কলকাতা, 11 মে: রাজ্যজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পরই অনলাইনে টিচিং-লার্নিং প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছিল (MAKAUT) মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি তথা রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পঠন-পাঠনের পাশাপাশি রান্না করা, সেলাই করা, গল্পটি, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত পর্যালোচনা করেও ক্রেডিট অর্জন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল পড়ুয়াদের। এবার বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিভিন্ন ওয়েব সেমিনার বা লেকচারে অংশগ্রহণ করলেই পড়ুয়াদের ক্রেডিট দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে মডেল তৈরি করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্র।
কোরোনার জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে 16 মার্চ থেকে বন্ধ রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও লকডাউন শুরুর প্রথম থেকেই পঠন-পাঠন অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু পড়ুয়াদের জন্য অনলাইন পঠন-পাঠন নয়, শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণমূলক অনলাইন কোর্স করা বাধ্যতামূলক করা, বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনলাইন সেমিনারের ব্যবস্থা করার মতো উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি লকডাউনে বাড়িতে থেকে পড়ুয়ারা যাতে অবসাদে না ভোগেন, সময় অপচয় না করেন, তাই তাঁদের মানসিকভাবে ব্যস্ত রাখতে বাড়িতে বসেই বিভিন্ন সৃজনশীল অ্যাসাইনমেন্ট ও কাজ দেওয়া হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া বিশেষ বিশেষ কাজগুলি যার মধ্যে, রান্না করা, সেলাই করা, ফটোগ্রাফি, গল্পের বই, চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতের পর্যালোচনার করা ইত্যাদি । এগুলি করলেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিতে অতিরিক্ত ক্রেডিট পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই ধরনের উদ্যোগে নতুন সংযোজন করার ভাবনাচিন্তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁদের পরিকল্পনা, বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিভিন্ন ওয়েব সেমিনারে অংশগ্রহণ করলে পড়ুয়াদের অ্যাকাডেমিক কোর্সে অতিরিক্ত ক্রেডিট দেওয়া হবে।
লকডাউনের পর থেকেই একের পর এক ওয়েবিনার তথা ওয়েব সেমিনারের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অগমেন্টেন্ড রিয়্যালিটি অ্যান্ড ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির উপর প্রতি সপ্তাহের শনিবার করে ওয়েবিনার হয়। গত শনিবার কোরোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে যে কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হবে তা নিয়ে ওয়েবিনার হয়। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকিউটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগ দ্বারা আয়োজিত ওয়েবিনারে যোগ দিয়েছিলেন আমেরিকার ফ্লোরিডা ও ল্যুইসভিল ইউনিভার্সিটির দুই অধ্যাপক-অধ্যাপিকা লিসা ক্যাথরিন রায়ান ও গিল ডায়মন্ড। অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রায় দু'হাজার পড়ুয়া। মূলত, কোরোনার প্রেক্ষাপটে কী করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছিল ওয়েব সেমিনারে। সেমিনারের পর প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা হয় । পড়ুয়াদের শংসাপত্র দেওয়া হয় ।
এভাবেই বিভিন্ন বিষয়ের উপর হওয়া ওয়েবিনার এবং লেকচারে অংশগ্রহণ করলে পড়ুয়াদের কোর্সে অতিরিক্ত ক্রেডিট দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। এপ্রসঙ্গে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন, "আগামীদিনে আমাদের পরিকল্পনা এটিকে টিচিং-লার্নিং সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা। একটা লেকচার শোনার পর তার উপর প্রশ্নোত্তর হচ্ছে। তারপর শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এটিকে লার্নিংয়ের মধ্যে এনে যদি ক্রেডিট দেওয়া যায় । অ্যাকাডেমিক কোর্সে কী করে ক্রেডিট পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। মডেল তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে । এই ধরনের লেকচার শুনে পড়ুয়ারা নিজেদের বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন। সেই বিষয়ের উপর জ্ঞান বাড়ে। তার ভিত্তিতে আমরা শংসাপত্র দিচ্ছি। সেটাকেই কী করে অ্যাকাডেমিক রেকর্ডে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে আমরা মডেল তৈরি করছি।"
সৈকত মৈত্র আরও বলেন, "আমাদের স্ট্রাটেজি বিদেশের খ্যাতনামা অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেকচারের আয়োজন করা। এর মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ছাত্রদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবেন। এতে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান বাড়বে । আমরা অধ্যাপকদের সঙ্গে সংযোগের প্ল্যাটফর্মও করে দিয়েছি। কোনও প্রশ্ন থাকলে সেখানে গিয়ে তাঁরা সেই প্রশ্ন করতে পারবেন। এছাড়া, যাঁরা এই ধরনের লেকচারে অংশগ্রহণ করবেন সেই সার্টিফিকেট পরবর্তীকালে তাঁদের কেরিয়ারে কাজে লাগবে। তাঁদের যে স্কলাস্টিক ডেভলপমেন্ট হয়েছে সেটা দেখাতে পারবে। এমনকি তাঁদের গবেষণার ক্ষেত্রেও এই সেমিনার কাজে আসবে।"