কলকাতা, 28 নভেম্বর: এনআরএস হাসপাতালে (NRS Hospital) অসাধ্য সাধন । আজ ভোর তিনটে নাগাদ ইএনটি বিভাগের এমারজেন্সিতে একজন রোগী আসেন ৷ যার গলায় ত্রিশূল গেঁথে গিয়েছিল । অস্ত্রোপচার সফলভাবে সেই ত্রিশুল বের করলেন চিকিৎসকরা ।
নদিয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা ভাস্কর রায় ৷ বয়স 33 বছর । ব্যান্ডেলের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি । বাড়িতে একাই থাকেন ওই ব্যক্তি । রোজ পাড়ার এক বন্ধুর সঙ্গেই অফিসে যান ভাস্কর । বাড়ি ফিরে বাড়িতেই রাতের খাওয়ারও সারেন তিনি ।
তবে রবিবার রাতে বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার আগে ঘটে বিপত্তি । ভাস্করের মাসতুতো ভাই সুরজিৎ বড়ুয়া বলেন, "অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বন্ধুর বাড়িতে খেতে যাবার আগে আচমকাই ওই পাড়ারই দু'জন তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে । এলোপাথারি মারধর শুরু করে ভাইয়ের উপর । পিছন থেকে একজন তাঁর ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং তখনই ঘরে একটি ত্রিশূল ছিল ৷ সেই ত্রিশূল তাঁর গলার ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । ওই সময় সেই ঘরে আমরা কেউই উপস্থিত ছিলাম না ৷ ভাই একাই ছিল ৷ ঘটনার পর ইশারার মাধ্যমে ভাই সেই কথাই আমাদেরকে বুঝিয়েছে ।"
গলায় ত্রিশূল বাধা অবস্থায় কল্যাণীর জওহরলাল নেহেরু হাসপাতালে প্রথম নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভাস্করকে । সেখানে থেকে রেফার করে দেওয়া হয় কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে । ভোর রাতে তিনটে নাগাদ কল্যাণী থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে । তাঁর গলায় ত্রিশূল এপার থেকে ওপার হয়েছিল । যা দেখে অবাক হয়ে যান চিকিৎসকরা ।
যে জায়গাটিতে ত্রিশূল ঢুকেছে গলায়, তার এক ইঞ্চি উপর নিচে হলে বা কোনভাবে ত্রিশূলটি বেঁধে গেলে যে কোনও সময় মৃত্যু হতে পারত ওই যুবকের । গলায় ত্রিশূল বিঁধে থাকা অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে । ট্রাকিএস কপি করে 45 মিনিটের অপারেশন শেষে তাঁর ওই ত্রিশূলটি বার করা হয় । আপাতত সুস্থ রয়েছে রোগী । এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্রনাবাসিশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে 3 সদস্যের চিকিৎসকের টিম সফল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে ত্রিশূলটি বের করেছেন (NRS Hospital successfully removes trishul) ।
আরও পড়ুন:খুনের চেষ্টা ! গলায় ত্রিশূলে বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক
চিকিৎসক প্রনাবাসিশের কথায় তার এত বছরের চাকরি জীবনে এই ঘটনা প্রথম দেখলেন । তিনি বলেন, "যখন আমরা রোগীকে পাই তাঁর গলায় ওই ত্রিশূলটি আটকে ছিল । গলায় মূলত কেরোটিড আটারি, ইন্টারনাল জুগালার ভ্যান, ট্যাকিয়া থাকে । যদি ট্যাকিয়াতে আঘাত হয় তবে অল্প হলেও আমরা সময় পাই । ক্যারোটিনে আঘাত হলে একদমই সময় পাই না । ওঁনার গলার যে জায়গায় ত্রিশূলটা আটকে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা অস্ত্রোপচার করতে পেরেছি । প্রায় তিন বোতল রক্ত লেগেছে । তাছাড়া রক্তক্ষরণ হয়নি । বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছেন । তবে রাইস টিউব দিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হচ্ছে । এখন তিনি কথা বলছেন না । আস্তে আস্তে বলবেন । কোনও সমস্যা হবে না । বলা যায় সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রয়েছেন তিনি । তবে ওঁনার ক্ষতটা খুব গভীর । ওঁনার মাথায় কোনও আঘাত রয়েছে কি না সেটা আমরা বুঝতে পারছি না । যেহেতু এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করা সম্ভব হয়নি ।"