কলকাতা, 4 অক্টোবর: টানা বৃষ্টি আর হড়পা বানে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ । এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন পরিস্থিতি জটিল হলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই ৷ কারণ, তৎপর রয়েছে প্রশাসন । বুধবার নবান্নের পর্যালোচনা বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । টেলিফোনিক বার্তায় তিনি সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন । অসুস্থ অবস্থায় তিনি বাড়িতে থাকলেও তাঁর প্রশাসনকে চুপ করে বসে নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই ঘটনার পর তিনি 24 ঘণ্টা বাড়ি থেকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন । ইতিমধ্যেই মন্ত্রী ও সচিবদের একটা দল উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে । একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন এনডিআরএফ, এসডিআরএফ-সহ উদ্ধারকারী দল নামানো হয়েছে । একসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে ।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার রাত 3টের সময় ক্লাউড ব্লাস্টের ঘটনা ঘটে । সিকিমের মুখ্যসচিব রাতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । এই মুহূর্তে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং মেখলিগঞ্জের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন তিনি । ইতিমধ্যেই এই পরিস্থিতি নিয়ে জিটিএ প্রধান অনিত থাপার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে সমস্ত জনপ্রতিনিধি, বিধায়ক, মন্ত্রীদের প্রশাসনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
একই সঙ্গে এ দিন সরকারি অন্যান্য ব্যবস্থার কথাও জানিয়েছেন তিনি । এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, যে সব জরুরি বিভাগ এখন পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজে যুক্ত, সেই সমস্ত বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হচ্ছে । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই এখন লক্ষ্য সরকারের ।
আরও পড়ুন:উত্তরবঙ্গের পথে মন্ত্রী-আমলারা, 23 সেনা নিখোঁজে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সেনাবাহিনীর 27 জন সদস্যের মৃত্যু ঘটেছে এই দুর্যোগে। এই দুর্যোগের সময় তিস্তা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তাই আরও বিপর্যয় মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে সেনাবাহিনীর পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছে রাজ্য প্রশাসন। সেনাবাহিনী যদি রাজ্য সরকারের কোনও সহযোগিতা চায়, রাজ্য তা করতে প্রস্তুত।
উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির পাশাপাশি এ দিন দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্যে এ দিন উঠে এসেছে ডিভিসির জল ছাড়ার প্রসঙ্গ। তিনি জানান, ডিভিসির জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেহেতু বিহার ও ঝাড়খণ্ডে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে, জল না ছাড়লে বাঁধের ক্ষতি হতে পারে। গত পরশুদিন থেকে এখনও পর্যন্ত ডিভিসি 1 লক্ষ 70 হাজার কিউসেক ছেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমাতে বলেছি। এই জলটা দক্ষিণবঙ্গে আসতে প্রায় তিন দিন সময় লাগে৷ এই জলে উদয়নারায়ণপুর খানাকুল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা। বিশেষ করে নিম্ন দামোদর এলাকায়, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা হতে পারে। রাজ্য ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এই জায়গাগুলিতে নিয়োগ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে আধিকারিকদের একটি টিম এই উপদ্রুত এলাকাগুলিতে ভিজিট করবে।’’ একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এই এলাকায় থেকে মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিচু এলাকা থেকে প্রায় হাজার দশেক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তাঁদের কোনও অসুবিধা না হয়, সেজন্য নবান্নকে 24 ঘণ্টার একটি কন্ট্রোল রুম খোলারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যেহেতু তাঁর পায়ে চোট রয়েছে, তাই তিনি এই মুহূর্তে বের হতে পারছেন না । বাড়ি থেকেই 24 ঘণ্টা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার পায়ে একটা চোট রয়েছে । এখনও ভালো হয়নি ৷ আরও দুই এক দিন সময় লাগবে । কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও আমি বাড়ি থেকেই 24 ঘণ্টা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি ।’’
আরও পড়ুন:উত্তরবঙ্গ নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতা, সেচমন্ত্রীকে দ্রুত শিলিগুড়িতে পৌঁছনোর নির্দেশ