কলকাতা, 23 ডিসেম্বর:প্রথমবারের জন্য রাজ্য বিধানসভায় (WB Assembly) পা দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) ৷ 'বিধানসভায় গণতন্ত্রের সুন্দর ফুল ফুটুক', এটাই আর্জি রাজ্যপালের ৷ "শ্রীকৃষ্ণকে যেমন পারিজাত নিয়ে সত্যভামা এবং রুক্মিণীর মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হয়, তেমনই এখানেও অধ্যক্ষকে ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হয় !" বিধানসভায় এসে অধ্যক্ষের প্রতি ভারসাম্যের এই বার্তাই দিলেন রাজ্যপাল ৷
এদিন পুষ্প মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে সস্ত্রীক বিধানসভায় এসেছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ৷ তিনি বলেন, ঐতিহ্যশালী এই বিধানসভা ভবনে এসে তিনি অত্যন্ত খুশি ৷ প্রারম্ভিক ভাষণে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায় (Biman Banerjee) তাঁকে বিধানসভা ভবন এবং বিধানসভার নয়া বিল্ডিং ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান ৷ এদিন রাজ্যপাল তাঁর ভাষণে বলেন, "এখানে সবথেকে সুন্দর ফুল হলেন, উপস্থিত প্রবীণ নাগরিকরা ৷ সম্মানজনক এই পুষ্প প্রদর্শনীতে আসতে পেরে আমার ভালো লাগছে ৷"
আরও পড়ুন:আগামী দিনে বাংলা সারা দেশকে পথ দেখাবে : রাজ্যপাল
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে রাজ্যপাল শ্রীকৃষ্ণের উদাহরণ টেনে আনেন ৷ বলেন, "বিধানসভা হল একটি বড় বাগান ! শাসক এবং বিরোধীরা সেই বাগানের ফুল ! আর, অধ্যক্ষ হলেন মালী ! সকলকেই সকলের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয় ৷" এক্ষেত্রে অধ্যক্ষের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, "শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ অধ্যক্ষকে করতে হয় ৷ শাসক-বিরোধী সমন্বয়ই হল গণতন্ত্রের শক্তি ৷ বিধানসভায় শাসক-বিরোধী দু'পক্ষই নানা কথা বলবে ৷ বিধানসভায় বৈচিত্র থাকবে ৷ বিভিন্ন মত থাকবে ৷ অধ্যক্ষের কাজ হল, বিধানসভার এই বৈপরীত্যকে সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হতে দেওয়া ৷"
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তাঁর এদিনের এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান আদতে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ৷ প্রসঙ্গত, এদিনের পুষ্প প্রদর্শনীতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও সদস্য উপস্থিত ছিলেন না ৷ তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, রাজ্যপালের এই বক্তব্য শুধুমাত্র অধ্যক্ষ নয়, বিরোধী বিধায়কদের প্রতিও তাঁর বার্তা ৷ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, অধ্যক্ষ এবং রাজ্যপালকে একসঙ্গেই চলতে হবে ৷ কারণ, তাঁরা দু'জনই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন ৷
এই প্রসঙ্গে এদিন রাজ্যপালন বলেন, "স্পিকার এবং গভর্নরের দায়িত্বের মধ্যে একটি বিশেষ মিল আছে ৷ তাঁর নাম স্পিকার হলেও তিনি বিধানসভায় বলতে পারেন না ৷ বরং, কে কতটা বলবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করেন ৷ আবার আমি গভর্নর হলেও আমি শাসন (গভর্ন) করি না ৷ আমার ভূমিকা অনেকটা পর্যবেক্ষকের মতো ৷ আমাদের দু'জনের কাজেই মিল রয়েছে ৷ তাই দু'জনের মধ্যে সমন্বয়ও অত্যন্ত জরুরি ৷"
রাজ্যপালের এদিনের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ তাঁর কথায়, "যথার্থই বলেছেন রাজ্যপাল ৷ রাজ্যপালের কাছ থেকে তো আমরা এমন বক্তব্যই আশা করি ৷ তবে, রাজ্যপাল ভারসাম্য চাইলেও বিরোধী দল সেটা বুঝবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে ৷" এদিনের অনুষ্ঠানে বিরোধী বিধায়কদের উপস্থিত না থাকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শোভনদেব ৷