কলকাতা , 31 জুলাই : কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দীর্ঘ লকডাউনের জেরে সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে গোটা দেশ । ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কম্পানিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে । বেতনও কাটা হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্যাম্পাসে প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রেও কি এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন পড়ুয়ারা ? প্রতি বছর ক্যাম্পাসে মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের খুঁজতে আসা কম্পানি কি ক্যাম্পাসমুখী হয়েছে ? রাজ্যের একাধিক নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল , কোরোনার কারণে বেশিরভাগ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই অধিকাংশ প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল । লকডাউনের অল্পবিস্তর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও তার বেশিরভাগটাই এড়ানো গেছে এই বছর ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, গত বছরের থেকেও ভালো প্লেসমেন্ট হয়েছে এই বছর । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন , "আমাদের যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্টসের ইকোনমিক্সে প্লেসমেন্টটা ভালো হয়। এই প্লেসমেন্ট আমাদের যথেষ্টই গর্বের কারণ। এ বছরও খুব খারাপ হয়েছে সেটা আমি বলব না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক বা কর্পোরেট সেক্টর, কোরোনার প্রভাবটা আমরা টের পেয়েছি মার্চ মাস থেকে। আরও নির্দিষ্টভাবে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে। তার আগেই কিন্তু আমাদের অধিকাংশ প্লেসমেন্ট হয়ে গেছে। লকডাউনের সময়ে অনলাইন মোডে অন্ততপক্ষে 20 জনের প্লেসমেন্ট হয়েছে । সব মিলিয়ে আমাদের এই বছরের যে প্লেসমেন্ট রেকর্ড দেখা যাচ্ছে, 84 শতাংশ স্টুডেন্ট আমাদের প্লেসমেন্ট পেয়েছে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে। যদি আমরা বিগত দুই বছরের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখব, একই রকম আছে। বরং, এই বছর একটু বেশি হয়েছে । "
খড়গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (IIT) রেজিস্ট্রার বিএন সিং বলেন , "এই বছর কোনও সমস্যা হয়নি । ভালোই প্লেসমেন্ট হয়েছে । ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (IIEST), শিবপুরের প্লেসমেন্টেও তেমনভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি । প্রতিষ্ঠানের এক আধিকারিক এই বিষয়ে বলেন, "আমাদের সাধারণত অগাস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে আউটগোয়িং ব্যাচের ক্যাম্পাসিং শুরু হয়ে যায় । আমাদের লকডাউনের আগেই অধিকাংশ ক্যাম্পাসিংটা হয়ে গিয়েছিল । "
লকডাউন চলাকালীন সময়েও থমকে থাকেনি প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়া । যাদবপুর এবং IIEST শিবপুর , দুটি প্রতিষ্ঠানেই অনলাইনের মাধ্যমে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ করে একাধিক পড়ুয়াকে চাকরির অফার দিয়েছে বহু কম্পানি । তারপরেও কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে এই বছরের প্লেসমেন্টে । যেমন অনেক কম্পানি আগে অফার দিয়েছিল । কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই তা বাতিল করেছে । আবার , অনেক কম্পানির আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেনি ।
এই প্রসঙ্গে IIEST শিবপুরের এক আধিকারিক বলেন , " দু'টো কম্পানি অফার করার পরে আর কেউ নিতে চায়নি । ওই কম্পানিগুলি থেকে চার থেকে পাঁচজনের মতো পড়ুয়া অফার পেয়েছিল । প্রায় 10-12টা কম্পানির সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু, এই পরিস্থিতির কারণে তারা কেউ আর নিতে চাইল না । ইন্টার্নশিপের মাধ্যমেও প্লেসমেন্ট হত । সেক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ শেষের পর অনেক পড়ুয়াই চাকরির অফার পেয়ে যেতেন । অন্যান্য বছর IIEST-র 60-70 জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী এভাবে চাকরির অফার পেয়ে যেতেন । সেটাও এবার প্রভাবিত হয়েছে । "
তবে, এই বছরের প্লেসমেন্টে শুধু কোরোনার প্রভাব পড়েনি বলেই দাবি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির । চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন , "এই বছর যে শুধু কোরোনার জন্য প্লেসমেন্টে প্রভাব পড়েছে তা নয় । হ্যাঁ এটা অন্যতম একটা কারণ । অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে । এই বছর আর একটা বিষয় , যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ততটা প্রভাব না ফেলতে পারলেও , অন্যান্য জায়গায় তার প্রভাব পড়েছে । তা হল, অর্থনৈতিক মন্দা আগের থেকেই চলছিল । একটি কম্পানি যে আমাদের এখানে অফার তুলে নিয়েছে তার পিছনে কোরোনা যতটা দায়ী , তার থেকে বেশি দায়ী বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা । ওটা একটি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি ছিল । যার ভিত্তি ভারতে নয় । ওরা সব নিয়োগই বাতিল করেছিল । এই রকম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা সব জায়গাতেই হয়েছে । যাদবপুরে একটিই ঘটেছে। আমি আবারও বলছি , কোরোনা একটা অন্যতম কারণ । কিন্তু , কোরোনার সঙ্গে যুক্ত জেনেরাল যে অর্থনৈতিক মন্দা , সেটা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে এই ক্যাম্পাস নিয়োগের উপর ।"