কলকাতা, 20 জানুয়ারি : আবার বিতর্ক মাথা চাড়া দিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে । 2020 সালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে নেই রাজ্যপালের নাম । নেই মুখ্য অতিথির নামও ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে নাম নেই রাজ্যপালের - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান ও রাজ্যপালকে ঘিরে এর আগে বহুবার বিতর্ক দেখা দিয়েছে । এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের 2020 সালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে নেই রাজ্যপালের নাম । নেই মুখ্য অতিথির নামও ।
আগামী 28 জানুয়ারি নজরুল মঞ্চে হতে চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণপত্র বিলির কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেই আমন্ত্রণ পত্রেই রাজ্যপাল তথা আচার্যের নাম না থাকায় দেখা দিয়েছে বিতর্ক । বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজভবন বা উচ্চশিক্ষা দপ্তর কোনও জায়গা থেকে আসেনি রাজ্যপালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কথা নিশ্চিত করা হয়নি । সেকারণেই আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম রাখা হয়নি ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান ও রাজ্যপালকে ঘিরে এর আগে বহুবার বিতর্ক দেখা দিয়েছে । বিতর্কের সূত্রপাত হয়, সমাবর্তন নিয়ে সেনেট বৈঠকে রাজ্যপালের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে । ওই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল 4 ডিসেম্বর । কিন্তু, বৈঠকের আগের দিনই হঠাৎ অনিবার্য কারণবশত বৈঠকটি বাতিল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । বৈঠক বাতিল হওয়ার পরেও 4 ডিসেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের পৌঁছে যান রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনকড় । কিন্তু, সেদিন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক । কার্যত ফাঁকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে সেদিনই চলে গেছিলেন রাজ্যপাল । যা নিয়ে তিনি ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ।
ফাঁকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে যাওয়ার ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই বিধানসভায় আচার্যের ক্ষমতা খর্ব করে নতুন বিধি পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সেই বিধি লাগু হয়ে যায় । বিধি অনুযায়ী, উপাচার্যদের সঙ্গে রাজ্যপাল তথা আচার্য সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন না । উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে । বিধি লাগুর পর থেকেই একের পর এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয় যেখানে রাজ্যপালের উপস্থিত থাকার কথা ছিল । এমনকি 24 ডিসেম্বর সমাবর্তন নিয়ে সেনেট বৈঠক রাজ্যপাল ছাড়াই সেরে ফেলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । সেনেট বৈঠকের পরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ করা হবে বলে স্পষ্ট জানালেও, রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ করা হবে কি না সে বিষয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি । একের পর এক এই ধরনের ঘটনা নিয়েই বিতর্ক চরমে উঠেছিল ।
কিছুদিন আগেই রাজ্যপাল তথা আচার্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সংক্রান্ত ফাইল আটকে দিয়েছিলেন । সে বিষয়ে জানতে পেরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্যপালকে ছাড়াই প্রয়োজনে হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন । তারপরে রাজ্যপালের তরফে রাজভবন থেকে জানানো হয়েছিল, সমাবর্তন সংক্রান্ত ফাইল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমন্ত্রণপত্র রাজ্যপালের কাছে পৌঁছে গেছিল বলে জানা গিয়েছিল । তবে, এখন দেখা যাচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমন্ত্রণপত্রে নেই রাজ্যপাল তথা আচার্যের নাম ।
শুধু আচার্য নয় । সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে মুখ্য অতিথি বা এই বছরের D.Litt প্রাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও নেই । শুধুমাত্র সমাবর্তনের দিন সময় ও স্থান দেওয়া আছে আমন্ত্রণপত্রে । অনেকের মতে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্রে কোনও নামই থাকে না । কিন্তু, গতবছরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে মুখ্য অতিথি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও তৎকালীন রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর নাম ছিল বলেই জানা যাচ্ছে । তাহলে কেন এই বছর আমন্ত্রণপত্রে বাদ দেওয়া হল আচার্যের নাম? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজভবন থেকে বা নতুন বিধি অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের অংশগ্রহণ করার বিষয়ে কোনো কনফার্মেশন আসেনি । সেই কারণেই আমন্ত্রণপত্রে আচার্যের নাম রাখা হয়নি । যদিও, প্রথা অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হিসেবে আচার্যই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন । D.Litt, D.Sc ডিগ্রি প্রদান করে থাকেন তিনি । তিনি অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর নাম দেওয়া হয় আমন্ত্রণপত্রে । এক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ।