কলকাতা, 19 অক্টোবর: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ থেকে পুলিশকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করার আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বৃহস্পতিবার এই নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বক্তব্য, ‘‘ওইদিন তিনি (বিরোধী দলনেতা) যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন, তা নির্দিষ্ট ভাবে কাউকে নয়, খুব সাধারণভাবে ব্যবহার করেছেন ।’’
একই সঙ্গে আদালত মনে করে, এমন পদ মর্যাদার মানুষদের পাবলিক প্লেসে এমন ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয় ৷ সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির পদের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা হতে পারে । কিন্তু তারপরেও আদালত মনে করে শুভেন্দুর সেদিনের কুমন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার কোনও ধারা প্রয়োগ করা যায় না । তাই কলকাতা পুলিশের তরফে বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করার যে আবেদন জমা পড়েছিল, তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের তরফে ৷
এছাড়া বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজের মামলা করেছিলেন ৷ সেই মামলার এখনই পুরোপুরি নিষ্পত্তি করছে না আদালত । আগামী 17 ও 18 নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে এ দিন হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে ।
আদালতে দায়ের করা আবেদনে দাবি করা হয়েছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং ও ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিল করার সময় শুভেন্দু অধিকারী পুলিশের বিরুদ্ধে কটূ কথা বলেছেন । তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের এফআইআর করার আবেদনে অনুমতি দেওয়া হোক । আদালতের নির্দেশ থাকায় শুভেন্দু অধিকারী কোনও বেআইনি কাজ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কিছু করতে পারছে না ।
শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী পিএস পাটোয়ালিয়া আদালতে বলেন, ‘‘রাজ্যের এই এফআইআর করার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় । শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর করার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে বলে জানিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চে নির্দেশ দিয়েছিল । সেই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখে । এমনকী, সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এফআইআর করার অনুমতি দেওয়ায়, সেটা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতির কাছে মামলা পাঠায় । 10 নভেম্বর পরবর্তী শুনানি রয়েছে সেই মামলার । তার মানে কোর্ট বুঝেছে এটায় তেমন গুরুত্ব নেই । সেখানে যাদবপুরের ঘটনা সামনে রেখে ফের একবার তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘র্যাগিং ও ছাত্রমৃত্যুর প্রতিবাদে 17 অগস্ট সেখানে বিক্ষোভ-সভা করতে যান শুভেন্দু । সেখানে তাঁকে আক্রমণ করা হয় । তাঁর গাড়ি আটকানো হয় । অস্ত্র নিয়ে ছিল দুষ্কৃতীরা । সেখানে একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের লোকজন ছিল । গোটা ঘটনা জানিয়ে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যান । উলটে পুলিশ তাঁর নামে এফআইআর করার আবেদন করেছে !’’
রাজ্যের তরফে এই বক্তব্যে বিরুদ্ধে যুক্তি দেওয়া হয়, "শুভেন্দু অধিকারী একটা জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছেন, 17 অগস্ট যাদবপুরের ঘটনায় অভিযোগ জানানো হয় । কিন্তু পুলিশ কিছু করেনি । এ রাজ্যে যা-ই হোক সিবিআই, এনআইএ, ইডির তদন্ত দাবি করা হচ্ছে । এইভাবে শুভেন্দু অধিকারীকে লাইসেন্স দেওয়া যায় ? তিনি একের পর এক অন্যায় করবেন ৷ আর তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা যাবে না !"
এই মামলার শুনানি আগেই শেষ হয়েছিল ৷ বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এই মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন । বৃহস্পতিবার তিনি রায় দিলেন ৷
আরও পড়ুন:দলবদলের পরই কি শুভেন্দুর অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেল, রাজ্যকে প্রশ্ন হাইকোর্টের