কলকাতা, 30 ডিসেম্বর :প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে উধাও বন্দি গেল কোথায় ! জেল সুপারকে সিসিটিভি ফুটেজ ও সমস্ত রেকর্ড-সহ আদালতে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিল বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ (Calcutta High Court orders Presidency Jail Super to present in person over prisoner missing) । 4 জানুয়ারি, 2022 পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ৷
21 ডিসেম্বর সন্ধেয় প্রেসিডেন্সি জেল থেকে উধাও হয়ে যান রঞ্জিত ভৌমিক নামের এক বন্দি । তাঁর জামিনের পর 22 তারিখ বাড়ির লোক রঞ্জিতকে আনতে গিয়ে শোনেন, আগের দিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এরপর থানায় অভিযোগ জানান পরিবারের লোকজন ৷ তাতে কোনও সুরাহা হয়নি ।
শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বন্দি রঞ্জিত ভৌমিকের পরিবার । গত 28 ডিসেম্বর বিচারপতি রবি কিষান কাপুরের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে এই ব্যাপারে আজ রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল । সেইমতো রিপোর্ট জমা পড়লেও তাতে সন্তুষ্ট হননি বিচারপতি ৷ রাজ্যের রিপোর্ট একদিকে স্পষ্ট নয়, অন্যদিকে জেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ফুটে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি ।
আরও পড়ুন : PIL on Horse Cart Service : ময়দান এলাকায় ঘোড়ার গাড়ি বন্ধের দাবিতে জনস্বার্থ মামলা
মামলার শুনানিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী অনির্বাণ রায় বলেন, "নিম্ন আদালত তার জামিন মঞ্জুর করার পর সন্ধে সাড়ে ছ'টা নাগাদ তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে আসা হয়েছিল । তারপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ।"
সঙ্গে সঙ্গে মামলাকারীর তরফে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী ও সূর্যনীল দাস বলেন, "আমরা এই ঘটনার সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ চাই । নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর কাউকে জেল থেকে ছাড়া যায় না ।" তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কী করে তাকে ছাড়া হল ? আর এ বিষয়ে পরিবারের লোকজনকে কিছুই জানানো হয়নি, দাবি আইনজীবীদের ৷ আদালতে তাঁরা বলেন, "জেলগুলোর উপর অবিলম্বে নজরদারি চালানো দরকার । এখনও পর্যন্ত ওই ব্যক্তির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ।"
বন্দি নিখোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মামলাকারীর আইনজীবী তখন বিচারপতি বলেন, "আইন অনুযায়ী যা যা করা উচিত ছিল, জেল কর্তৃপক্ষ তা করেনি । প্রেসিডেন্সি জেলের রেজিস্ট্রার বন্দিকে সন্ধে 7টা 52 মিনিটে ছেড়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে । কীভাবে তাকে তার পরিবারের লোকজনকে কিছু না জানিয়ে অত রাতে ছাড়া হল ?" বন্দি এখন কোথায়, কী ভাবে আছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন স্বয়ং বিচারপতি ৷ জেল সুপার যেন আদালতে আগামী 4 জানুয়ারি এবিষয়ে রিপোর্ট দেন । পাশাপাশি সুপারকে ওই দিন সকালে সিসিটিভি ফুটেজ এবং জেলের সমস্ত রেকর্ড সমেত হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ।
আরও পড়ুন : Netaji death mystery : নেতাজি কি জীবিত ? আট সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
গত 6 ডিসেম্বর বাগনান থানা থেকে রঞ্জিত ভৌমিককে বেআইনি মদ বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল বাগনান থানার পুলিশ । তাকে উলুবেড়িয়া আদালতে পেশ করা হলে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক । 12 ডিসেম্বর শারীরিক সমস্যার কারণে তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরিত করা হয় । 21 ডিসেম্বর উলুবেড়িয়া আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে ৷ কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় পরের দিন অর্থাৎ 22 ডিসেম্বর তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে প্রেসিডেন্সি জেলে যায় তার পরিবার ।
পরিবারের অভিযোগ, তাদের জানানো হয় রঞ্জিত ভৌমিককে 21 ডিসেম্বর জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । তাতে বিস্মিত হন পরিবারের সদস্যরা । কী করে প্রয়োজনীয় নথি ছাড়া একজনকে ছেড়ে দেওয়া হল, তা বুঝে উঠতে পারেন না বাড়ির লোকজন ৷ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত রঞ্জিতবাবুর খোঁজ না পাওয়ায় অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টে জরুরি ভিত্তিতে মামলা করেছে তার পরিবার ।