পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ভরতির পরেই মৃত্যু, 4 দিন ধরে পরিজনরা জানলেন ভালো আছেন রোগী

চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । রোগীর মৃত্যুর পাঁচ দিন পর জানতে পারল পরিবার । অভিযোগ, হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে রোগীর পরিজনদের জানানো হয়, তাঁদের রোগী ভালো আছেন । পাঁচদিন ধরে এভাবেই চলে । অবশেষে হাসপাতাল এসে তাঁরা জানতে পারেন, রোগীর মৃত্যু হয়েছে ভরতির মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ।

কলকাতা মেডিকেল
kolkata medical

By

Published : Jul 15, 2020, 3:36 AM IST

কলকাতা, 15 জুলাই : রোগী বেঁচে নেই । অথচ, হাসপাতালের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে মৃত রোগীর পরিজনরা জানতে পারছিলেন, বেঁচে রয়েছেন তাঁদের প্রিয়জন । ভালো আছেন রোগী । এই ভাবে চার দিন চলল । পাঁচ দিনের মাথায় হাসপাতালে এসে পরিজনরা জানলেন, হাসপাতালে ভরতির কয়েক ঘন্টা পর তাঁদের প্রিয়জনের মৃত্যু হয়েছে । এবারও অভিযোগের তির কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ।

মৃত ওই রোগী হাওড়ার সলপের বাসিন্দা । বছর ৬৮-র অজয় মান্না। ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। গত 9 জুলাই তাঁকে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালে । তাঁর গায়ে জ্বর ছিল । কোরোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন চিকিৎসকরা । রেফার করে দেওয়া হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে । ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভরতি নেয়নি । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল টারশিয়ারি লেভেলের COVID হাসপাতাল । সেই জন্য রোগীকে এম আর বাঙুর হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । 9 জুলাই দুপুর 1টা নাগাদ কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অজয় মান্নাকে ভরতি নেয় ।

রোগী কোরোনায় আক্রান্ত । এই সন্দেহে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করানোর পর পরিজনরা আর দেখতে যেতে পারেননি। কারণ, COVID-19-এর ক্ষেত্রে ওয়ার্ডে পরিজনদের ঢুকতে দেওয়া হয় না । এই কারণে হাসপাতালের হেল্পলাইন নম্বর ফোন করে রোগীর বিষয়ে খোঁজখবর রাখছিলেন তাঁরা । মৃত ওই রোগীর এক পরিজনের অভিযোগ, হাসপাতালের এই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে তাঁদের জানানো হয়েছে, রোগী ভালো আছেন । এভাবেই চলছিল। মঙ্গলবার হাসপাতালে আসেন পরিজনরা । কোনওভাবে রোগীর বেডের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন তাঁর ছেলে । সেখানে গিয়ে দেখেন, ওই বেডে নেই তাঁর বাবা । রোগী কোথায় গেলেন? খোঁজখবর শুরু করেন পরিজনরা। তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন, গত 9 জুলাই হাসপাতালে ভরতির কয়েক ঘণ্টা পরই অজয় মান্নার মৃত্যু হয়েছে ।

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা যায়, হাসপাতালে ভরতি করানোর চার ঘণ্টা পর রোগীর মৃত্যু হয় । হাসপাতালে রোগীর পরিজনদের যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, সেই ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল । তবে, ওই ফোন নম্বরে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করে ওঠা সম্ভব হয়নি । রোগীর মৃত্যুর খবরটি যাতে পরিজনদের জানানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার জন্য পরদিন পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয় । তা হলে, হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলেও কেন রোগীর মৃত্যুর খবর পরিজনদের জানানো হয়নি, এই অভিযোগ উঠছে ? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয় মান্নার মৃত্যুর পর ওই বেডে অন্য রোগীকে ভরতি নেওয়া হয় । এই ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন হতে পারে, যেহেতু হাসপাতালের বেড নম্বর দিয়ে রোগীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল, সেই জন্য ওই বেডে নতুন রোগীর বিষয়ে খোঁজখবর হেল্পলাইন নম্বর থেকে জানানো হচ্ছিল মৃত রোগীর পরিজনদের।

হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে রোগী ভালো রয়েছেন, তা জানতে পারছিলেন রোগীর পরিজনরা । মৃত রোগীর পরিজনদের তরফে এমন অভিযোগ উঠলেও, এই বিষয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, পরিজনদের দেওয়া ফোন নম্বরে যেহেতু যোগাযোগ করে ওঠা সম্ভব হয়নি, সেই জন্য পরিজনদের দেওয়া ঠিকানায় পরের দিন পুলিশের মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি পরিজনদের জানানো হয় । সেই খবর পেয়ে মঙ্গলবার পরিজনরা হাসপাতালে আসেন । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এই ঘটনায় মৃত এই রোগীর পরিজনদের তরফে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

মৃত্যুর পর রোগীর দেহ রেখে দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালের মর্গে । এই রোগীকে যেহেতু COVID-19-এ আক্রান্ত হিসাবে সন্দেহ করা হয়েছিল, সেই জন্য প্রোটোকল অনুযায়ী মৃতদেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না । মৃতদেহ সৎকার করবে প্রশাসন । মঙ্গলবার মৃত এই রোগীর পরিজনরা হাসপাতালে আসেন‌। মৃতদেহ সৎকার করবে প্রশাসন, এই বিষয়টিতে তাঁরা লিখিত সম্মতি জানান ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details