কলকাতা, 12 জুন : আজ রাজ্যজুড়ে সরকারি হাসপাতালে ১২ ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগ বয়কটের ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠন । NRS-র ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন । আর, এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নতুন করে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও দেখা যাচ্ছে । সব মিলিয়ে আজ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থা চরম সংকটে পড়তে চলেছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
গতকাল দিনভর দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে । স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য চিকিৎসকদের আশ্বাস দিয়েছেন । কর্মবিরতি তোলার অনুরোধ করেছেন । এরপরও কর্মবিরতি সহ অবস্থান-বিক্ষোভে অনড় রয়েছেন NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা । যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। NRS-র এই ঘটনার জের কলকাতা সহ রাজ্যের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পড়েছে । এই সব স্থানের জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ মঙ্গলবার কর্মবিরতি শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাতে মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান এবং মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার কথা জানা গেছে ।
এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । আক্রান্ত হন জুনিয়র ডাক্তাররা । অবস্থান বিক্ষোভের পাশাপাশি শুরু হয় কর্মবিরতি । পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপকুমার মিত্র । ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্য আধিকারিকরাও । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয় স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের । হাসপাতালে পৌঁছান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মন্ত্রী নির্মল মাজি এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও পৌঁছান । পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈঠকেও বসেন তাঁরা । সোমবার পুলিশের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠছে NRS-র আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে । আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সামনে কলকাতা পুলিশ "শেম শেম", "হায় হায়" আওয়াজ তোলেন আন্দোলনকারীরা। এমন আওয়াজ কলকাতা পুলিশ কমিশনারের সামনেও তোলা হয় । তেমনই, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে না চেয়ে আন্দোলনকারীদের তরফে দাবি জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি তাঁরা চাইছেন।
শেষ পর্যন্ত দিনভর আলোচনার শেষেও অনড় অবস্থানে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, "ওরা (আন্দোলনকারীরা) কতগুলো দাবি করেছিল । যেমন, এখানে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো । পুলিশের অ্যাক্টিভিটি আরও বাড়ানো । পুলিশ কমিশনার নিজেই এসেছেন । পুলিশের তরফে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার, তার সব নেওয়া হবে । নিরাপত্তা থেকে সবকিছু যাতে আরও বেশি জোরদার হয়, সেগুলো দেখা হবে । ওরা ওদের আরও কতগুলো বক্তব্য আমাদের বলেছে । সেগুলি নিশ্চিত ভাবে আমরা দেখব কী করা যায় ।"
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, "হয়ত যতটা বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা ছিল, ততটা সক্রিয় ছিল না । ওদের (আন্দোলনরতদের) এই অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন পুলিশ কমিশনার ।" অন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতেও প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে । এই বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, "আমরা অনুরোধ করব, জুনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিন । কোনও মতে মানুষের পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, সেটা যেন তাঁরা দেখেন । আমাদের বিশ্বাস, যাঁরা ডাক্তার, তাঁরা মানুষের পরিষেবা দেবেন । এটাই তাঁদের সবার আগের মানসিকতা । এটা সর্বাগ্রে তাঁরা অগ্রাধিকার দেবেন । বাকি বিষয়গুলি আমরা দেখে নিচ্ছি ।"