পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

গ্রামের জলের দামে মিলছে সবজি, লকডাউনে সংকটে বাংলার কৃষকেরা

চাষিরা মাঠ থেকে ফসল তুলে নিয়ে সস্তায় বিক্রি করছেন গ্রামের হাটে । এতে যা টাকা পাওয়া যাচ্ছে তাতে হচ্ছে না জল গরম । দুবেলা-দুমুঠো আহারের জন্য সরকারি ত্রাণের ওপরে নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের ।

By

Published : May 15, 2020, 6:44 AM IST

kolkata
kolkata

কলকাতা, 14 মে : লকডাউনে সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন কৃষকেরা । মাঠ ভরতি ফসল ফললেও দাম পাচ্ছেন না তাঁরা । জলের দামে বিকিয়ে দিতে হচ্ছে কৃষিজাত পণ্যগুলি । ফলে সামান্য লাভ হওয়া দুরস্ত, উঠছে না ফসল উৎপাদনের খরচও । কৃষকেরা দাম না পেলেও শহরে সবজির দাম অনেকটাই বেশি ‌। কৃষিজাত পণ্যগুলি লকডাউনের কারণে সেভাবে হতে পারছে না শহরমুখী । ফলে চড়চড় করে বেড়ে চলেছে কলকাতা ও তার সংলগ্ন শহরে সবজির দাম । তবে ঠিক উলটো চিত্র গ্রামের হাট-বাজার গুলিতে ।

চাষিরা মাঠ থেকে ফসল তুলে নিয়ে সস্তায় বিক্রি করছেন গ্রামের হাটে । এতে যা টাকা পাওয়া যাচ্ছে তাতে হচ্ছে না জল গরম । দুবেলা-দুমুঠো আহারের জন্য সরকারি ত্রাণের ওপরে নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের । কোরোনার মধ্যে মাঠে সবজি নিয়ে ব্যস্ত প্রান্তিক চাষিরা । মাঠ ভরতি সবুজ ফসল নিয়েই আশার আলো দেখেছিলেন তাঁরা । ভেবেছিলেন পটল, কুদরি, ঝিঙে, উচ্ছে, বরবটি বিক্রি করে নির্বাহ করবেন সংসার। কিন্তু লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটল তাঁদের ভাগ্যেরও । মাঠ ভরতি ফসল থাকলেও ঘরে জুটছে না আহার‌ । অন্যসময় গ্রামের অধিকাংশ সবজি পাড়ি দিয়ে থাকে শহরে । কিন্তু লকডাউনে গাড়ির চাকা না অচল বলে নষ্ট হচ্ছে সবজি । নষ্ট হওয়া রুখতে গ্রামের হাটে জলের দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা ।

গ্রামের হাটে বর্তমানে পটল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা দরে । কুঁদরি বিক্রি হচ্ছে দুই টাকা কেজি দরে । বরবটি কেজি প্রতি পাঁচ টাকা । ঝিঁঙে কেজি প্রতি আট টাকা । বেশিরভাগ সবজি জলের দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ফলে উঠছে না ফসল ফলানোর খরচ‌ । হাবরা দুই নম্বর ব্লকের চাষি রঞ্জিত দাস জানান, "এক বিঘা জমিতে পটল,কুঁদরি, ঝিঙে সহ অন্যান্য ফসল তৈরি করতে খরচ পড়ে 15 থেকে 20 হাজার টাকা । প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগ পোকা না লাগলে এতে লাভ হয় 30 থেকে 40 হাজার টাকা । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা স্বপ্ন । এখন উঠছে না খরচের পয়সাও ।

তবে চাষিরা দাম না পেলেও শহরে সবজির দাম অনেকটাই বেশি । গ্রাম থেকে যে সামান্য সংখ্যক সবজি শহরে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে তা শহরের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা । গ্রামে নামমাত্র দরে যখন সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তখন শহরের দাম অনেকটা ঊর্ধ্বমুখী । শহরে পটল কেজি প্রতি 25 টাকা, ঝিঙে কেজিপ্রতি 40 টাকা, বরবটি কেজিপ্রতি 25 টাকা, ভেন্ডি ও বেগুন কেজি প্রতি 30 টাকা করে । প্রতিটি সবজির বাজার দরের ক্ষেত্রে গ্রাম এবং শহরের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক । সবজি বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, "লকডাউনের কারণেই শহর ও গ্রামে সবজির মধ্যে তৈরি হয়েছে দমের ফারাক‌ । অনেকগুলি হাত ঘুরে সবজি শহরে আসছে । এর ফলে প্রকৃত চাষিরা পাচ্ছেন না সবজির মূল্য ।"

এমতাবস্থায় কী ভাবছেন তা জানালেন মসলন্দপুর রাজবল্লভপুরের চাষি রবীন দাস ৷ তিনি বলেন বলেন, "চাষীরা চাষের কাজ ছাড়া অন্য কোনও কাজ করতে পারবে না । চাষ করতেই হবে । তবে এবারে জমিতে সবজির বদলে একফসল করার চেষ্টা করবে তাঁরা । তিল, পাটের মতো একফসল দীর্ঘদিন রেখে তা বিক্রি করা যায়‌। ফলে সবজির থেকে অনেক বেশি লাভ দায়ক হবে । তবে সবকিছুর মধ্যে এই সংকটপূর্ণ সময় কাটানো হল চাষিদের কাছে সবথেকে বড় বিষয় ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details