কলকাতা, 1 অগস্ট: এ যেন অনেকটা কেঁচো খুঁড়তে কেউটে ! সদ্যোজাত কন্যাসন্তান বিক্রির অভিযোগের তদন্তে নেমে শিশুপাচার চক্রের হদিশ পেল কলকাতা পুলিশ ৷ বিষয়টি নিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করতেই পাচারচক্রের মোডাস অপারেন্ডি জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ৷ তাঁরা মনে করছেন, তদন্তের আরও গভীরে গেলে ভিনরাজ্যের কিংবা আন্তর্জাতিক কোনও মানব পাচার চক্রের হদিশ মিলতে পারে ৷
কীভাবে সামনে এল শিশু বিক্রির ঘটনা: পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, এক নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান দত্তক নিতে চেয়েছিলেন ৷ তাঁদের সন্তান দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে চারজন যোগাযোগ করেন ৷ চারজনই মহিলা ৷ 21 দিনের কন্যাসন্তানের বিনিময়ে তাঁরা চার লক্ষ টাকা নেন ওই দম্পতির কাছ থেকে ৷ কিন্তু দত্তক নিতে গেলে যে নিয়ম মানতে হয়, তার কোনওটাই এক্ষেত্রে করতে হয়নি ৷ সেই কারণে সন্দেহ হয় ওই দম্পতির ৷ তাঁরা যোগাযোগ করেন আনন্দপুর থানায় ৷
প্রাথমিক তদন্তের পর ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ ধৃতদের মধ্যে ওই সদ্যোজাতের মা-ও রয়েছেন ৷ অর্থাভাবে তিনি মেয়েকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন বলে জানান ৷ কিন্তু একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদের পর ধৃত ছ’জনের মধ্যে চার জন সম্পর্কে বিস্ফোরক তথ্য আসে পুলিশের কাছে ৷
আরও পড়ুন:আনন্দপুরে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে 21 দিনের কন্যাসন্তানকে বিক্রি মায়ের ! গ্রেফতার 6
কী বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছে পুলিশ: এই ঘটনায় ধৃত পাটুলি থানা এলাকার বাসিন্দা রূপা দাস, বাঘাযতীন এলাকার বাসিন্দা সপ্না সরদার, লোহাপুল থেকে পূর্ণিমা কুন্ডু এবং বেহালার বাবা চরণ রায় রোডের বাসিন্দা ললিতা দে সরাসরি শিশুপাচার চক্রে যুক্ত রয়েছেন বলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন ৷ তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় এসে একটি মানব পাচারের দল গোপন আস্তানা বেঁধেছে । এই চারজন ওই চক্রের সঙ্গেই জড়িত ৷
কীভাবে কাজ করে এই পাচারচক্র: কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এদের কাজই হল কলকাতার বিভিন্ন ফুটপাথ এবং ফাঁকা জায়গায় থাকা শিশুদের উপর নজর রাখা । সুযোগ বুঝে ওই সব শিশু চুরি করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত । এরপর নিঃসন্তান দম্পতির খোঁজা হত ৷ এক্ষেত্রে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা বিজ্ঞাপনকেই কাজে লাগানো হত ৷ বিজ্ঞাপন থেকে ওই দম্পতিদের ফোন নম্বর জোগাড় করে যোগাযোগ করা হত ৷ তার পর দরাদরি করে চুরি করা শিশু ওই দম্পতিদের বিক্রি করা হত ৷ কোনও দম্পতিকে 6 লাখ এবং কোনও দম্পতিকে 10 লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হত চুরি করা এই শিশুগুলিকে ।
আরও পড়ুন:পরকীয়ায় সন্তানের জন্ম, সদ্যোজাতকে বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার মা-সহ 4
যদিও কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার ফুটপাথ থেকে চুরি করা এই শিশুগুলিকে কোথায় রাখা হত, সেই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ভাবে জানতে পারেননি তদন্তকারীরা । তদন্তকারীদের অনুমান, এই চারজন শুধুমাত্র মধ্যস্থতাকারীর কাজ করেন । কিন্তু এঁদের মাথা বা মূল যে চক্র রয়েছে, সেটি অনেক বড় মাপের । আদৌও সেটি এই রাজ্য থেকে চালানো হয়, নাকি রাজ্যের বাইরে কিংবা একেবারে অন্য দেশ থেকে চালানো হয়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।