এসইউসিআইয়ের ব্রিগেড সমাবেশ কলকাতা, 5 অগস্ট:"বিজেপি হারলে ভালো । তবে 'ইন্ডিয়া' জোট জিতলেও দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবে না । কারণ, দেশের সব রাজনৈতিক দল ভোটের রাজনীতি করে । সাধারণ মানুষের স্বার্থে কেউ কিচ্ছুটি করে না ।" শনিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশ থেকে এমনটাই দাবি করলেন এসইউসিআই-এর সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ ।
এদিন প্রবীণ এই নেতা, "বিজেপি হারলে ভালো । ঔদ্ধত্য কমবে । তবে ইন্ডিয়া জোট সেলুকার নয় । এরা কেউ গণতান্ত্রিক নয়। এরাও অম্বানি, আদনির টাকা পায় । ওরা 30 টাকা পেলে বিজেপি 100 টাকা পায় । আমরা বামপন্থী ঐক্যবদ্ধ জোট চাই । ভোটের জন্য নয় । এদেশে কিছু হবে না । এই হতাশা বাড়ছে । সব দল সমান বললে আমাদের প্রতি অবিচার হবে । আমরা লোক ঠকাই না । নানা রাজনৈতিক দল লোক ভোলানো প্রতিশ্রুতি দেয় । আমরা দিই না । নেতারা ঠকায় ।"
1988 সালের 4 এপ্রিল শেষবার ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল এসইউসিআই । 35 বছর পর আবার ব্রিগেড সমাবেশের আয়োজন করল এসইউসিআই । দলের প্রতিষ্ঠাতা-প্রথম সাধারণ সম্পাদক শিবদাস ঘোষের জন্ম শতবার্ষিকীর সমাপ্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে এদিন ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছিল এসইউসিআই । ফলে, এ রাজ্য তো বটেই দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা থেকেও দলটির কর্মী-সমর্থকরা এদিন এখানে এসেছিলেন ৷
শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কর্মী-সমর্থকরা বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডমুখী ছিলেন । এই সমাবেশে শিবদাস ঘোষের জীবনী, তাঁর বাণী ও কাজের উপর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় । গত বছর 5 আগস্ট দিল্লিতে শিবদাস ঘোষের জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল । আজ তা ব্রিগেড সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় ৷
আরও পড়ুন: জঙ্গলে তো শেয়ালও থাকে, বিরোধী জোটে আপের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য কংগ্রেস নেতার
এদিনের সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ, হরিয়ানার রাজ্য সম্পাদক সত্যবান, কর্নাটক রাজ্য কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কে রাধাকৃষ্ণ । এই সমাবেশ উপলক্ষে এদিন ব্রিগেডে 130 ফুট লম্বা, 30 ফুট চওড়া মঞ্চ তৈরি করা হয় । সেই মঞ্চে একাধিক নেতা তাঁদের বক্তব্য পেশ করেন । বক্তব্যের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল সিপিআই, সিপিএম-সহ দেশের অন্যান্য বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির কর্মপন্থা ।
এসইউসিআই নেতাদের দাবি, ওই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি লেনিনবাদ বা মার্ক্সবাদী তথ্য, নীতি ভুলে শুধু ভোটের রাজনীতি করতে ব্যস্ত । তারা নীতি আদর্শ খুইয়ে ভোট সর্বস্ব বামপন্থী দলে পরিণত হয়েছে । যে কারণে দেশের এক সময়ের অন্যতম প্রধান বিরোধী সিপিআই আজ ধুঁকছে । এরাজ্যে 34 বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও সিপিএম আজ রাজ্যে বহু জায়গায় প্রায় নিশ্চিহ্ন ৷
এদিন এসইউসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ বলেন, "সিপিআই তখন বিদ্রুপ করেছিল । ব্যাঙের ছাতার মতো বেচেঁ থাকার কথা বলেছিল । এতগুলি বামদল কোনওরকমে ধুঁকছে । তারপর নতুন দল গড়ে তুলতে চাইলেই তা সম্ভব নয় । সিপিএম, সিপিআই, এআইএফবি থেকে শুরু করে একাধিক বামপন্থী দল এসইউসিআই-কে রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ্য করেনি । আমরা কীভাবে আমাদের কর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করি ! তিনটি দল আজ নিশ্চিহ্ন । আরএসপি, এআইএফবি, সিপিআই এক সময় লোকসভায় বড় বিরোধী দল ছিল । তারা আজ কোথায় ? সিপিএম এক সময়ে এরাজ্যে 34 বছর ক্ষমতায় ছিল । তদের এখন কী অবস্থা । বাংলার মতো রাজ্যে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ছে । একজন পীরকে নেতা বানিয়ে জোট করেছে । তারা ইন্ডিয়া জোট করেছে । আজ আমরা এগিয়ে চলেছি । একমাত্র বামপন্থী রাজনৈতিক দল তারা দিনে দিনে বাড়ছে ।" সিপিএমের ভূমিকা মার্কসবাদ বিরোধী বলেও এদিন মন্তব্য করেছেন প্রভাস ঘোষ ৷
আরও পড়ুন: 'গায়ের জোরে কাশ্মীরের আবেগকে হত্যা করা হয়', 370 বিলোপের স্মৃতিতে ডুব মুফতির
প্রভাস ঘোষের আরও অভিযোগ, বিজেপি রাম মন্দির তৈরি করছে ভোটের জন্য । 'ইন্ডিয়া' জোট তৈরি হয়েছে স্বার্থে জন্য । কংগ্রেসকে সেকুলার বানাচ্ছে সিপিআইএম । তারমধ্যে তৃনমূলও সামিল ! পরিবর্তনের নামে সিন্ডিকেটের রাজত্ব চলছে, ভোটের নামে রক্ত ঝরছে রাজ্যে । সরকারি কর্মচারীরা আন্দোলন করতে পারবে না বলা হচ্ছে ৷ কন্যাশ্রী থেকে শুরু একাধিক প্রকল্প ভোটের জন্য করা । 2011 সালে মানুষ তৃণমূলকে দু'হাত ভোরে ভোট দিয়েছিল । ভোট লুট করতে হয়নি । প্রভাস ঘোষ বলেন,"আজ খুনের রাজনীতি হচ্ছে । বামপন্থী আন্দোলনের রাস্তা ছেড়ে সিপিএম বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো আসন পাওয়ার জন্য রাজনীতি করছে । 34 বছরের শাসনে তাদের শক্তি বাড়ার কথা । তা হল না । তাদের অবস্থা খারাপ হয়ছে । বরং, বিজেপি বাড়ল ৷ সিপিএমের সময় থেকে ভোগবাদের প্রভাব শুরু হয় রাজ্যে ।"