কলকাতা, 8 জুন: পাঁচ ঘণ্টা ধরে পৌরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি হল ৷ কিন্তু হাইকোর্টের গ্রীষ্মাবকাশকালীন বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য স্পেশাল লিভ পিটিশন বা এসএলপি দায়ের করেছে, সেটাই হাইকোর্টকে জানাতে ভুলে গেলেন আইনজীবীরা ! এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ।
পৌরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় একটি এসএলপি বিচারাধীন রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে । সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা 3 জুলাই । একই বিষয়ে হাইকোর্টে মামলার শুনানি চলতে পারে না । সেই জন্য রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা এসএলপি প্রত্যাহার করে নেবে কি না, তা জানাতে হবে সোমবার দুপুর 2টোর মধ্যে । তারপর হাইকোর্টে ফের এই মামলার শুনানি করা হবে ৷ এমনটাই জানিয়েছেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ।
এদিনের শুনানিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী ও তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের 21 এপ্রিলের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে । বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কোনও এক্তিয়ার নেই পৌরসভা নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা শোনার । বা এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়ার । বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ঘন ঘন সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে খুব ভালোবাসতেই পারেন ৷ কিন্তু তার সেই এক্তিয়ার আছে কি না সেটাই বিচার্য ।"
কল্যাণের প্রশ্ন, "এই মামলায় ইডি কে ? তারা এই মামলার পার্টি পর্যন্ত নয় । ঈদের দিন হাইকোর্টে রেজল্যুশন ছিল বিচারপতিরা কোনও বিশেষ নির্দেশ দান থেকে বিরত থাকবেন । কী এমন আকাশ ভেঙে পড়া পরিস্থিতি ছিল যে সম্পূর্ণ এক্তিয়ার বর্হিভূত একটা বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে হল ?" এর পালটা বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্ন, "ধরা যাক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যেমন চলছে চলবে । কিন্তু তার সঙ্গে যুক্ত পৌরনিয়োগ দুর্নীতির যে তথ্য ইডি ও সিবিআই পেয়েছে, তাহলে সে ব্যাপারে কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয় ?"
আরও পড়ুন:পৌর দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্ত আটকাতে রাজ্যের জরুরি শুনানির আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
এর পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ে কৌশলী উত্তর, "তার মানে এটা নয় যে কোনও বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ সিবিআই-ইডিকে দেওয়া হবে !" তিনি আরও বলেন, "এতদিন তদন্ত কিছু হয়নি । গতকাল ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটা শুনানির জন্য এসেছে ৷ তাই গতকাল থেকে দেখানোর জন্য খুব সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ইডি তল্লাশি করছে ! কারণ, তাদের দেখাতে হবে তদন্তে তারা কতকিছু উদ্ধার করছে !"
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, "কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নতুন এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্তের জন্য । তার মানেই বিষয়টা আলাদা ! তাহলে কী করে তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি ? যদি আলাদা কিছু নাই হয়, তাহলে কেন নতুন করে আলাদা এফআইআর করার নির্দেশ ?" তিনি আরও যুক্তি দিয়ে বলেন, "এটা বিচারের খামতি নাকি এক্তিয়ার বোঝার ভুল ! যদি এক্তিয়ার বুঝতে ভুল হয়, তাহলে রাজ্যের রিভিউ পিটিশনে অনুমতি দেওয়া উচিত আদালতের !"
অন্যদিকে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে মানিক ভট্রাচার্যর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বারণ করার পরও ইডি মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞসাবাদ করার সময় গ্রেফতার করেছিল । তাঁর রক্ষাকবচ থাকার সত্ত্বেও তদন্তে সহযোগিতা না করার জন্য ইডি গ্রেফতার করে তাঁকে আর্থিক দুর্নীতির তথ্য পাওয়ার জন্য । যেহেতু আর্থিক দুর্নীতি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় ।"
তিনি আরও বলেন, "শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে পৌরসভা নিয়োগ দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে ইডি । যেকোনও এজেন্সি যাদের আদালতের প্রতি বিশ্বাস আছে, তারা আদালতে আবেদন জানায় তদন্তের অনুমতি চেয়ে সেটাই রীতি ।এখানেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি । পাশাপাশি অয়ন শীলের মতো লোকজন রয়েছে, যারা দুই দুর্নীতিতেই সুবিধা নিয়েছে । তাহলে এটা আলাদা বিষয় কোথায় ? একই বিষয় । একই তদন্তে এই বিষয়গুলো উঠে আসছে ।"
ইডির তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী এদিন বলতে শুরু করার পর তিনি সুপ্রিম কোর্টে একটা রাজ্যের তরফে দায়ের করা স্পেশাল লিভ পিটিশনের বিষয়টি উল্লেখ করেন ৷ তারপরই ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানি স্থগিত করে দেয় । আগামী সোমবার ফের শুনানি ।
আরও পড়ুন:পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিভিন্ন জায়গায় সিবিআই হানা, অয়নের বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশি