিয়া দিতে পারব । সিএজি 2021-2022 অর্থবর্ষ পর্যন্ত তাদের অডিট সম্পূর্ণ করেছে ৷ যার মধ্যে কিন্তু এই ধরনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি । আমরা যৌথ রিভিউ মিশনের রিপোর্টটা পাই বা না পাই, বা আমাদের প্রতিনিধির সই থাক বা নাই থাক এবং কেন সই নেই তার উত্তর চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে পাই বা না পাই, আমরা বিশদে এই রিপোর্টের জবাব পাঠাব । পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মোট 12 কোটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে 1.2 কোটি ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিল পরিষেবা দেয় ৷ যার অডিট সিএজি আবার রাজ্যজুড়ে করছে । কাজেই তাদের রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা যাক !
এরপরেই প্রশ্ন উঠেছে কার অভিযোগ সত্য । বাস্তব আসলে কী ! তথ্য বলছে বাস্তব যাই হোক না কেন এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে । চলছে দোষারোপ এবং পালটা দোষারোপের পর্ব ৷
আরও পড়ুন:কলকাতা পৌরনিগমের মিড ডে মিল-খরচে গড়মিল! শিক্ষা বিভাগের কাছে জবাব তলব