পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ডায়াগনস্টিক প্রোটোকলে বদল, বাড়ছে স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয় কেন্দ্র

স্ক্রাব টাইফাসের ডায়াগনস্টিক প্রোটোকলে আনা হচ্ছে বেশ কিছু বদল । বাড়ানো হচ্ছে স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয়ের জন্য কেন্দ্রের সংখ্যাও । যা নিয়ে শীঘ্রই জারি হতে চলেছে নির্দেশিকা ।

স্বাস্থ্য় ভবন
স্বাস্থ্য় ভবন

By

Published : Nov 30, 2019, 2:37 AM IST

Updated : Dec 1, 2019, 10:41 AM IST

কলকাতা, 30 নভেম্বর : রাজ্যে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা চলতি বছরে বেশি দেখা যাচ্ছে । যা ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তরকে । পরিস্থিতির মোকাবিলায় পদক্ষেপ করছে তারা । এই পদক্ষেপ অনুযায়ী, স্ক্রাব টাইফাসের ডায়াগনস্টিক প্রোটোকলে আনা হচ্ছে বেশ কিছু বদল । বাড়ানো হচ্ছে স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয়ের জন্য কেন্দ্রের সংখ্যাও । গতকাল স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি বৈঠকের পর জানা গেছে, এসব নিয়েই শীঘ্রই জারি হতে চলেছে নির্দেশিকা ।

স্ক্রাব টাইফাসের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় বলে আগে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তর । সরকারি চিকিৎসকদের একাংশও জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় । তবে, রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যআ বাড়ায় বিষয়টি এবার ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের । চিকিৎসকরা বলছেন, স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা এই বছর বেশি দেখা যাচ্ছে । বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, চলতি বছরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা সত্যিই অনেক । উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গ ও মূলত জঙ্গলমহলের বিভিন্ন অংশে এর প্রকোপ বেশি নজরে এসেছে । পরিস্থিতি মোকাবিলায়, আজ বৈঠকে বসে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিরকারিকরা । সূত্রের খবর, এই বৈঠকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত স্ক্রাব টাইফাসে সব থেকে বেশি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান তথা জঙ্গলমহলের বিভিন্ন অংশে । এর পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের আরও কিছু জেলায় আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে ।

স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, "উত্তরবঙ্গের তুলনায় চলতি বছরে দক্ষিণবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে । তাই পরিস্থিতির মোকাবিলায় দক্ষিণবঙ্গকে নিয়ে এখন ভাবা হচ্ছে । স্ক্রাব টাইফাস পরীক্ষার জন্য ১৭টি সেন্টার রয়েছে । দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে এই সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে ।" কতগুলি সেন্টার বাড়ানো হচ্ছে ? তিনি বলেন, "স্ক্রাব টাইফাস পরীক্ষার সেন্টার জেলাস্তরে যাতে আরও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়, তার জন্য 8 থেকে 10টি সেন্টার আরও বাড়ানো হচ্ছে।" ঝোপঝাড় যে সব অঞ্চলে বেশি রয়েছে এবং ঝোপঝাড়ের স্থানে যেসব মানুষ যাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে । এ কথা জানিয়ে ওই আধিকারিক বলেন, "পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্ক্রাব টাইফাসের ডায়াগনস্টিক প্রোটোকলে কিছু বদল আনা হচ্ছে ।" কোন ধরনের বদল? তিনি বলেন, "জ্বর 7 দিন হয়ে গেলে যদি রোগনির্ণয় না হয়‌‌ । জ্বরের কারণ কী, তা জানা না যায় । তখন স্ক্রাব টাইফাসের পরীক্ষার জন্য বলা হয় । ডায়াগনস্টিক প্রোটোকলে যে বদল আনা হচ্ছে, তাতে 7 দিনের বদলে 5 দিন করা হচ্ছে । অর্থাৎ 5 দিন হয়ে গেলেও যদি জ্বরের কারণ নির্ণয় না হয়, তা হলে স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করাতে হবে ।"

স্বাস্থ্য দপ্তরের এই আধিকারিক আরও বলেন, "5 দিনের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে সব সময় স্ক্রাব টাইফাস পজ়িটিভ পাওয়া যায় না । তবে, রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে এই সময় পজ়িটিভ পাওয়া যেতে পারে । স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয়ে যাতে দেরি হয়ে না যায়, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত । এর ফলে হয়তো রক্ত পরীক্ষার সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে । কিন্তু স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের খোঁজ মিললে, চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে । স্ক্রাব টাইফাসের চিকিৎসা রয়েছে, ওষুধও রয়েছে । দ্রুত রোগনির্ণয় করা সম্ভব হলে রোগীকে সুস্থ করে তোলাও সম্ভব হবে ।" কোনও শিশু স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হলে তার কী ধরনের চিকিৎসা হবে সেবিষয়েও গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে ।

বৈঠকের জেরে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তার ফাইনাল রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে স্ক্রাব টাইফাসের মোকাবিলায় শীঘ্রই নির্দেশ জারি করতে চলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর । সূত্রের খবর, চলতি বছর রাজ্যে এখনও পর্যন্ত স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০-৬০০ এবং মৃতের সংখ্যা 2 । তবে, এই দুই রোগীর মৃত্যুর কারণ স্ক্রাব টাইফাস কি না, তা এখনও ঘোষণা করেনি স্বাস্থ্য দপ্তর।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্ক্রাব টাইফাসের ওষুধ রয়েছে । রোগনির্ণয় হচ্ছে, চিকিৎসার ব্যবস্থাও হচ্ছে । স্ক্রাব টাইফাসের বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই । যেখানে জঞ্জাল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে, সেই সব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা । ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগ । মাইট অর্থাৎ ছোট একটি পোকার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ । স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ আগে এত বেশি দেখা না গেলেও, বছর দু'য়েক ধরে অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে । এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এখন রোগনির্ণয় বেশি হচ্ছে বলে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি দেখা যেতে পারে । অথবা জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে বলে সেখান থেকে পোকা-মাকড়ের উৎপাত বাড়তে পারে । এর বলেও স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা পেতে পারে।

Last Updated : Dec 1, 2019, 10:41 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details