কলকাতা, 17 জুলাই : পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে বিশ্বভারতীতে উত্তেজনা নিয়ে সবর বিরোধীরা ৷ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, BJP-র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা । এমন ঘটনা অভিপ্রেত ছিল না । এর জন্য রাজ্য সরকারকেই দোষী করেছে বিরোধী শিবির । উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতীকে কালিমালিপ্ত করতেই BJP এবং তৃণমূলের এই ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস । যদিও বিশ্বভারতীতে উত্তেজনার জন্য রাজ্যের শাসকদলকেই দায়ি করেছে BJP৷
বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রবীন্দ্রনাথের নামঙ্কিত বিশ্বভারতীর সর্বনাশ করতে এরা উঠে পড়ে লেগেছে ৷ উপাচার্য কারও সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেন না ! সব সিদ্ধান্ত নিজে নিজেই ঠিক করেন !" নাম না করে উপাচার্যকে লক্ষ্য করে বলেন, "তিনি যে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে চলছেন তা বোঝা যাচ্ছে ৷ কিন্তু সেই উদ্দেশ্যকে বানচাল করার জন্য দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে ভাঙচুর চালোনো হচ্ছে ৷ তৃণমূলের নেতা যেখানে উপস্থিত ৷" এরপরই তাঁর প্রশ্ন, "বিশ্বভারতী কি রাজনীতির জায়গা ? DM, SP-কে ফোন করলে পাওয়া যায় না ৷ রবীন্দ্রনাথ নামাঙ্কিত বিশ্বভারতীর নামের বারোটা বাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস অবিলম্বে চালু করতে হবে ৷ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি যুক্তি সঙ্গত ৷ রাজ্য সরকারের খুশি মতো চলতে পারে না ৷ সমাজবিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে ৷ এটা চলতে পারে না ৷ ওটা বিশ্ববিদ্যালয় ৷ রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত ৷" রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "কী এর মর্ম বুঝবে দিল্লির BJP আর রাজ্যের তৃণমূল !"
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, "শান্তিনিকেতন সারা বিশ্বের কাছে একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র ৷ সেখানে আজ যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই নিন্দনীয় ৷ শাসকদল বলছে তারা এটা করেনি ৷ কিন্তু শাসকদলের প্রেরণা, ইন্ধন না থাকলে এই ঘটনা ঘটত না ৷ পুলিশের নাকের উপর দিয়ে বুলডোজার নিয়ে আসা হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী কি জানেন না ? রাজ্য সরকার যদি এই ঘটনার জন্য দায়ি না থাকে তাহলে অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হোক ৷ তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক ৷ তাহলে বুঝব এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকার দায়ি না ৷"
কংগ্রেস, CPI(M)- এর পাশাপাশি আজ এই ঘটনার সমালোচনা করে BJP৷ দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন,"বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইন্ধনে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিজের জমিতে পাঁচিল দিতে পারছে না । আজ মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক থেকে এটা পরিষ্কার যে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আছে ।"
''বিশ্বভারতী কি রাজনীতি করার জায়গা ?'' বিশ্বভারতীতে এমন ঘটনা ক্রমাগত চলছে । তবে আজ সীমা ছাড়িয়েছে ৷ জানান, ওই এলাকার প্রাক্তন বাম বিধায়ক তপন হোড় । তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় BJP তাদের হিন্দুত্ববাদী দর্শনকে কায়েম করতে চাইছে বিশ্বভারতীতে । রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-ভাবনা, প্রকৃতিনির্ভর জ্ঞানার্জন, শিক্ষা, ভাবধারাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে BJP ৷ আজকের ঘটনা লজ্জাজনক। শান্তিনিকেতনের আবাসিকরা সমগ্র ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে। কারাগারে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে বিশ্বভারতীকে । পৌষমেলার খোলা জায়গাকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ হচ্ছিল । এটি রবীন্দ্রনাথের চিন্তার বিরোধী। সমগ্র বিশ্বভারতী চত্ত্বরকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার অপচেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ । এর বিরুদ্ধেই সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে।'' সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, "BJP-র প্রতিনিধি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী RSS থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আর তিনিই বর্তমানে উপাচার্য বিশ্বভারতীর ৷"