কলকাতা, 26 জুন: ভাইয়ের মৃতদেহ আগলে ছিলেন দাদা । দীর্ঘদিন ধরে ভাইয়ের মৃতদেহ আগলে রাখার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দাদা বীরেন্দ্র কুমারেরও । তাঁর মৃত্যুর প্রায় আট মাস আগেই মৃত্যু হয়েছিল ধীরেন্দ্রকুমার দে-র । ধীরেন্দ্রর দেহকেই ঘরে আগলে রেখেছিলেন দাদা । সোমবার দাদার দেহ এবং ভাইয়ের কঙ্কাল ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বেলঘড়িয়া এলাকার সেকেন্ড লেনে । তদন্তে নেমে পুলিশ আপাতত মানসিক অবসাদের দিকটি উত্থাপন করলেও মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এই প্রকারের ঘটনা সাধারণত জন্ম নেয় একাকিত্ব ও গভীর ভালোবাসার সম্পর্কের থেকে ৷
তবে শুধুমাত্র এ দিনের বেলঘড়িয়ার ঘটনা নয়, বরং 2015 সালে দক্ষিণ কলকাতার তিন নম্বর রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের ঘটনার পর থেকে রাজ্য তথা শহর ও শহরতলির বুকে এমন বহু হাড়হিম করা ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে থেকে এক ডজন তুলে ধরছি আমরা ৷
26 জুন, 2023
বেলঘড়িয়ার পূর্বপাড়ায় ভাইয়ের কঙ্কাল প্রায় 8 মাস ধরে আগলে রেখেছিলেন দাদা । পরে ওই একই অবস্থায় দাদারও মৃত্যু হয় । তদন্ত নেমে বেলঘড়িয়া থানার পুলিশের আপাতত সন্দেহ, দুজনেরই মানসিক সমস্যা ছিল । এ ক্ষেত্রে এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে এই পরিবারের কোনও যোগাযোগ ছিল না । অত্যন্ত সংরক্ষণশীল ছিল এই পরিবার, ফলে লোকচক্ষুর আড়ালেই এই হাড়হিম করা ঘটনা ঘটে যায় ।
2015 সাল
দক্ষিণ কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণি থানার আওতাধীন তিন নম্বর রবিনসন স্ট্রিটে পার্থ দে-এর ঘটনা সামনে এসেছিল । 10 জুন পার্থ দে-র বাবা অরবিন্দ দে-র দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় । 11 জুন উদ্ধার হয় একটি মহিলা ও দুই কুকুরের কঙ্কাল । পার্থ দে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, যে মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছিল, তিনি আদতে তাঁর দিদি ।
আরও পড়ুন:রবিনসন স্ট্রিটের চেয়েও মর্মান্তিক ! উদ্ধার ভাইয়ের কঙ্কাল ও দাদার পচাগলা দেহ
20 জুলাই, 2015
হুগলির নন্দননগর এলাকায় একটি বাড়িতে মায়ের দেহ আগলে রেখেছিলেন ছোট মেয়ে । পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারেন, মায়ের মৃত্যুকে মানতে না পেরে মায়ের মৃতদেহের সামনেই মাকে জীবিত ভেবে খাবার এনে দিতেন মেয়ে ।
28 ডিসেম্বর, 2018
সাউথ লেকে মায়ের দেহ আগলে ছিলেন মেয়ে । মৃতদেহ উদ্ধারের পর মেয়ে পুলিশকে বলে যে, তাঁর মা মৃত্যুর পরেও নাকি তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন ৷
28 অগাস্ট, 2019
দক্ষিণ 24 পরগনার সোনারপুর থানা এলাকায় একটি বাড়িতে দাদার দেহ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আগলে রেখেছিলেন বোন ।
4 অগাস্ট, 2019
কলকাতা পুলিশের সাউথ সাব-আর্বান ডিভিশনের আওতাধীন নেতাজি নগর থানা এলাকায় একটি বাড়িতে স্বামীর মৃত্যুর 5 দিন পর্যন্ত একই বিছানায় দেহ আগলে রেখেছিলেন স্ত্রী ।
4 এপ্রিল, 2020
ভবানীপুর থানা এলাকায় একই ঘরে ভাইয়ের দেহের সঙ্গে প্রায় এক সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন দিদি । পরে যখন ঘর থেকে মৃত ভাইয়ের দেহ বের করা হয়, সেটি প্রায় পচে গিয়েছিল । ঘটনার তদন্তে নেমেছিল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং সেখানে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা চরমে থাকার কারণেই ভাইয়ের মৃত্যু মানতে পারেননি দিদি ।