কলকাতা, 1 ডিসেম্বর: জাতীয় সঙ্গীতকে অবমাননার অভিযোগে ইতিমধ্যেই হেয়ার স্ট্রিট থানায় প্রথমে 12 জন এবং পরে 11 জন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল । এ বার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী চার ডিসেম্বর লালবাজারে তলব করা হল অভিযুক্ত 11 জন বিজেপি বিধায়ককে । বিজেপি বিধায়করা আদৌও সে দিন লালবাজারে যাবেন কি না, সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি ।
এ বিষয়ে বিজেপির তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, "দুর্নীতির ইস্যু নিয়ে চোর চোর স্লোগান তোলা হয়েছে ৷ সেখানে হঠাৎ করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল, যা আমরা কেউ শুনতে পেলাম না । আসলে এই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল এই জন্যই, যাতে আমাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে শাসকদলের সুবিধা হয় ।"
শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছে ইটিভি ভারত ৷ তিনি জানান যে, তিনি একটি নোটিশ পেয়েছেন । যেখানে গুন্ডা দমন শাখার তরফ থেকে তাঁর বাড়ির ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং 41-এর-এ ধারায় অভিযোগ এনে চার ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে । তাঁকে এও প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, এই নোটিশের পর তাঁরা থানায় হাজিরা দিতে যাবেন কি না ৷
জবাবে শংকর ঘোষ বলেন, "এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি । কিন্তু বিধায়কদের অভিভাবক যেহেতু এই মুহূর্তে শুভেন্দু অধিকারী, তাই তাঁর নির্দেশ মেনেই চলব আমরা । তিনি আমাদের যে নির্দেশ দেবেন, পরবর্তী পদক্ষেপ সেভাবেই করা হবে ।"
তবে এ দিন এই ঘটনার জন্য শাসক-শিবিরকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি বিজেপি বিধায়ক । তিনি বলেন, "যাঁরা এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যা যা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে এবং রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে আসা হবে মানুষের সামনে, এটা তুলে ধরা হবে যে এরা জাতীয় সঙ্গীতকে নিয়েও রাজনীতি করতে ছাড়ে না ।"
100 দিনের কাজের পারিশ্রমিক-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের থেকে রাজ্যের প্রাপ্ত টাকা বকেয়া রয়েছে ৷ সেই বকেয়া পাওনার দাবিতে গত বুধবার থেকে টানা তিন দিন রাজ্যের বিধানসভায় বাবাসাহেব আম্বেদকর মূর্তির নিচে ধরনা কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস । সেখানে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় । তৃণমূলের অভিযোগ, জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন সেখানে হই-হট্টগোল করে, চোর চোর স্লোগান তুলে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করেছেন বিজেপি বিধায়করা ৷ এই নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় দু'দফায় বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় । প্রথম দিন 12 জন বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং পরের দিন বিজেপিরই 11 জন বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় ।
এই ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর 11 জন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করে । অভিযুক্ত বিধায়কদের 4 ডিসেম্বর লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছে । যদিও এই বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি কলকাতা পুলিশের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক । যদিও কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বিজেপি বিধায়কদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ৷ এছাড়াও প্রয়োজনে তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করা হবে । কিন্তু বিজেপি বিধায়করা যদি সে দিন কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে অনুপস্থিত থাকেন, সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি ।
আরও পড়ুন:
- শুভেন্দুর নেতৃত্বে গঙ্গাজল ঢেলে 'পবিত্র' করা হল আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশ
- রানি মউ মাছি ! ব্যঙ্গচিত্রে মমতাকে তীব্র কটাক্ষ শুভেন্দুর; বাংলার মানুষ জবাব দেবে, বলছে তৃণমূল
- ডিসেম্বরের শুরুতেই উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা-অভিষেক, রয়েছে সরকারি ও ব্যক্তিগত কর্মসূচি