নামখানা, 16 জুন:শাসককে ঠেকাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের বড় অস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার কাকদ্বীপে নবজোয়ার কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যত ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্য 61 হাজার বুথ। সেখানে মাত্র দু'টো ঘটনা ঘটেছে। তা দেখিয়ে বলছে ঢাল নিয়ে, তরোয়াল নিয়ে চলে এসো। এসে কী করবে? ক্যাঁচকলা করবে!"
এদিন নবজোয়ারের মঞ্চ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, বরং দলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী হিসাবেই তিনি বক্তব্য রাখবেন। সেই দিক থেকে বিচার করলে মুখ্যমন্ত্রীর এই ক্ষোভ দলগত উপস্থাপন বলা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুরক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা কমিশন থেকে শুরু করে আদালতের কড়া পর্যন্ত নেড়েছেন। আদালত তাদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে স্পর্শকাতর জেলা গুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর কথা বলেছিল। কিন্তু রাজ্যে একের পর এক হিংসা একইসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার প্রেক্ষিতে গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গোটা পর্বে নীরবই ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অবশেষে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মুখ খুললেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মণিপুর প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত। গতকালই সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনাকেই অস্ত্র করেছেন মমতা। তিনি বলেন, "মণিপুর জ্বলছে, সেখানেও তো কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে গেছ। তারা কী করেছে ? সেখানেও তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসলে এই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার অর্থই যে সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে এমনটা নয়। যদি তাই হয় তাহলে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে কেন মণিপুর অশান্ত !"
আরও পড়ুন:পটনায় বিরোধী বৈঠকের আগেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ঝাঁঝ বাড়ালেন মমতা
এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী 2021-এর বিধানসভার ভোটের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন এদিন। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে যেভাবে সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল তারও উল্লেখ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, "লোকসভা, বিধানসভাতেও তো কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল। কী হয়েছে?" অতএব তৃণমূল সুপ্রিমো এমনটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসলেও তৃণমূল কংগ্রেসই জিতছে। এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ে বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির ইতিহাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "2013 সালে 39 জন মারা গিয়েছিল, 2003 সালে 70 জন খুন হয়েছিলেন, 2008 সালে 36 জন খুন হয়েছিলেন । শীতলকুচিতে ভোটে ৪ জনকে গুলি করে মেরে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনআরসির নামে খুন হলে কোথায় কেন্দ্রীয় দল আসে ?" অতএব তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার অর্থই যে নির্বিঘ্নে ভোট এমনটা নয়।