কলকাতা, 26 মে: ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে শুটআউটের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর গোয়েন্দারা । জানা গিয়েছে, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর গোয়েন্দারা ঘটনাস্থল থেকে একাধিক নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং নমুনাগুলি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ।
এই বিষয়ে সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোতে কর্মরত এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, পৃথিবীতে একমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা হাতের রেখা এমন একটি শারীরিক বৈশিষ্ট যা এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির মেলে না ৷ অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষের হাতের রেখা বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট আলাদা আলাদা । তদন্তকারী সংস্থাগুলি যখনই কোনও বড় ঘটনার তদন্তে নামে, সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত বা আটক হওয়া ব্যক্তি থেকে শুরু করে তদন্তের আওতায় থাকা সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট সকলের হাতের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে রাখেন ।
বর্তমানে ভবানী ভবন থেকে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংক্রান্ত তথ্যগুলি গোটাটাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করা হয় । যেকোনও অপরাধের ঘটনায় তদন্ত শুরু করার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে যে নমুনাগুলি সংগ্রহ করে আনেন সেগুলি প্রথমে ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় । এছাড়াও ভবানী ভবনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো বিভাগেও সেই নমুনা পাঠানো হয়, কম্পিউটারের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ফিঙ্গারপ্রিন্টগুলিকে স্ক্যান করে মিলিয়ে দেখা হয় । যদি পূর্বের কোনও অপরাধীর হাতের ছাপের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনা মিলে যায়, সেক্ষেত্রে অপরাধীর বা অভিযুক্তের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করতে দু'মিনিট লাগে ৷ ফলে অপরাধের কিনারা করারও সহজ হয় ৷
ভবানী ভবন সূত্রে খবর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোকে আরও উন্নত করে গড়ে তোলার জন্য ভবানী ভবনের ভিতরেই গড়ে তোলা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভিউয়ার নামে নতুন বিভাগ । সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গোটা অপরাধের সূত্র টেনে বার করা যায় । এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেহেতু ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো প্রথম এই রাজ্যের গোয়েন্দাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছে ফলে বর্তমানে রাজ্য গোয়েন্দা শাখার এই বিভাগকে আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে ৷ ব্যারাকপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যদি ঘটনাস্থলে অভিযুক্তরা হাতে গ্লাভস পরে অপরাধ না করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের হাতের ছাপ সংগ্রহ করে পরবর্তী তদন্ত চালিয়ে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন ৷
আরও পড়ুন: ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় সোনার দোকানে চলল গুলি, মৃত মালিকের ছেলে
উল্লেখ্য, গত বুধবার ভর সন্ধ্যাবেলায় ব্যারাকপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন আনন্দপুরি সেন্ট্রাল রোডের মতো একটি জমজমাট জায়গায় সোনার দোকানে ঢুকে ডাকাতি চেষ্টা এবং বাধা পেয়ে গুলি চালিয়ে দোকান মালিকের ছেলেকে খুনের ঘটনা ঘটে ৷ মৃতের নাম নীলাদ্রী সিংহ ৷ এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ ৷ ঘটনাস্থলের কিছু মাইল দূরেই রয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের অফিস ৷ এরকম জায়গায় ডাকাতিক মতো ঘটনা ঘটিয়ে ও খুন করে দুষ্কৃতীরা কীভাবে এলাকা থেকে চম্পট দিল সেই প্রশ্ন উঠেছে ৷ তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই দু'জনকে গ্রেফতার করেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ ।
আরও পড়ুন: শুটআউটের পর আজ থমথমে ব্যারাকপুর, নিহতের বাড়ি গেলেন সাংসদ অর্জুন