কলকাতা, 24 জুলাই : লকডাউন শুরুর সময় বা লকডাউনে রোগীরা ক্লিনিকে কম আসছিলেন, বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসকদের কাছে অনলাইনে পরামর্শ চাইছিলেন । কিন্তু, আনলক শুরু হতেই আবার ক্লিনিকে ফিরতে শুরু করেছেন রোগীরা । তবে বেসরকারি ক্লিনিকগুলিতে মেনে চলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি । সরকারি নির্দেশিকা মেনেই রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা । কিন্তু, কোরোনা সংক্রমণের ভয়কে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছেন না কেউই ৷
লকডাউনে ক্লিনিকের কর্মীরা কীভাবে আসবেন, রোগীরা কীভাবে আসবেন, কীভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা হবে, এই সব বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল । লকডাউনের মধ্যে কোনও কোনও ক্লিনিকে ধীরে ধীরে পরিষেবা চালুর চেষ্টা করা হয় । এই পরিস্থিতিতে টেলিমেডিসিনের উপর জোর দেওয়া হয় ।
তবে আনলক শুরু হওয়ার পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীদের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে । রোগীদের পাশাপাশি ক্লিনিকের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা ।
লকডাউন চলাকালীন ক্লিনিকগুলিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ? চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "লকডাউনে আমাদের ক্লিনিক চালু রাখা হয়েছিল । নির্দেশিকা অনুযায়ী জ্বরে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল । এর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে যখন ফোন আসছিল, কারও জ্বর থাকলে তাঁকে ফিভার ক্লিনিকে রেফার করা হচ্ছিল । জ্বর নেই, এমন রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছিল । তখন রোগীদের সংখ্যা সীমিত ছিল । ক্লিনিকের কর্মীদের সংখ্যাও ছিল সীমিত । কারণ, সকলে আসতে পারছিলেন না । "
COVID-19 প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । বার বার হাত স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে । কর্মীরা মাস্ক ও ফেসশিল্ড পরে পরিষেবা দিচ্ছেন । যিনি রিসেপশনে রয়েছেন তাঁর কাছে প্রথমে রোগী আসছেন । তিনিও মাস্ক, ফেসশিল্ড ব্যবহার করছেন । ক্লিনিকে প্রবেশের পথে রোগীদের জন্য হাত ধোওয়া ও হাত স্যানিটাইজ়ের ব্যবস্থা রয়েছে । ক্লিনিকের ভিতরে প্রতি রোগীর সঙ্গে একজন পরিবারের সদস্যকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে । রোগীদের অপেক্ষা জন্য যে বসার জায়গা রয়েছে, সেখানেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে । রোগীর চিকিৎসার আগে ও পরে চিকিৎসকরা হাত ধুয়ে নিচ্ছেন ।
কোনও রোগীকে COVID-19-এ আক্রান্ত হিসেবে কীভাবে সন্দেহ করা হয়? কৌশিক চক্রবর্তী জানান, যদি কোনও রোগীকে দেখে সন্দেহ হয়, তাঁকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পরে চেম্বার আবার স্যানিটাইজ় করা হয় । রোগীর আসা যাওয়ার রাস্তা, অপেক্ষাস্থান স্যানিটাইজ় করা হয় ।
রক্ত পরীক্ষা-সহ রোগীর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করছেন যে সব স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন । কিন্তু, পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ক্লিনিকের যেসব কর্মী, তাঁদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন? সেক্ষেত্রে যদি কোনও কর্মী অসুস্থ বোধ করেন । তাঁর জ্বর, সর্দি-কাশি বা অন্য কোনও উপসর্গ দেখা যায়, প্রথমে তাঁকে বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । এর পরে উপসর্গগুলি বিবেচনা করে পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান ওই চিকিৎসক ।
কোনও ব্যক্তির সিজ়নাল অ্যালার্জি রয়েছে । বৃষ্টি পড়লে হাঁচি হয় । একদিন হয়ত হাঁচি হয়েছে, এমন ব্যক্তিও ক্লিনিকে আসছেন । কোরোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে চাইছেন । আবার দেখা যাচ্ছে বিপরীত ছবিও । অনেকে কোরোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার পরেও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন । পরীক্ষা করাতে চাইছেন না বলে জানান ওই চিকিৎসক । তবে দুইটির কোনওটাই ভালো নয় বলেও জানান কৌশিক চক্রবর্তী ।
COVID-19 পজ়িটিভ রোগী খুব বেশি অসুস্থ হলে অর্থাৎ, SARI (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি ইলনেস) থাকলে, তাঁকে হাসপাতালে ভরতি ছাড়া অন্য আর কোনও উপায় নেই । তবে যাঁদের মৃদু উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের হোম কোয়ারানটিনে থাকার পরমার্শ দেওয়া হচ্ছে ।
লকডাউনে ক্লিনিকের কর্মীরা আসতে পারছিলেন না । গাড়ির ব্যবস্থা করেও তাঁদের আনা হয়েছিল । ক্লিনিকের পরিষেবা এখন চালু রয়েছে । তবে, COVID-19-এ সংক্রমিত হয়ে পড়ার আতঙ্ক দূর হচ্ছে না । বেসরকারি একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক পৌষালী সান্যাল বলেন, "ক্লিনিকের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে যেসব রোগী আসছেন, সকলের বিষয়ে চিন্তা থাকছে । তাঁরা যেন সংক্রমিত না হয়ে পড়েন । এই জন্য সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লিনিক চালানো হচ্ছে ।"
ফোনে কোনও চিকিৎসকের অ্যাপয়নমেন্ট চাওয়া হচ্ছে, তখন ওই রোগীর জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় দেওয়া হচ্ছে । অন্য রোগীর জন্য দেওয়া হচ্ছে অন্য সময় । সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে । চিকিৎসকের চেম্বারে শুধুমাত্র রোগীকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে । যদি পরিবারের সদস্যকে কিছু জানাতে হয়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁরা আলাদা করে এসে কথা বলছেন ।
ক্লিনিক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হলে তাপমাত্রার খেয়াল রাখতে হচ্ছে । 26 ডিগ্রিতে রাখা হচ্ছে তাপমাত্রা । সন্দেহজনক কোনও রোগীর ক্ষেত্রে PPE ব্যবহার করছেন চিকিৎসকরা । একসঙ্গে সব কর্মীকে যাতে ক্লিনিকের মধ্যে থাকতে না হয়, তার জন্য ক্লিনিকের কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ।
পরিস্থিতি এখন কী রকম? চিকিৎসক পৌষালী সান্যাল জানান, রোগীদের মধ্যে COVID-19-এর আতঙ্ক ছিল । তবে ধীরে ধীরে আতঙ্ক কমছে । কারণ সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক হচ্ছেন প্রত্যেকেই । আনলকের পর থেকেই রোগীরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন । ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে । প্রথম দিকে বেশিরভাগ রোগী অনলাইনে কনসালটেশন চাইছিলেন । এখন ক্লিনিকে আসতে চাইছেন ।